সাত রকম ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় মদ, নেশায় বুঁদ কমবয়সিরাই হাই-রিস্কে

গুড হেলথ ডেস্ক

মদের নেশা সর্বনাশা।

‘নেশা, নেশা..’ করে যত মাতাল হবেন, ততই শরীরের ভেতর মারণ রোগ ডালপালা মেলবে। বিশ্বজুড়ে এখন ক্যানসার রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। গবেষকরা বিপদ সঙ্কেত পাচ্ছেন এখন থেকেই। গবেষণা বলছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ক্যানসারের মতো মারণ রোগ ঘরে ঘরে দেখা দেবে। এর জন্য দায়ী থাকবে জীবনযাত্রায় অসংযম, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম আর অত্য়ধিক নেশার প্রকোপ। একদিকে সিগারেট, অন্য়দিকে মদ–এই দুই মিলে এখনকার প্রজন্মের বারোটা বাজাচ্ছে। ধূমপায়ীরা তো বটেই প্য়াসিভ স্মোকারদেরও ক্যানসার (Cancer) হওয়ার ঝুঁকি আছে। আর মদে তো কথাই নেই। অ্যালকোহলে আসক্তি যত বাড়বে, ততই জাঁকিয়ে বসবে নানা ধরনের জটিল রোগ।

সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে মদ্যপায়ীদের সংখ্যায় এগিয়ে তেলঙ্গানা। উত্তরপ্রদেশ, গোয়া, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, আসামও পিছিয়ে নেই। রাজ্যের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগই অ্যালকোহলিক। কাজেই বিপদ যে ঘনাচ্ছে সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন গবেষকরা।

মদ-মাংস খাওয়ায় রেকর্ড করেছে এই রাজ্য, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাতাল সেখানেই

alcohol

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চেরই (আইসিএমআর) একটি গবেষণা বলছে, পরিমিত মদ্যপান খুব একটা ক্ষতি করে না। কিন্তু এই পরিমিতি কতটা সেটাই বুঝতে পারেন না মদ্যপায়ীরা। গন্ডগোলটা সেখানেই। আর মদের সঙ্গে ভুলভাল খাওয়ার অভ্যাসও বিপদ বাড়ায়। মদ-সিগারেট আর এর সঙ্গে অন্যান্য নেশার প্রকোপও রয়েছে। এইসব কিছুর পরেও রোজের খাওয়ায় অনিয়ম, কম ঘুম, অতিরিক্ত স্ট্রেস ও শরীরচর্চার অভাব বিপদ অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। সব মিলিয়েই মারণ রোগ বাসা বাঁধার অনুকূল পরিবেশ মানুষই তৈরি করে দেয়।

ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে মদ?

নিয়মিত মদ্যপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান প্রায় সাত রকম ক্যানসারের (Cancer) ঝুঁকি বাড়ায়। অ্যালকোহলের ক্ষতিকর রাসায়নিক শরীরের কোষগুলির ক্ষতি করতে থাকে। ফলে একটা সময় গিয়ে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয়ে যায়। ক্যানসার কোষের জন্ম হয়।  গলার ক্যানসার, কণ্ঠনালীর ক্যানসার, মুখ ও খাদ্যনালীর ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, মলাশয়ের ক্যানসার, স্তন ক্যানসার হতে পারে।

Drinking alcohol

১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল অবধি বিশ্বের ২০৪টি দেশে ১০০ কোটির বেশি কমবয়সীদের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীরাই অ্যালকোহলের নেশায় বুঁদ। বেশিরভাগেরই কার্ডিওভাস্কুলার রোগ রয়েছে অথবা ওবেসিটি, ব্লাড প্রেসার-সুগার বা ইউরিক অ্যাসিড রয়েছে। কোলেস্টেরলের মাত্রাও বেশি। শরীরজুড়েই পরতে পরতে অসুখ বাসা বেঁধেছে। অ্যালকোহল রিলেটেড লিভার ডিজিজ (ARLD) এখন অনেক বেশি।

Cancer: Alcohol

গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্টরা বলছেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের (Alcohol)  কারণে, লিভারে মেদ জমতে থাকে। এটা রোগের প্রাথমিক পর্যায়। ক্রমশই তা বিরাট আকার ধারণ করে। যার থেকে অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস এবং অন্তিম পরিণতি লিভার সিরোসিস। আমরা রোজ যে খাবার খাই তার থেকে পুষ্টিরস ছেঁকে নিয়ে বর্জ্য টক্সিনকে বার করে দেওয়াই লিভারের কাজ। অ্যালকোহল সেই টক্সিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একটা সময় লিভার আর ছাঁকনির কাজ করতে পারে না, ফলে টক্সিন জমতে থাকে এবং লিভারে মেদ বাড়তে থাকে। লিভার ফুলতে শুরু করে দেয়, ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ তৈরি হয়। একে বলে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।  পরের ধাপ ফাইব্রোসিস। এই অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি)-এর চতুর্থ পর্যায় হল লিভার সিরোসিস বা লিভার ফেলিওর। এআরএলডি-র আরও একটা পর্যায় হল অ্যাকিউট অ্যালকোহলিক হেপাটাইটিস। জ্বালাপোড়ার মতো যন্ত্রণা হয় শরীরে। কোষে সিস্ট জমতে থাকে। অনেক সময় হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা বা লিভার ক্যানসারও দেখা দেয়।