
সিন্থেটিক পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক ক্যানসারের কারণ, ত্বকের রোগ ডেকে আনে, সতর্ক করলেন বিশেষজ্ঞ
সঞ্জীব আচার্য
কর্ণধার সিরাম অ্যানালিসিস
পোশাক নির্বাচনে জাঁকজমকের থেকে আরামটাই মূল কথা। পোশাক হবে এমন যা ত্বকের ক্ষতি করবে না আবার পরিবেশবান্ধবও হবে। করোনা কালে এমন পরিবেশবান্ধব ফ্যাব্রিকের চাহিদা অনেক বেড়েছে, যাকে ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ ফ্যাশন বলা হয়। সেক্ষেত্রে ক্ষতিকর রাসায়নিক যুক্ত কাঁচামাল ব্যবহার না করে অনেক বেশি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে পোশাক তৈরি হয়। ইদানীং তো অর্গ্যানিক কটন, লিনেনের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। উদ্ভিজ্জ ফাইবার থেকে তৈরি এবং পরিবেশবান্ধও। পুননর্ব্যবহারযোগ্য পলিয়েস্টার বা নাইলনের উপকরণের চাহিদাও রয়েছে। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিয়েস্টার নিয়ে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এবং রাসায়নিক উপাদানে তৈরি পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক ত্বকের ক্ষতি তো করেই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তছনছ করে দেয়। নানা রোগের জন্ম দেয় রাসায়নিক পলিয়েস্টার।
পলিয়েস্টার একদিকে যেমন ভাল, টেকসই, তাপ-প্রতিরোধী আবার তেমনি এর অনেক খারাপ গুণও রয়েছে। যেহেতু রাসায়নিক উপাদানে এই ফ্যাব্রিক তৈরি হয়, তাই মানুষের ত্বকের জন্য মোটেই ভাল নয়। শরীরে দীর্ঘক্ষণ পরে থাকলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাঙ্ঘাতিক হতে পারে। বায়োডিগ্রেডেবল না হওয়ায়, পরিবেশেরও ক্ষতি করে পলিয়েস্টার।
পলিয়েস্টার আসলে কী?
পলিয়েস্টার হল সিন্থেটিক ফ্যাব্রিক যা পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি হয়। রাসায়নিক গঠনের কথা বলতে গেলে, পলিয়েস্টার হল একধরনের পলিমার। একে বলে পলিইথিলিন টেরিফ্যালেট (পিইটি)। প্রাকৃতিকভাবে বা উদ্ভিজ্জ উপাদান থেকেও পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক তৈরি হয় যা পরিবেশবান্ধব ও পুনর্ব্যবহার যোগ্য। তবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কৃত্রিমভাবে তৈরি বা সিন্থেটিক পলিয়েস্টারের ব্যবহারই বেশি।
পলিয়েস্টারকে আরও টেকসই ও আরামদায়ক করার জন্য এর সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ফাইবার মেশানো হয়। কটনের সঙ্গেও মিশিয়ে পলিয়েস্টারের পোশাক তৈরি হয়। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা বলেন, পলিয়েস্টারের রাসায়নিক উপাদান শরীরের ক্ষতি করে। দীর্ঘসময় ব্যবহারে ক্যানসারের মতো মারণ ব্যধিরও কারণ হতে পারে।
এখন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে শরীরে ক্ষতি করতে পারে পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক।
ক্যানসারের কারণ, ফুসফুসের সংক্রমণও বয়ে আনতে পারে
অধিকাংশ বিজ্ঞানীই বলেছেন, রাসায়নিকভাবে তৈরি পলিয়েস্টারে কার্সিনোজেনিক উপাদান থাকে। অর্থাৎ যা ক্যানসারের জন্য দায়ী। পলিয়েস্টারের পোশাক দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করলে এর ফ্যাব্রিকের রাসায়নিক উপাদান শরীরে ঢুকে কোষের সঙ্গে মিশে যায়। যার ফলে ত্বকের সংক্রমণজনিত রোগ বা স্কিন ক্যানসার হতে পারে। হার্ট ও ফুসফুসের ক্যানসারের কারণও হতে পারে পলিয়েস্টার। বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, রাসায়নিক ফ্যাব্রিকের উপাদান শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছে কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রনিক ফুসফুসের রোগ হতে পারে। শ্বাসকষ্টের কারণও হতে পারে পলিয়েস্টার। তাই পোশাক নির্বাচনের জন্য যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা উচিত। জৌলুসের থেকে পরিবেশবান্ধব পোশাকই শরীরে জন্য ভাল।
ত্বকের বন্ধু নয়
রাসায়নিক পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ত্বকের। রাতের বেলা যদি সিন্থেটিক পলিয়েস্টারের পোশাক পরে শোওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সাবধান হওয়াই উচিত। নানা রকম ত্বকের রোগের জন্য দায়ী পলিয়েস্টার। চুলকানি, র্যাশ তো বটেই, একজিমা, ডার্মাটাইটিসেরও কারণ পলিয়েস্টার।
শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয় পলিয়েস্টার!
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দিতে পারে পলিয়েস্টার। ১৯৯৩ সালে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, পলিয়েস্টারের অন্তর্বাস বেশি ব্যবহার করলে শুক্রাণুর পরিমাণ কমতে থাকে। ফার্টিলিটি কমে গেলে বন্ধ্যাত্ব অবধারিত। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওষুধের সাহায্যে শুক্রাণুর সংক্রমণ সারানো সম্ভব। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণুর কাউন্টও বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে শুক্রথলি বা টেস্টিসের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা মুশকিল। তাই সতর্ক থাকাই উচিত।
রোগ প্রতিরোধের দফারফা করে
ইমিউন সিস্টেমের উপর সবচেয়ে বড় আঘাত হানে পলিয়েস্টার। গবেষকরা বলছেন, এর রাসায়নিক উপাদানে অ্যাডভার্স সাইড এফেক্টস দেখা যায়। হার্ট, লিভারের ক্ষতি হয়। অ্যালার্জির প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষত ছোট বাচ্চা বা কমবয়সীদের সিন্থেটিক পলিয়েস্টারের পোশাক কোনওভাবেই পরানো উচিত নয়। শরীরের তাপমান বজায় রাখতে কোনওভাবেই সাহায্য করে না পলিয়েস্টার। উল্টে এই পোশাকের অধিক ব্যবহারে শ্বাসের সমস্যা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
পরিবেশ দূষণের কারণ
সিন্থেটিক পলিয়েস্টার পরিবেশবান্ধব নয়। এর পুনর্ব্যবহার সম্ভব নয়। অন্তত ২০০ বছর সময় লাগে পরিবেশে রিসাইকেল হতে। এই সময়ের মধ্যে পলিয়েস্টার রাসায়নিক উপাদান পরিবেশে মিশতে থাকে। মাটি, জল, বাতাসের ক্ষতি করে। চিন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ সিন্থেটিক পলিয়েস্টার তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পলিয়েস্টারের রাসায়নিক উপাদান পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। কৃত্রিমভাবে পলিয়েস্টার ফ্যাব্রিক তৈরির সময় যে উপাদান মাটিতে বা জলে মেশে তার প্রভাব দীর্ঘসময় স্থায়ী থাকে। যে কোনও মারণ রোগের কারণ হতে পারে এইসব রাসায়নিক উপাদান।