বদহজম পিছু ছাড়ছেই না? বার বার জন্ডিস? ক্যানসার বাসা বাঁধেনি তো

গুড হেলথ ডেস্ক

ক্যানসার শব্দটা শুনলেই বুকের মধ্যে কেমন এক অজানা ভয় ঘিরে ধরে। এই ভয় সত্যিই অমূলক নয়। সারা বিশ্বে ক্যানসারে প্রচুর মানুষ মারা যান। আর কিছু ক্যানসার শনাক্ত করতে পারা এতটাই দুরূহ যে চিকিৎসা শুরু করতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। প্যাংক্রিয়াস (pancreatic cancer) বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার তেমনই। এই সম্পর্কে জনসাধারণের জ্ঞান খুব সীমিত। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পড়লে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ক্যানসারে মানুষ বাঁচেন না।

প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার কমবয়সীদের প্রায় হয় না বললেই চলে। তবে কম বয়স থেকেই সাবধানতা মেনে চলা ভাল। ভাজাভুজি কম খাওয়া, প্যাকেট ফুড না খাওয়া, সুষম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করলে বেশি বয়সেও তার সুফল মেলে। সাধারণ হালকা মানের জন্ডিস এই ক্যানসারের প্রধান উপসর্গ। কিন্তু হালকা জন্ডিস হলে কেউই অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের পরীক্ষা করান না। ফলে তা ধরা পড়ে না। যখন ধরা পড়ে, অনেকটাই ছড়িয়ে যায় ক্যানসার। ছড়ায় মূলত ফুসফুস আর যকৃতে।

Pancreatic Cancers

কেন হয় প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসার?
জেনেটিক কারণে হতে পারে। যারা একাধিকবার প্যাংক্রিয়াটাইটিস রোগে ভুগছেন, তাঁদের রোগটি বংশগত কিনা, সেটা নির্ধারিত হওয়া দরকার। জেনেটিক কারণ ছাড়াও রোজকার জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসে প্যাংক্রিয়াসের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। যেমন- ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
মেদধিক্য ও ডায়াবেটিস থাকলেও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার (pancreatic cancer) হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এ ছাড়া যাঁদের পার্শিয়াল গ্যাস্ট্রেকটমি বা কোলেসিস্টেকটমির মতো পাকস্থলী বা পিত্তথলিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে, তাঁদের প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৪০-৫০ বছর বয়স থেকে অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

 Pancreatic Cancer

কেন অগ্ন্যাশয় গুরুত্বপূর্ণ?
প্যাংক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। ইনসুলিন ও গ্লুকাগনের মতো প্রয়োজনীয় হরমোনগুলি এখানেই তৈরি হয়। এই দুই হরমোন রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। এ ছাড়াও অগ্ন্যাশয়ে উৎপাদন হয় বেশ কিছু পাচক-রস বা এনজাইমের, যা আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয় কোনও ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে এর কার্যক্ষমতা কমে যায়। আর অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার হলে মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকাই দুরূহ হয়ে ওঠে।

উপসর্গ কী কী?
ক্যানসারের (pancreatic cancer) ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের হল চিহ্নিতকরণ। আর প্যাংক্রিয়াটিক ক্যানসারের উপসর্গগুলো এতটাই সাধারণ যে, একে সাধারণ অসুখের থেকে আলাদা করাটাই চাপের।
◆ পেট ব্যথা ◆ পিঠ ব্যথা ◆ মলের রঙ বদল ◆ বারবার জন্ডিস হওয়া ◆ ত্বকের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

Pancreatic Cancer

চিকিৎসা
অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার (pancreatic cancer) হলে সার্জারিই ক্যানসার নির্মূলের একমাত্র পথ। অ্যাকিউট ও ক্রনিক প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে প্যাংক্রিয়াসকে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা খুব জরুরি। রুটিনমাফিক রক্তপরীক্ষা, ইউ এস জি, স্ক্যানিং করা আবশ্যিক। কেমো, রেডিওথেরাপিও কাজে আসতে পারে। তবে অস্ত্রোপচার করে ক্যানসার কোষ বাদ না দিতে পারলে ব্যথা কমানোর ও হজমের ওষুধ দিয়ে রোগীকে কয়েক বছর বাঁচিয়ে রাখা যায়। কিন্তু রোগ পুরোপুরি সারে না। প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যানসারের চিকিৎসা শুরু না করতে পারলে রোগীকে ৪-৫ বছরের বেশি বাঁচানো যায় না। তাই সচেতন হওয়া জরুরি।