
সারাদিন এক ভাবে চেয়ারে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। হয় চাকা লাগানো আরামদায়ক চেয়ার নয়তো কাঠের। আর বাড়িতে কাজ করলে সারাটা দিন পিঠ ঝুঁকিয়ে কাজ (Back pain)। মোট কথা পিঠ আর কোমরের ওপরেই সবটা ধকল যাচ্ছে। উঠতে-বসতে পিঠ টনটনিয়ে উঠছে।
সারা দিনের ব্যস্ততায় পিঠ বা মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখার জন্য যে যে ব্যায়াম বা শরীরচর্চা প্রয়োজন সে সবও আমরা করে উঠতে পারি না। ফলে সারা দিন একনাগাড়ে বসে কাজ করার অভ্যাস নানা ব্যামো ডেকে আনছে।
পিঠে ব্যথা হয় কেন?
চিকিৎসকেরা বলছেন, এর কারণ অনেক। হাড়, স্নায়ু, তরুণাস্থি দিয়ে তৈরি এই মেরুদণ্ড। এর যে কোনও একটিতে চোট লাগলে বা টিউমার হলে, জন্মগত ত্রুটি বা যক্ষ্মার মতো কোনও রোগ দেখা দিলে, এমনকী শরীরে ভিটামিন বা মিনারেলের অভাব হলেও ব্যথা শুরু হতে পারে। পিঠে যে সব পেশি, লিগামেন্ট থাকে সে সবে তো বটেই, সঙ্গে শিড়দাঁড়ার নানা সমস্যাতেও ব্যথা শুরু হতে পারে। আর্থ্রাইটিসের সমস্যা থাকলে ভোগান্তি আরও বেশি। পিঠ, কোমর যেন নড়তেই চাইবে না।
এমনও দেখা গেছে, রোগীর এক্স রে, এমআরআই করে বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সমস্যাটা মেরুদণ্ডের নয়। শরীরের অন্য কোনও অংশের। হয়তো অগ্ন্যাশয়, লিভার বা কোলনে সমস্যা, বুকে টিউমার–সে থেকেও ব্যথা-বেদনা চাগাড় দিতে পারে। মহিলাদের মেনোপজের আগে ও পরে পিঠ-কোমরে একটানা ব্যথা হতে পারে।
তাছাড়া আমাদের দৈনন্দিন অভ্যেসের মধ্যেও লুকিয়ে রয়েছে পিঠে ব্যথার হাজারো কারণ। অতিরিক্ত ওজন, এক নাগাড়ে কম্পিউটারে কাজ, ভুল ভঙ্গিমায় বসা, কুঁজো হয়ে হাঁটা–এসব কারণেই ব্যথা হতে পারে।
ব্যথা সারান, এইসব নিয়ম মানুন
ওজন কমান, অতিরিক্ত ওজন ব্যথা-বেদনার কারণ হতে পারে।
একটু সময় বের করে স্ট্রেচিং করুন। অনভ্যস্ত হলে শরীরকে কষ্ট দিয়ে জোর করে কিছু করবেন না। যতটা সয় ততটাই স্ট্রেচ করুন প্রথমে। আস্তে আস্তে সময় বাড়ান।
দৌড়নো, জগিং করলেও লাভ হবে।
এক ভাবে চেয়ারে বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝেই উঠুন। হেঁটে আসুন। লিফ্ট ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করে আসুন বার কয়েক। বসার সময় পিঠ সোজা রাখুন। ঝুঁকে বা কুঁজো হয়ে বসবেন না।
খেয়াল রাখবেন চেয়ারের উচ্চতা যেন এমন হয় যাতে পায়ের পাতা সম্পূর্ণ মাটিতে ঠেকে থাকে।
ধূমপানের কারণেও অনেক সময় পিঠে ব্যথা হয়।
বরফ সেঁকে এই ধরনের ব্যথা অনেকটা আয়ত্তে থাকে। দিনে দু’-তিন বার মিনিট দশ-পনেরো আইস প্যাক দিন ব্যথার জায়গায়।
ঠান্ডা ও গরম সেঁক পাল্টাপাল্টি করে দিন। ক বার হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যথার জায়গায় ধরে থাকুন ১৫ সেকেন্ডের মতো। তার পর আবার সেখানে ১৫ সেকেন্ডের জন্য কোল্ড ব্যাগ সেঁক দিন।
ক্রনিক ব্যথায় যাঁরা ভোগেন, তাঁরা প্রতি দিন প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা নিয়ম করে ঘুমোন। ঘুমনোর সময় শরীরের পজিশন ঠিক রাখুন।
হিল পরলে বা পায়ে আরামদায়ক নয় এমন কোনও জুতো পরলে আগে তা বাদ দিন। ডাক্তারবাবুর থেকে জেনে নিন কী ধরনের জুতো পরবেন।