ওষুধ-মালিশ নয়, ফ্রোজেন শোল্ডারের সবচেয়ে বড় বন্ধু এক্সারসাইজই

গুডহেল্থ ডেস্ক: কাঁধে কোনও ভাবে আঘাত লাগলে আমরা কিছু ব্যথার ওষুধ খেয়ে কয়েকটা দিন দেখি। কমে গেলে নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবি আঘাত বুঝি পুরোপুরি সেরে গেছে। কিন্তু দিন কয়েক পর কাঁধের সেই আঘাত লাগা জায়গায় হতে পারে অসহ্য যন্ত্রণা। হাত নাড়াচাড়া করতেও অসুবিধা হতে পারে। এমনটা হলে কিন্তু অর্থোপেডিক্সের কাছে যাওয়াটা ভীষন জরুরি। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেল কাঁধে অসহ্য যন্ত্রণার কারণ ফ্রোজেন শোল্ডার।

ফ্রোজেন শোল্ডার কী?

কাঁধের জয়েন্ট বা সন্ধিস্থলে জড়তা বা শক্ত হয়ে যাওয়াই হল ফ্রোজেন শোল্ডার। ফ্রোজেন অর্থাৎ জমাট বেঁধে যাওয়া। কাঁধের সন্ধিস্থলের নাড়াচাড়ার মাধ্যমেই আমরা সুবিধামতো হাতকে বিভিন্ন দিকে সচল রাখি। এই মুভমেন্টের স্বাধীনতা যখন বাঁধা পায়, তখন স্টিফনেস বা জড়তার পাশাপাশি প্রচণ্ড ব্যথাও অনুভূত হয়। ফ্রোজেন শোল্ডার সাধারণত প্রবীণ এবং মহিলাদের মধ্যে বেশি হলেও, এখন অল্পবয়সিদেরও হচ্ছে।

কেন হয়?

পড়ে গিয়ে কাঁধে কোনও চাপ বা আঘাত লাগাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্রোজেন শোল্ডারের জন্য দায়ী। এর পাশাপাশি‌ চোটকে অবহেলা করলেও ফ্রোজেন শোল্ডার হতে পারে। চোট পেলে প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা এক্স–রে করি। এক্স–রে রিপোর্টে যদি দেখা যায় কোনও ফ্যাকচার নেই, তখনই শুরু হয়ে যায় চোটকে অবহেলার পালা। কিছু ব্যথার ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমলেই ভেবে নিই চোট থেকে পুরোপুরি মুক্তি!‌ আর চোট পেলে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম করা দরকার। যেমন ধরুন কাঁধে আঘাত লেগে একটা টেন্ডন ছিঁড়ে গেল বা তাতে ইনফ্ল্যামেশন হল, তখন দরকার ধৈর্য ধরে ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম। কিন্তু সেটাতেও আমরা ঠিক মতো করি না। যার পরিণতি চোট পাওয়া জায়গা ধীরে ধীরে স্টিফ বা আড়ষ্ট হয়ে ফ্রোজেন শোল্ডারের সূত্রপাত।

চিকিৎসা কী?

১)‌ ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় প্রথমে দেখা হয় মুভমেন্ট কতটা বাঁধা পাচ্ছে। অর্থাৎ রোগী সামনে, পেছনে বা ওপরের দিকে হাত কতটা নাড়তে পারছেন। এই মুভমেন্ট দেখে একটা চার্ট প্রস্তুত করে চিকিৎসা শুরু হয়। প্রয়োজনে চিকিৎসক ব্যথার ওষুধ দিয়ে থাকেন।

২)‌ ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফিজিওথেরাপিস্টের। দরকার নিয়মিত শোল্ডার মোবিলাইজিং এক্সারসাইজ করানো এবং খেয়াল রাখা রোগী এক্সারসাইজ ঠিকমতো করছেন কিনা।

৩)‌ অনেকই ভাবেন, ব্যায়াম করে কী হবে? ওষুধ খেলেই সুস্থ হয়ে যাব। ফ্রোজেন শোল্ডারের চিকিৎসায় এটা একেবারেই ভুল ধারণা। ওষুধের চেয়েও এ রোগে ভাল কাজ করে ব্যায়াম।

৪)‌ তবে দীর্ঘদিন ব্যথায় ভুগলে চিকিৎসক অনেক সময় কাঁধে স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন দেন। প্রয়োজনে স্টিফনেস কাটানোর জন্যও ইঞ্জেকশন দিতে হয়।

৫)‌ যদি এ সবেও কোনও উপকার না হয় তখন আর্থোস্কোপ ঢুকিয়ে শোল্ডারের পাশে শক্ত হওয়া লিগামেন্টগুলো ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে বা কেটে দেওয়া হয়। ফলে স্টিফনেস বা জড়তা চলে যায়। যদিও এটা অনেক পরের চিকিৎসা। অধিকাংশেরই এর প্রয়োজন পড়ে না ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শমতো নিয়মিত ব্যায়ামেই ফ্রোজেন শোল্ডার থেকে মুক্তি সম্ভব।