
কুকুর যদি গন্ধ শুঁকে করোনা ধরেত পারে, তাহলে পঙ্গপালই বা পারবে না কেন?
পশু বা কীট-পতঙ্গদের সেনসরি অর্গ্যানকে কাজে লাগিয়ে এমন অনেক অসাধ্য সাধন করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। পশু, পাখি এমনকি অনেক কীট-পতঙ্গদের সেনসরি নার্ভ মানুষের থেকে অনেক বেশি সক্রিয়, এতে সন্দেহ নেই। মৌমাছি যত রকম রঙ দেখতে পায়, মানুষ তা পায় না। মনুষ্যেতর জীবেরা যে কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায় মানুষ তা পায় না। জার্মানির ডুইসর্বাগ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছিলেন লাল পিঁপড়েরাই পারে এক দিন আগে ভূমিকম্পের জানান দিতে। ভূ-গর্ভের গ্যাস নিঃসরণ অথবা ভূ-চৌম্বকত্বের সামান্য পরিবর্তন ঘটলে লাল পিঁপড়েরা বুঝতে পারে সবার আগে। কাজেই কীট-পতঙ্গদের সেনসরি অর্গ্যানগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বেশি অ্যাকটিভ। সেই বাড়তি ক্ষমতাটুকুকেই বিজ্ঞানের গবেষণায় লাগানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। পঙ্গপাল (cancer) নিয়ে এমনই গবেষণা চলছে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির (এমএসইউ) বিজ্ঞানী দেবজিত সাহা ও তাঁর টিম সম্প্রতি দাবি করেছেন, পঙ্গপালের সেনসরি নার্ভ এতটাই সক্রিয় যে গন্ধ শুঁকে সুস্থ কোষ ও টিউমার কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে (cancer) । ক্যানসার আক্রান্ত কোষ একেবারে প্রাথমিক স্টেজেই চিহ্নিত করতে পারবে পঙ্গপাল। সুস্থ কোষ ধীরে ধীরে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে উঠছে কিনা সেটা ধরে দেওয়ার ক্ষমতাও আছে পঙ্গপালের।
অ্যালঝাইমার্স সারবে ওষুধে? নতুন আবিষ্কারে অসাধ্য সাধন করতে চলেছেন বিজ্ঞানীরা
এমএসইউ-এর বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গবেষক দেবজিত সাহা বলছেন, সুস্থ কোষের যখন অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে উঠতে থাকে তখন সেই কোষের মধ্যে নানারকম রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। অনেক রাসায়নিক উপাদান ক্ষরিত হয়। সেইসব উপাদানের আলাদা আলাদা গন্ধ আছে। সেই গন্ধ মানুষের নাক টের না পেলেও কিছু কীট-পতঙ্গের সেনসরি নার্ভে তা ধরা পড়ে। তার মধ্যে পঙ্গপাল একটি। এরা গন্ধ শুঁকে ধরতে পারে কোন কোষের মধ্যে কী ধরনের রাসায়নিক বদল হচ্ছে। গবেষক বলছেন, পঙ্গপালের এই বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে এমন ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরি করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা যাতে রোগী শ্বাস নিলেই ধরা পড়বে তার ক্যানসার আছে কিনা।
গবেষকরা বলছেন, ক্যানসার যদি গোড়ায় চিহ্নিত করা যায় এবং সঠিক থেরাপি শুরু করা যায় তাহলে ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী বহুদিন অবধি সুস্থ থাকতে পারে। গোড়ায় ধরা পড়ে ক্যানসার নির্মূল হয়েছে এমন উদাহরণও অনেক। কিন্তু স্টেজ ফোরে পৌঁছে গেলে তার নিরাময়ের সম্ভাবনা ১০ শতাংশেরও কম। সেই কারণে বিজ্ঞানীরা চাইছেন এমন যন্ত্র আবিষ্কার করতে যা একদম শুরুতে কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন শুরুর মুখেই রোগ চিহ্নিত করবে। টিউমার কোষে যখন রাসায়নিক বদল হতে শুরু করবে তখনই সেই রোগ চিহ্নিত করতেই এক রকম ইলেকট্রনিক ডিভাইস বানানোর কাজ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেখানে পঙ্গপালের সেনসরি নার্ভের সেই বিশেষ ক্ষমতাকে কাজে লাগানো হবে।
এই গবেষণা যদিও গত ১৫ বছর ধরে চলছে। এখনও তেমন যন্ত্র পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে গবেষণায় আগামী কয়েক বছরে সেই অসাধ্য সাধন হবে বলেই দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।