
ব্রেন স্ট্রোকে কোমায় ক্যানসারজয়ী ঐন্দ্রিলা, ক্যানসার রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কতটা?
গুড হেলথ ডেস্ক
ক্যানসার জয় করেছিলেন। জীবনের ছন্দে ধীরে ধীরে ফিরে আসছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। মারণ রোগ জয় করতে জীবন-মরণ যুদ্ধ করেছেন। সুস্থ হয়ে উঠছিলেন দিনে দিনে। কিন্তু বিধি বাম। আবারও জীবনযুদ্ধের সবচেয়ে কঠিনতম পর্যায়ে গিয়ে পড়েছেন অভিনেত্রী। আচমকাই ব্রেন স্ট্রোকে (Brain Stroke) কোমায় চলে গেছেন ঐন্দ্রিলা। তাঁর শারীরিক অবস্থাও সঙ্কটজনক।
হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ঐন্দ্রিলা। চিকিৎসকরা বলছেন, স্ট্রোকে তাঁর শরীরের একটা দিক পুরোপুরিই অসাড়। শুধু বাঁ হাত এবং চোখদুটো সামান্য নাড়াচাড়া করতে পারছেন।
ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএসও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ সমীক্ষা বলছে বিশ্বের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের প্রতি ৪ জনের ১ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। আর ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে ব্রেন স্ট্রোকের (Brain Stroke) ঝুঁকি অন্তত দ্বিগুণের বেশি।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (National Center for Biotechnology Information) বা এনসিবিআই-এর তথ্য বলছে, ক্যানসার (Cancer) রোগীদের মস্তিষ্কের শিরা ছিঁড়ে বা রক্ত জমাট বেঁধে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনা থেকেই যায়। ১৯৯১-২০১৫ সাল অবধি অন্তত ৭৫ লক্ষ ক্যানসারের রোগী বা ক্যানসারজয়ীদের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে ৮০ হাজারের বেশি রোগীর মৃত্যু হয়েছে ব্রেন স্ট্রোকে। এর মধ্যে সাইলেন্ট স্ট্রোকে আক্রান্তদের সংখ্যাও বেশি। ব্রেন টিউমার ও লিম্ফোমাতে আক্রান্তদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ৪০ শতাংশের বেশি। স্তন ক্যানসার, প্রস্টেট ও কলোরেকটাম ক্যানসারে ভোগা রোগীদের ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকিও রয়েছে। ক্যানসার জয় করার পরে যদি জীবনযাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
ক্যানসার রোগীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কেন বেশি?
স্ট্রোক (Stroke) সাধারণত দুই রকমের হয়। হেমারেজিক ও ইস্কিমিক স্ট্রোক। হেমারেজিক স্ট্রোকে ব্রেনের শিরা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়। ইস্কিমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গবেষণা বলছে, ক্যানসার রোগীদের ইস্কিমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। রক্তনালিতে আচমকা রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। শুরুতে ধরা যায় না, পরে ডায়াগনসিস করে স্ট্রোক ধরা পড়ে।
সমীক্ষা বলছে, হাসপাতালে ভর্তি প্রতি ১০ জন ক্যানসার রোগীর একজনকে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। ইস্কিমিক স্ট্রোকের ঝুঁকিই বেশি। স্ট্রোক হানা দেয় নিঃশব্দে। অনেক সময়েই আগে থেকে লক্ষণ বোঝা যায় না। গবেষণা বলছে, সাইলেন্ট স্ট্রোকের (Silent Stroke) আশঙ্কা বেশি ক্যানসার রোগীদের। এই ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের মাত্রা ও গতিতে পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে মস্তিষ্কের হোয়াইট ম্যাটার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাইলেন্ট স্ট্রোক জানান দিয়ে আসে না। যদি একসঙ্গে পর পর এমন স্ট্রোক হয় তাহলে স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে রোগীর। ভ্যাস্কুলার ডিমেনশিয়া নামে এক ধরনের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ হতে পারে রোগীর। এই ধরনের স্নায়বিক রোগে সব কিছুই অচেনা লাগতে শুরু করে রোগীর। চেনা-পরিচিত জনকেও ভুলে যায়।
ব্রেন স্ট্রোকের (Brain Stroke) কী কী লক্ষণ চিনতে হবে?
ব্রেন স্ট্রোক (Brain Stroke) বুঝতে ‘এফএএসটি’-র F.A.S.T এর ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
F—Face Drooping, ফেসিয়াল প্যারালাইসিসও স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ। মুখের একদিক বেঁকে যাবে, জিভ আড়ষ্ট হয়ে যাবে, কথা জড়িয়ে যাবে।
A–Arm Weakness, হাত-পায়ের সাড় চলে যাবে। শরীরের কোনও একদিক হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। হাত নাড়াতে পারবে না রোগী।
S–Speech Difficulty, মুখের কথা জড়িয়ে যাবে।
T–Time to call, চিকিৎসকদের মত, ১ ঘণ্টার মধ্যে স্ট্রোকে (World Stroke Day) আক্রান্তর মস্তিষ্কের জমাট বাঁধা রক্ত ক্লট বাস্টিং ওষুধ প্রয়োগ করে গলিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক করতে পারলে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। স্ট্রোকের ১ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা শুরু করা হলে সব থেকে ভাল ফল পাওয়া যায়, তাই এই সময়কে বলে ‘গোল্ডেন আওয়ার’। তাই সময় নষ্ট মানেই প্রাণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে কী কী মাথায় রাখতে হবে
১) বাড়তি কোলেস্টেরল স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
২) ওবেসিটি বা স্থূলত্ব স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় ১৯%।
৩) অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ।
৪) অতিরিক্ত স্ট্রেস, মানসিক চাপ, উদ্বেগ থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৫) পুষ্টিকর খাবারের পরিবর্তে ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড বেশি খেলে আচমকা স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৬) ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা আচমকা বেড়ে গেলে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়েটে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৭) সিগারেট ও অতিরিক্ত মদ্যপান ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ হতে পারে।
৮) হার্টের অসুখ বা হার্টে সার্জারি হলে এবং তারপরে নিয়ম মেনে না চললে, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, শরীরচর্চা না করলে সাইলেন্ট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।