হাড়ে-হাড়ে ব্যথা! মহিলারাই কেন বেশি ভোগেন হাড়ের ক্ষয়রোগে

গুড হেলথ ডেস্ক

হাড়ে হাড়ে যেন মড়মড় শব্দ ওঠে। উঠতে-বসতে গেলেই চাবুক কষায় ব্যথা। সিঁড়ি ভাঙতে গেলে শিরদাঁড়া বেয়ে ব্যথার স্রোত নামে। বয়সকালে হাড়ের ক্ষয়রোগে ভোগেন অনেকেই। পলকা, ভঙ্গুর হয় হাড়। হাড়ের এই ক্ষয়রোগকে ডাক্তারি ভাষায় বলে অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis)। বয়স ৩০-এর কোঠা পেরোলেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। দেখা গেছে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের মধ্যেই হাড়ের রোগ বেশি হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম অস্টিওপোরোসিস (World Osteoporosis Day)।

আজ ২০ অক্টোবর বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস (World Osteoporosis Day)। সমীক্ষা বলছে, সারা বিশ্বে বয়স ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে এমন মহিলাদের প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জনই আক্রান্ত হন হাড়ের ক্ষয়রোগে। বিশ্বে প্রায় ২০ কোটির বেশি মানুষ অস্টিওপোরোসিস রোগে আক্রান্ত। তার মধ্যে প্রায় ৬৮ শতাংশই মহিলা।

Joint pain

অস্টিওপোরোসিস ‘সাইলেন্ট থিফ’

বয়স বাড়লে বিভিন্ন কারণে হাড়ের ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান কমে গেলে হাড় পলকা হয়ে যায়, ফলে সামান্য চোট আঘাতে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। একেই বলে অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis)। 

এখনকার সময়ে বেশিরভাগ কাজই যন্ত্র নির্ভর। ফলে কায়িক পরিশ্রম তেমন হয় না। অফিসে থাকলে একই জায়গায় দীর্ঘ সময় বসে কাজ, সিঁড়ি ভাঙার বদলে লিফটের ব্যবহার, হাঁটাচলা কম করে ক্যাব বুক করে নেওয়ার প্রবণতা, নিয়মিত শরীররচর্চার অভাব এবং অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া–এই সবকিছুই অস্টিওপোরোসিসের কারণ হয়ে উঠতে পারে। 

Osteoporosis

ডাক্তারবাবুরা বলেন, অস্টিওপোরোসিস (World Osteoporosis Day) রোগটা আসে নিঃশব্দে। কখন হাড়ে ঘুণ ধরতে শুরু করেছে তা আগে থেকে বোঝা যায় না। ধরুন আচমকা পড়ে গিয়ে হাতে বা কোমরে চোট লাগল, তখন পরীক্ষা করাতে গিয়ে ধরা পড়বে অস্টিওপোরোসিস হয়েছে। রোগের তেমন কোনও উপসর্গ নেই। শুরুটা হয় পিঠের দিকে অল্প ব্যথা দিয়ে। এমন ব্যথাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। যখন দেখা যাবে ব্যথা বাড়ছে, হাতে-পায়ে যন্ত্রণাও বাড়ছে তখন ডাক্তারের কাছে যান অনেকে। তবে ততদিনে রোগও বেড়ে যায় অনেকটাই। এই কারণেই অস্টিওপোরোসিসকে ‘সাইলেন্ট থিফ’ বলা হয়।

বয়সকালে হাঁটু প্রতিস্থাপনের ঝক্কি না চাইলে হাড়ের যত্ন নিন, অস্টিওপোরোসিস দিবসে সচেতনতা বাড়ুক

মহিলারা কেন বেশি ভোগেন?

এক জন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালশিয়াম প্রয়োজন। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই মাত্রা ১২০০ মিলিগ্রাম। এর ঘাটতি হয় বেশিরভাগ সময়েই। মেয়েরা অফিস-সংসার সামলে পুষ্টিকর ডায়েটের দিকে নজর দেন না অনেক ক্ষেত্রেই।  সেই কারণেই বয়স বাড়লে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

Osteoporosis

মহিলাদের ঋতুবন্ধ বা মেনোপজের পরে পোস্ট মেনোপজাল অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। আসলে শরীরের অন্যান্য কোষের মত হাড়ের কোষ-কলাও দুর্বল হতে শুরু করে। এই সময়ে শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব হলে হাড়ের ক্যালসিয়াম ডিপোজিশন কমতে শুরু করে। ফলে হাড় ভঙ্গুর হতে শুরু করে।

প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম সহ অন্যান্য খনিজের অভাব হলেও হাড় পলকা হয়ে যায়।

শরীরচর্চার অভাব, ক্রনিক কিডনির অসুখও এর অন্যতম কারণ।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অন্য কোনও ইনফ্ল্যামেটরি অসুখে থাকলে কর্টিকোস্টেরয়েড খেতে হয়। এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও হাড় ভঙ্গুর হতে পারে।

অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

হাড় ভাল রাখতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন কে, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, বোরন, ম্যাগনেশিয়াম, স্ট্রনটিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম-যুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দুধ জাতীয় খাবার থেকে প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ডায়েটে রাখতে পারেন দুধ, চিজ, ছানা, মাখন, দই । ল্যাকটোজেনে সমস্যা থাকলে সরাসরি দুধ না খেয়ে ছানা, চিজ এ সব খান।