অ্যালোপ্যাথি-হোমিওপ্যাথি-আয়ুর্বেদকে এক ছাতার তলায় আনবে ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন’, পরিকল্পনা কেন্দ্রের

এক দেশ এবং এক স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে থাকবে চিকিৎসাশাস্ত্রের এই তিন বিভাগই। করোনা থেরাপিতেও অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।

দ্য ওয়াল ব্যুরো: দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনতে ‘এক দেশ এক কার্ড’চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। করোনা অতিমহামারীর আবহে স্বাস্থ্যকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ‘ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। এই ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রকল্পের আওতায় এবার অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদকে মিলিয়ে দিতে চলেছে কেন্দ্র। ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প চালু হতে পারে।

এক দেশ এবং এক স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে থাকবে চিকিৎসাশাস্ত্রের এই তিন বিভাগই। করোনা থেরাপিতেও অ্যালোপ্যাথির সঙ্গে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এবার দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও এই তিন বিভাগকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০১৭ সালে চালু হওয়া জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির লক্ষ্য ছিল সমগ্র স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা। দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার ডিজিটালাইজেশন করাই পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই মর্মে ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডিজিটাল নীতিতে সায় দেয় নীতি আয়োগ। তাদের তরফে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রযুক্তিনির্ভর করে তুললে ভুল চিকিৎসার প্রবণতা কমবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও উন্নতি হবে।

চলতি বছর স্বাধীনতা দিবসের দিনেই প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, স্বাস্থ্য পরিষেবায় ডিজিটালাইজেশনের জন্যই এক দেশ ও এক স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করা হবে। এই প্রকল্পে যাঁরা নাম লেখাবেন, তাঁদের একটি জাতীয় স্বাস্থ্য-কার্ড বা পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। যেখানে ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও রোগের খতিয়ান লেখা থাকবে। চিকিৎসার প্রয়োজনে রোগী ওই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। তবে এই স্বাস্থ্য প্রকল্পে কী কী ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে তখন স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।

সূত্রের খবর, গত ৮ সেপ্টেম্বর এই ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশন নিয়েই বৈঠক করেন নীতি আয়োগের সদস্য ডক্টর ভি কে পল। জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য প্রকল্পের অধীনে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদকে একসঙ্গে করার ব্যাপারেই আলোচনা হয়েছে ওই প্রকল্পে।

করোনা অতিমহামারীর সময়েই হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক থেরাপির উপর জোর দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আয়ুষ মন্ত্রকের তত্বাবধানে আয়ুর্বেদিক উপাদানের ট্রায়ালের জন্য তৈরি হয়েছিল টাস্ক ফোর্স। এখন করোনার ক্লিনিকাল ট্রায়ালে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদের ১৯ রকম উপাদানের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।

ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন কী?

করোনা সঙ্কটের এই গত ছ’মাসে ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবার বাস্তব রূপায়ণে সচেষ্ট ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি (এনএইচএ)। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার হয়ে কাজ করে এই সংস্থা। এনএইচএ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগেই ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ ব্লুপ্রিন্ট চালু হবে। রোগী, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সব প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হবে। রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য জমা করে রাখার জন্য অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করা হবে। এই ডেটাবেসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে রোগীর হাতেই। সেখানে রোগী তার বর্তমান ও অতীত রোগের ইতিহাসের যাবতীয় তথ্য তুলে রাখতে পারবে। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষেই সেই তথ্য দেখতে পারবেন ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীরা।

এই প্রকল্পে যাঁরা নথিভুক্ত হবেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয়পত্রে আধারের মতো একটি করে সংখ্যা থাকবে। সেটা হবে ওই রোগীর ব্যক্তিগত আইডি। পরিচয়পত্রের আইডি-র মাধ্যমে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য  জানতে পারবে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, কোনও ব্যক্তি যত বার চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানে যাবেন, তত বার সেই ব্যক্তির চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ডেটাবেসে জমা হয়ে যাবে। ফলে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকদের চিকিৎসা করতে সুবিধে হবে। নীতি আয়োগ জানাচ্ছে, চিকিৎসার এই তিন বিভাগকে জুড়ে দিলে ডাক্তাররা রোগীর থেরাপি করার সময় যে কোনও পদ্ধতিরই প্রয়োগ করতে পারবেন। ধরা যাক সঙ্কটাপন্ন রোগী অ্যালোপ্যাথি থেরাপিতে সারলেন না, তখন তাঁর চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক থেরাপির প্রয়োগ করা যাবে। এই ডিজিটাল স্বাস্থ্য কার্ডকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সঙ্গেও জোড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।