
ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কম্পিউটারে কাজ? হাড়-পেশি-স্নায়ুর ক্ষতি এড়াতে কী করবেন
গুড হেলথ ডেস্ক
সারাক্ষণ এক জায়গায় বসে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ। অফিসের চাপ এতটাই যে গ্যাঁট হয়ে বসে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া গতি নেই। আগে আইটি সেক্টরে কাজের চাপ নিয়ে খুব কথা হত, এখন যে কোনও সেক্টরেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতেই হবে। কাজের চাপ যতই হোক না কেন, তার ফাঁকেও যে নিজের কিছুটা খেয়াল রাখতে হয় সেটা ভুলে যাচ্ছে এখনকার প্রজন্ম। ফলে কমবয়স থেকেই অস্টিওআর্থ্রাইটিস, অস্টিওপিনিয়া, অস্টিওপোরোসিস জাতীয় নানা অসুখ বাসা বাঁধছে (Joint Pain)। কমবয়সী ছেলেমেয়েদেরও এখন গাঁটে গাঁটে ব্যথা, ঘাড়ে-পিঠে যন্ত্রণা, কেউ আবার স্লিপ ডিস্কের শিকার।
এসব কিছুই হচ্ছে সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে ইঁদুর দৌড়ের কারণে। শরীরচর্চার অভাব, ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাস, তার ওপরে লাগাতার অনিয়ম। একটানা কাজ করে যাওয়া, শরীর নাড়াচাড়া না করার কারণে অস্থিসন্ধি, স্নায়ু , পেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে একইসঙ্গে। ফলে নানা অসুখ বাসা বাঁধছে শরীরে (Joint Pain)।
কী কী সমস্যা দেখা দিচ্ছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় এ ভাবে বসে থেকে কাজ করায় হাঁটুতে ক্ষয় হয়। এণনও দেখা গেছে, খুব কম বয়সেই হাঁটু প্রতিস্থাপনের দিকে যেতে হয়েছে অনেককে। তাছাড়া মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস মানসিক অবসাদের কারণ হয়ে উঠছে। সমস্যা আও আছে। একটানা এসিতে বসে থাকা, শরীরে রোদ না লাগানো ইত্যাদির কারণে ভিটামিন ডি-এরও অভাব হচ্ছে শরীরে। ঘাটতি মেটাতে মুঠো মুঠো ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ফেলে অন্য বিপদ বাঁধিয়ে ফেলছেন অনেকেই (Joint Pain)।
সারাক্ষণ কম্পিউটারে টাইপ করে যাওয়া, অথবা মোবাইল-ল্যাপটপ ব্যবহার করার কারণে হাতের কব্জিতে ট্রায়াঙ্গুলার ফাইব্রোকার্টিলেজ কমপ্লেক্স (টিএফসিসি) হচ্ছে অনেকের। টেনিস এলবোও হতে পারে এ থেকে।
জয়েন্ট পেন বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা এখন ঘরে ঘরে। রাত জেগে কম্পিউটারে কাজ, দীর্ঘ সময় একভাবে বসে থাকার কারণে যেমন মেদ বাড়ছে, তেমনই জয়েন্ট পেনও বেড়ে চলেছে।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে কম্পিউটারে কাজ? হাড়-পেশি-স্নায়ুর ক্ষতি এড়াতে কী করবেন
অভ্যাস বদলে কী কী নিয়ম মানবেন?
কম্পিউটারে কী ভাবে কাজ করছেন, সেটা খুব দরকারি। যে টেবিলে কম্পিউটার রাখা আছে, তার উচ্চতা যেন কোমরের লেভেলে থাকে।
এমন উচ্চতার চেয়ারে বসতে হবে যেন দু’ পায়ের পাতা মাটি স্পর্শ করে থাকে।
সামনে ঝুঁকে বসবেন না। কম্পিউটারের পর্দার সঙ্গে চোখের দূরত্ব এমন রাখুন, যাতে ঘাড় নোয়াতে না হয়।
একভাবে পা ঝুলিয়ে বসে থাকবেন না, মাঝে মধ্যে একটা পায়ের ওপরে অন্য পা তুলে বসুন। চেষ্টা করুন মাঝেমধ্যে বসেই পা নাড়াচাড়া করতে বা পায়ের হাল্কা ব্যায়াম করতে।
মাউস ধরার সময় হাতের কব্জি যেন টেবিলের সাপোর্ট পায় সে দিকেও নজর রাখতে হবে।
প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর সিট ছেড়ে উঠুন। যাঁদের ইতিমধ্যেই হাড়ের অসুখ ধরেছে, তাঁরা একটানা বসে থাকতে গেলে একটা নিক্যাপ পরুন।
বাতের ব্যথায় ভুগছেন? গাঁটে গাঁটে অসহ্য যন্ত্রণা? সুস্থ থাকতে এই নিয়মগুলো মানতেই হবে
টিফিনের সময় বাইরে বেরিয়ে অন্তত ৫-৭ মিনিটে হাঁটাহাঁটি করে আসুন।
বাইরে বেরনোর সমস্যা থাকলে ভেতরেই হাঁটাহাঁটি করুন। ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসুন, সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা, কিছুটা গল্প করে আসুন।
পেশির ব্যথা, পেশিতে টান পড়া ঠেকাতে চেয়ারে বসে বসে লেফট রাইট করুন বা একটু উঠে মিনিট দুই-তিন স্পট জগিং করে এলেও পেশির স্টিফনেস কাটবে।
সম্ভব হলে অফিস ডেস্কে স্মাইলি বল রাখুন। কাজের মাঝে পনেরো-বিশ সেকেন্ড ধরে চাপ দিন তাতে। এতে আঙুলের স্টিফনেস কাটবে।
রোজ অন্তত আধঘণ্টা হাঁটুন, দৌড়ন, যোগব্যায়াম সম্ভব হলে করুন। সাঁতার কাটাও খুব উপকারি।
বাড়ি ফিরে আবারও মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করবেন না। চেষ্টা করুন চোখকে আরাম দিতে। পারলে ফিরে এসে হাল্কা ব্যায়াম করে নিন।
ঘুমনোর সময় শোওয়ার ধরনও ঠিক রাখুন।