
মুখের ক্যানসারের (Oral Cancer) নিরিখে বিচার করলে আমাদের দেশ এক নম্বরে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, পুরুষদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যানসারের ঝুঁকি মেয়েদের তুলনায় দ্বিগুণ। তবে এখন নেশায় আসক্ত জেন এক্সও। তাই মুখ ও গলার ক্যানসার গ্রাস করছে বর্তমান প্রজন্মকে।
কতটা বেড়েছে নেশায় আসক্তি?
রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে প্রায়শই কোনও না কোনও তরুণকে দেখা যায় পকেট থেকে গুটখা বা পানমশলা বার করে মুখে ঢেলে দিতে। বেশ আয়েশ করে চিবোতে চিবোতে সিগারেটে লম্বা একটা টান। শুধু, পুরুষ নয়, অনেক মহিলারাও সুপুরি বা বাহারি পানমশলা মুখে রাখতে পছন্দ করেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মধ্যেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। সমীক্ষা বলছে, ৫০ শতাংশ ধূমপায়ী এই জিভের ক্যানসারের শিকার। বাকিরা ভোগেন অন্যান্য তামাক জাতীয় নেশার কারণে।
কী কী নেশা ওরাল ক্যানসারের (Oral Cancer) জন্য দায়ী?
ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখগহ্বরের ক্যানসার শুধু জিভ নয়, মাড়ি, টনসিল, ঠোঁট, গালের ভিতরের অংশ জিভের নীচের নরম অংশেও হতে পারে।
- প্রধান কারণ অতিরিক্ত ধূমপান। তা ছাড়া, পান, সুপুরি, জর্দা, দোক্তা, পানপরাগ, গুটখা ওরাল ক্যানসারের প্রধান কারণ।
- অ্যালকোহলকে তালিকা থেকে কোনওভাবেই বাদ দেওয়া যায় না।
- অনেকে গালের পাশে জর্দা পান বা সুপুরি ঠুসে রেখে দেন। ডাক্তারি পরিভাষায় এই অংশের নাম কফিন কর্নার। যাদের এই বদ অভ্যাস আছে তাঁদের ক্যানসারের সূত্রপাত কিন্তু এখান থেকেই হয়।
- ধারালো বা ভাঙা দাঁতের ঘষা লেগে গালের মধ্যে অনেক সময় ঘা হয়ে থাকে। এটা দীর্ঘস্থায়ী হলে বায়োপসি (Oral Cancer) করানো বাধ্যতামূলক।
রয়েছে আরও কারণ। যার মধ্যে অন্যতম হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV Infection)। এইচপিভি সংক্রমণ মূলত অনিয়ন্ত্রিত যৌন সংসর্গের কারণে হয়। Oral Sex যার মধ্যে অন্যতম। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে Sexually Transmitted Infection (STI) । ১০০ রকমের এইচপিভি সংক্রমণ রয়েছে যার মধ্যে ৪০ রকম দেখা যায় জননাঙ্গে (Genital Area)।
কোনও ক্রনিক রোগ থাকলে সেখান থেকেও ক্যানসার (Oral Cancer) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা ছাড়া বংশগত বা জিনগত কারণও এর জন্য দায়ী। তবে, মহিলাদের থেকে পুরুষদের ওরাল ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ।
লক্ষণ সামান্য হলেও এড়িয়ে যাবেন না
- মুখের মধ্যে কোনও সাদাটে বা লালচে প্যাচ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। বিশেষত তিনি যদি স্মোকার বা ধোঁয়াহীন তামাকে আসক্ত হন, লিউকোপ্লেকিয়া অর্থাৎ সাদাটে প্যাচ হল প্রি ক্যানসারাস স্টেজ।
- মুখে বা গলায় ফোলা ভাব বা লাম্পের মতো হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
- জিভে লাল বা কালো ছোপ। কথা বলতে, খাবার খেতে সমস্যা।
- ঠোঁটের উপরের অংশে বা ভিতরে নরম জায়গায় কোনও ক্ষত, যেটা দীর্ঘদিন ধরে কোনও ওষুধেই সারছে না।
- চিবুকের দুপাশে ও গলায় গ্ল্যান্ড ফুলেছে। ঢোঁক গিলতে বা খাবার খেতে অসুবিধা হচ্ছে।
- জিভে শ্লেষ্মার মতো দাগ। অসহ্য ব্যথা।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই উপসর্গগুলি দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
যে কোনও রোগেই ওষুধের থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা বেশি প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞেরা বললেও বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেটা শুধু কথার কথা মাত্রই। তাও জেনে রাখুন কী ভাবে এই রোগ থেকে দূরে থাকবেন।
সচেতনতাই দাওয়াই
১) সিগারেট, গুটখা, তামাকজাত সমস্ত জিনিসকে বলতে হবে গুডবাই।
২) ওরাল ক্যানসারের জন্যে দায়ী পরিচ্ছন্নতার অভাব। নিয়মিত দু’বেলা ব্রাশ করা ও খাবার পরে ভাল করে কুলকুচি করে মুখ পরিষ্কার রাখা দরকার (Oral Cancer)।
৩) তামাক আর ক্যানসার সমার্থক। তা সে ধোঁয়া ওড়ানো তামাকই হোক বা চিবোনোর তামাক। একই রকম ক্ষতিকর পান, সুপুরি, চুন ও খয়ের। পান পাতার কিছু গুণ আছে ঠিকই কিন্তু চুন, সুপুরি, খয়ের আর জর্দা সহযোগে পান মারাত্মক ক্ষতিকর।
এক্স-রে (X-rays), সিটি স্ক্যান (CT scan), পেট স্ক্যান (PET scan), এমআরআই স্ক্যান (MRI scan) এবং এন্ডোস্কোপি (Endoscopy)-সহ নানা পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে গিয়ে এই রোগের বিষয় নিশ্চিত হন ডাক্তারেরা। সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির আরোগ্য লাভের সব কটি পদ্ধতিই বেশ যন্ত্রণাদায়ক। তবে, আরোগ্য মিলবেই কিনা সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে পারেন না ডক্তারেরা। তাই শরীরকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। বরং, নেশাগুলোকেই বলে দিন টাটা।