
শরীরে রেডিয়েশন ঢোকানোর কোনও দরকার নেই। কেমোথেরাপির যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতির পদলে ক্যানসার কোষ নষ্ট (Cancer Treatment) করার নতুন পদ্ধতি নিয়ে এলেন গবেষকরা। রেডিয়েশন দিয়ে ম্যালিগম্যান্ট টিউমার কোষগুলিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তাতে আক্রান্ত কোষের চারপাশের সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কোমেথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপি চলার ফলে রোগীর শরীরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দেয়। এইসবের থেকে রেহাই দিতেই এমন চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন গবেষকরা।
স্ট্যানফোর্ড ও পেনিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, কেমোথেরাপির থেকেও কার্যকরী পদ্ধতি হল টি-সেল থেরাপি (Cancer Treatment)। গবেষক অনুষা কালবাসি বলছেন, শরীরের ইমিউন কোষ বা টি-কোষই পারে টিউমার কোষগুলিকে নষ্ট করে দিতে। শরীরে যে ধরনের ঘাতক টি-কোষ তৈরি হয় তা যদি কৃত্রিম উপায় ল্যাবরেটরিতে বানিয়ে নেওয়া যায় তাহলে ওষুধের মতো তা ইনজেক্ট করা যাবে ক্যানসার রোগীর শরীরে। টি-কোষ শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলবে। টিউমার কোষগুলিকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে নষ্ট করে দেবে। আইএল-৯ রিসেপ্টর কোষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।
টি-কোষ কীভাবে কাজ করে?
টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ (T Lymphocyte) তৈরি হয় হেমাটোপোয়েটিক স্টেম কোষ থেকে। অস্থি মজ্জায় (Bone Marrow)তৈরি হয় এই কোষ। এরপরে সটান চলে আসে থাইমাসে। সেখানেই বড় হয়। এই টি-কোষের কাজ হল রক্ষীর মতো। শরীরের ভেতরের সুরক্ষার দায়িত্ব এই কোষের। মানুষের জন্মের পর থেকে মৃত্যু অবধি, এই টি-কোষ শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বা ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখার চেষ্টা করে। অভ্যন্তরীণ রোগ প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজও এই কোষেরই।
টি-কোষের আবার নিজস্ব রিসেপটর থাকে(TCR) । এই রিসেপটরের কাজ হয় ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা সংক্রামক প্যাথোজেনকে চিহ্নিত করে তাদের ধ্বংস করা। শরীরে কোনও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কোষ তৈরি হলে তার বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে এই টি-কোষ (Cancer Treatment)।
এই টি-কোষও আবার রিসেপটর প্রোটিনের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের হয়। সাধারণত CD8 রিসেপটর প্রোটিন যুক্ত হলে টি-কোষ সাইটোটক্সিক হয়ে ওঠে (Cytotoxic) । তখন তাকে বলে ঘাতক কোষ। এই কোষের কাজ হয় অ্যান্টিজেনকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম উপায়ে এই রোগ প্রতিরোধকারী টি-সেল বা শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে সেগুলিকে ক্যানসারের টিউমার বা ক্যানসার কোষকে নষ্ট করার জন্য প্রয়োগ করা হবে। এর ফলে কেমোথেরাপি ছাড়াই ক্যানসার কোষকে ধ্বংস করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞানীরা রক্ত থেকে শ্বেত কণিকা (টি-কোষ) সংগ্রহ করে সেগুলিকে পরীক্ষাগারে কৃত্তিম উপায়ে বিভাজিত করে সংখ্যায় বাড়াচ্ছেন। এর পর ওই কোষগুলির জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে সেগুলিকে এমন ভাবে চালিত করছেন, যাতে কৃত্রিম ভাবে তৈরি ওই কোষগুলি শুধুমাত্র ক্যানসার কোষগুলিকেই টার্গেট করে নষ্ট করে দেয়। ইঁদুরের ওপর এই গবেষণা সফল হয়েছে। মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা শুরু করছেন গবেষকরা।