
গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টে সমস্যা নেই তো? আগে থেকে শিশুর হৃদয় বোঝার ডাক্তারি উপায় কী?
গুড হেলথ ডেস্ক
হার্টের সমস্যা শুধু বড়দের নয়, ছোটদেরও হতে পারে। এমন অনেকসময় দেখা যায় জন্মের পরেই শিশুর হার্টে ছিদ্র রয়েছে বা কোনও জটিল হার্টের অসুখ নিয়েই জন্মেছে শিশু। সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যেও হার্টের বড় রকম সমস্যা দেখা যায়। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, এখন এই সমস্যার যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। এখনকার সময় হার্টের সার্জারি ও ডায়াগনসিস এতটাই উন্নত যে গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টে (fetal echocardiography) কোনও সমস্যা আছে কিনা তা আগে থেকেই বুঝতে পারেন ডাক্তারবাবুরা। সঠিকভাবে রোগ ধরা গেলে তার চিকিৎসাও শুরু হয় দ্রুত। ফলে রোগ নিরাময়ও অনেক সহজ হয়ে যায়।
গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টের পরীক্ষার জন্য আধুনিক পদ্ধতি হল ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি (fetal echocardiography)।
শিশুদের হার্টে কী কী সমস্যা হতে পারে?
শিশুদের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডের সমস্যা দুই প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমটি হল জন্মগত। আর দ্বিতীয়তটি জন্মের পরে হওয়া সমস্যা। হার্টের গঠনগত কিছু সমস্যা হতে পারে যা জন্মগত, যেমন হার্টে ফুটো বা হার্টের গঠন অসম্পূর্ণ। এর ফলে হৃদপিণ্ড দিয়ে রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হয় (fetal echocardiography)।
জন্মগত সমস্যা দু’রকম?
শিশুদের জন্মগত হৃদপিণ্ডের সমস্যাকে প্রধানত দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটিকে বলা হয় সায়ানোটিক। আর দ্বিতীয়টি হল, নন সায়ানোটিক।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, সায়ানোটিক মানে, আমরা সহজ ভাষায় ব্লু-বেবি বলি। নন সায়ানোটিক, মানে ব্লু বা নীল নয়, কিন্তু এই শিশুদেরও হৃদপিণ্ডে সমস্যা রয়েছে। সায়ানোটিক সমস্যায়, জন্মের পরেই শিশুর গায়ের রং নীল হতে থাকে। শিশু খেতে পারে না। এমনই অবস্থা হয়ে যে, শিশু মায়ের দুধও পর্যন্ত খেতে পারে না।
নন সায়ানোটিক শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ের রং পরিবর্তন হয় না। ফলে খুব দ্রুত এই রোগ ধরা পড়ে না। দেড় বা দুই মাস পরে থেকে দেখা যায় শিশুর ওজন বাড়ছে না। খাওয়া কমে যাচ্ছে। খাওয়ার সময় শিশু ঘেমে যাচ্ছে। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে ফিটাল ইকো কার্ডিয়োগ্রাফি করলে সমস্যা দ্রুত ধরা পড়ে।
ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি (fetal echocardiography) করলে কী বোঝা যায়?
গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টে কোনও সমস্যা আছে কিনা তা জানা যায় ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করে। জন্মের আগে ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে বোঝা সম্ভব যে, গর্ভস্থ ভ্রুণের কোনও হার্টের সমস্যা রয়েছে কিনা। যদিও দেখা যায়, গর্ভস্থ ভ্রুণটি বড় কোনও হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মাচ্ছে, তা হলে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন ডাক্তারবাবুরা (fetal echocardiography)। সেক্ষেত্রে জন্মানোর পরের মুহুর্তেই সেই শিশুর চিকিৎসা শুরু করা হয়। জন্মানোর ২০ সপ্তাহ আগে এই পরীক্ষা করানো হয়।
এই টেস্টে ধরা পড়ে শিশুটি হার্টে কোনও অ্যাবনর্মালিটি নিয়ে জন্মাচ্ছে কিনা। শিশুটির পরিবারে হৃদরোগের কোনও ইতিহাস আছে কিনা, শিশু গর্ভে থাকার সময় মা এমন কোনও ওষুধ খেয়েছিলেন কিনা বা অ্যালকোহলের অধিক নেশা করেছিলেন কিনা যার কারণে হার্টে সমস্যা রয়েছে। ফিটাল ইকো করে আগে থেকেই হার্টের সমস্যা বা ক্ষত ধরা পড়লে তা সারানো সম্ভব।
ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি করলে বোঝা যায় শিসউর হার্টের গঠন সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা। যদি দেখা যায় বাচ্চার হার্টের ভালভ বা চেম্বারগুলো ঠিক মতো তৈরি হয়নি তাহলে চ্চার হার্টে রক্ত সঞ্চালন হবে না, ফলে ফুসফুসে রক্ত পৌঁছতেই পারবে না। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হবে শিশুর এবং মৃত্যুও হবে তাড়াতাড়ি। সেক্ষেত্রে এই টেস্ট করালে রোগ ধরা পড়বে খুব তাড়াতাড়ি। শিশু হার্টের জটিল সমস্যা নিয়ে জন্মালেও তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।