Breast Cancer: চুলে ঘনঘন রং করেন? ব্যবহার করেন স্ট্রেটনারও? স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কিন্তু বাড়ছে

গুডহেল্থ ডেস্ক: রাসায়নিকের কারণে কত কী-ই না হয়! ক্ষতিকর রাসায়নিকের কারণে মৃত্যুও অসম্ভব নয়। সম্প্রতি রাসায়নিকের কুফল সম্মন্ধে উঠে এসেছে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। চুলে অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে চুলের তো ক্ষতি হয়ই, পাশাপাশি হতে পারে স্তন ক্যানসারও (Breast Cancer)।

এখন আর শুধু তেলে-জলে ঘন কালো চুল কেউ চান না। হেয়ার স্টাইলিঙের জন্য এখন বাজারে বিকোয় হাজার একটা জিনিস। কমবয়সি মেয়েরা ট্রেন্ডের স্রোতে গা ভাসিয়ে ব্যবহারও করেন সে সব। এখন আর কোঁকড়ানো চুলের চাহিদাও নেই তেমন, অধিকাংশই চান একদম সোজা চুল। সঙ্গে চুলে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রং-ও এখন হাল ফ্যাশনে ভীষন ইন। কিন্তু রঙিন চুলের জন্য ভয়ংকর মাশুল গুনতে হতে পারে।

এই প্রসঙ্গে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশ্যালিটি হসপিটালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডক্টর শুভদীপ চক্রবর্তীর বলেন, এ সব বাজারচলতি চুল স্ট্রেট করা বা রঙ করার প্রসাধনীগুলোতে হরমোন সক্রিয়কারী কার্সিনোজেনিক যৌগ থাকতে পারে। বয়ঃসন্ধিকাল স্তনের বাড়তে থাকা টিস্যুগুলো এইসব রাসায়নিকের সংস্পর্শে প্রভাবিত হতে পারে। ফলে দেখা দিতে পারে স্তন ক্যানসারের (Breast Cancer) মতো খারাপ অসুখ।

শুধু তাই নয়, হেয়ার ডাই ও স্ট্রেইটনার-সহ অন্যান্য চুলের প্রসাধনীগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক থাকে। সেগুলো হরমোনের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে স্তন ক্যানসারের (Breast Cancer) ঝুঁকি বাড়ায় বহুগুণে। আজকাল বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকেই মেয়েরা এ ধরনের দ্রব্য বহুলাংশে ব্যবহার করছে। প্রায় ১০ বছর ধরে চলা সমীক্ষায় এ বিষয়ে উঠে এসেছে অবাক করা তথ্য। দেখা গেছে ১০-১৩ বছর বয়সিদের মধ্যে ঘনঘন রাসায়নিক স্ট্রেইটনার বা পার্ম ব্যবহারে প্রি-মেনোপজাল স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়েছে। তথ্য বলছে, বিশেষ করে, কালো চামড়ার মহিলাদের মধ্যেই এই প্রকার ক্যানসারের সম্ভাবনা বেশি।

কী কী লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে স্তন ক্যানসার (Breast Cancer)?

  • স্তনের স্বাভাবিক আকার বা গঠন বদলে যায়।
  • স্তনবৃন্তের আকারে পরিবর্তন।
  • স্তনে লাম্প তৈরি হওয়া স্তন ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
  • স্তনবৃন্তের চারপাশে বা স্তনের ত্বকে র‍্যাশ দেখা যায়।
  • আঙুল দিয়ে চাপ দিলেই স্তনের ত্বক বসে যাওয়া।
  • স্তন বা আর্মপিটে যন্ত্রণা এবং কোনও রকম চাপ ছাড়াই অস্বাভাবিক ক্ষরণ।
  • স্তন বৃন্ত লাল হয়ে যাওয়া এবং চারপাশের ত্বকের কোষ মোটা হয়ে যাওয়া, অনেক সময় লাল-কমলা ছাপও দেখা যায় স্তনের চারধারে।

রোগ (Breast Cancer) দ্রুত চেনা যাবে কীভাবে?

স্তন ক্যানসার দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা ম্যামোগ্রাফির মতো পদ্ধতি রয়েছে। এতে স্তনের স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়া ধরা পড়বে যা স্তন ক্যানসারের অন্যতম ইঙ্গিতবাহী। তবে যে কোনও রোগেরই আগাম সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় সচেতনতা দরকার, যেটা অধিকাংশেরই নেই।

নিজের স্তনের গঠন এবং তাতে ক্রমাগত হয়ে চলা পরিবর্তন লক্ষ্য রাখেন ক’জন মহিলা? শরীরের এই বিশেষ অঙ্গটির পরিচর্যার দিকে নজর রাখেন না অনেকেই। আবার নজরে পড়লেও লজ্জা ও সংকোচের জন্য সেটা লুকিয়ে যান অধিকাংশ মহিলা। স্তন ক্যানসার সম্পর্কে অজ্ঞতা, স্তন নিয়ে অহেতুক স্পর্শকাতর হওয়া, লজ্জা পাওয়া এবং ‘সেল্ফ এগজামিনেশন’ বা নিজেই নিজের স্তন কী ভাবে পরীক্ষা করা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা না-থাকার জন্য এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

মেয়েরা শরীরের যত্ন নিন, নিয়ম মানুন

  • প্রথমত বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্থূলত্ব বা ওবেসিটি স্তন ক্যানসারের অন্যতম কারণ।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা দরকার। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা নিজের জন্য রাখুন।
  • পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই জরুরি। এক আধদিন জাঙ্ক ফুড খাওয়া যেতেই পারে, তবে অভ্যাস করে ফেলবেন না। বাড়ির তৈরি খাবার, শাকসব্জি, ফল, ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খান। খাবারে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা যেন বেশি থাকে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল এই দুইই সর্বনাশা। অতএব নেশা থেকে যত দূরে থাকবেন স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও ততই কমবে।
  • শিশুকে স্তন্যপান করানো দরকার। সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা তাঁদের ৬ মাস ব্রেস্টফিড করাতেই হবে, এতে স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়।
  • ত্রিশ বছর পেরিয়ে গেলে মুঠো মুঠো পিল খাওয়ার অভ্যাস বন্ধ করুন। এইসব ওষুধের অনেক রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, যা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
  • প্রতি মাসে ঋতুচক্রের পাঁচ-ছ’দিন বাদে স্নানের সময়ে হাত দিয়ে নিজের স্তন পরীক্ষা করার অভ্যেস রাখুন। নিয়মিত এই পরীক্ষা করলে বিপদের আভাস অনেক আগেই পাওয়া যায়।
  • অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন বা টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়। অল্টারনেটিভ মেডিসিনে এই থেরাপি হয় না। একবার ক্যানসার মুক্ত হলেও রোগ ফিরে আসার ঝুঁকি থাকে, তাই রুটিন চেকআপ করানোও জরুরি।

ঘণ্টায় ঘণ্টায় কফি খেলেই বিপদ! শরীর বুঝে খান, দিনে কতটুকু?