করোনা চিকিৎসায় ধরা পড়ল ফুসফুসে ক্যানসার! কলকাতার ডাক্তারদের তৎপরতায় দুর্দান্ত সাফল্য

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

কোভিড নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওড়িশার বাসিন্দা, ৫৬ বছর বয়সি অন্তর্যামী হোতা। আর পাঁচ জন কোভিড রোগীর মতোই ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে তাঁর। কিন্তু তখনও তিনি ঘুণাক্ষরেও আঁচ পাননি আরও কত বড় অসুখ থাবা গেড়েছে শরীরে! আঁচ পাবেনই বা কী করে, ক্যানসারের মতো একটা মারণ অসুখের কোনও উপসর্গই ছিল না তাঁর!

২৩ সেপ্টেম্বর  কোভিড নিয়ে সম্বলপুরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে, নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। উন্নতিও করেন তিনি। এর পাঁচ দিন পরে, ২৮ তারিখে সেখানেই ফুসফুসের সিটি স্ক্যান করলে জানা যায়, তাঁর ডান ফুসফুসের উপরের লোবে একটি টিউমার রয়েছে। চিকিৎসকরা হয়তো এমন কোনও ইঙ্গিত পেয়েছিলেন, যে কারণে তাঁরা অন্তর্যামীবাবুকে জানান কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।

অন্তর্যামী অপেক্ষা করেন, কোভিড সংক্রমণ মুক্ত হওয়ার। এর পরেই কলকাতায় এসে লাংসের ওই টিউমারের বায়পসি করা হলে ধরা পড়ে, ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত অন্তর্যামী!

স্বাভাবিক ভাবেই রোগী, পরিবার এমনকি চিকিৎসকরাও আকাশ থেকে পড়েন। একে করোনা, তায় ক্যানসার! প্রাথমিক ভাবে ভেঙেও পড়েন রোগী। এত বড় অসুখ এমন আচমকা জানান দিল! কোভিড না হলে হয়তো ধরাও পড়ত না অসুখ।

অ্যাপোলোর অঙ্কোসার্জেন ডক্টর শুভদীপ চক্রবর্তী পরিস্থিতি দেখে আর একটুও দেরি করেননি। জানান, পরিস্থিতি দেখেই তাঁরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন সার্জারির। কারণ ইভ্যালুয়েট করে দেখা যায়, যে স্টেজে রয়েছে ক্যানসার, তা সার্জারি ও তার পরবর্তী কেমোথেরাপি দিয়ে নিরাময়যোগ্য। ফলে সদ্য করোনাজয়ী প্রৌঢ়কে জানানো হয় সবটা। কাউন্সেলিং করে বোঝানো হয় পরিস্থিতি।

সেই মতোই সমস্ত রকম নিয়মকানুন মেনে, পরীক্ষানিরীক্ষা করে, চলতি নভেম্বর মাসের ৩ তারিখে অস্ত্রোপচার হয় অন্তর্যামীবাবুর ফুসফুসে। ডক্টর শুভদীপ চক্রবর্তী এবং ডক্টর তাপস করের তত্ত্বাবধানে সফল হয় অস্ত্রোপচার। বাদ যায় ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া লোব। সফল অস্ত্রোপচারের ঠিক আট দিনের মাথায়, ১১ নভেম্বর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। এর পরে চলবে তাঁর কেমোথেরাপি।

চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তীর কথায়, “এ যেন উভয় সংকট পরিস্থিতি ছিল। করোনা ও ক্যানসারের যৌথ আক্রমণে মৃত্যুর ভয় এমনিই কুরে খায় রোগীদের। তবে এটা এই মহামারী পরিস্থিতিতে ক্রমে ‘নিউ নরমাল’ হয়ে উঠতে চলেছে। অন্তর্যামী হোতার মতো সাহসী রোগীরা আমাদের গর্ব। আমাদেরও দায়িত্ব, যথেষ্ট সহানুভূতি এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সবরকম ভয়কে দূরে সরিয়ে, সবরকম নিরাপত্তা নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া। অ্যাপোলোর মতো বিশ্বমানের সুপারস্পেশ্যালিটি হসপিটাল বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।”

অন্তর্যামী বাবুর কথায়, “কোভিড হতেই আমি বেশ ঘাবড়ে গেছিলাম। সেই থেকে যখন ফুসফুসে টিউমারের কথা বললেন সম্বলপুরের চিকিৎসকরা, তখনই বেশ আঁতকে উঠেছিলাম। দেরি না করে কলকাতা চলে এসেছিলাম। কিন্তু ক্যানসার হয়েছে এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।”

এই পরিস্থিতিই দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেন ডক্টর চক্রবর্তী ও ডক্টর কর। শুধুই চিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার নয়, এই ধরনের পরিস্থিতিতে তার বাইরেও অনেক কিছু থাকে। যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রোগীকে সাহস জোগানো, আত্মবিশ্বাস বাড়ানো।

“ডাক্তারবাবুরা যে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন, আমায় বোঝালেন, এবং এত তাড়াতাড়ি অপারেশন করে সারিয়ে তুললেন, এ যেন ম্যাজিকের মতো। আজ থেকে মাস দুয়েক আগেও জানতাম না আমার ক্যানসার হয়েছে, আর আজ আমি ক্যানসারমুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরছি! অশেষ কৃতজ্ঞতা চিকিৎসকদের প্রতি।”– বলেন অন্তর্যামী হোতা।