
বুকের দুধেই পুষ্টি, নতুন মায়েরা জেনে নিন স্তন্যপান করানোর সময় কী কী নিয়ম মানতে হবে
চৈতালী চক্রবর্তী
প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়াকে স্বর্গীয় অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করা হয়। মা হওয়ার দীর্ঘ পথ নারীকে সমৃদ্ধ করে, বহু অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ করে তোলে। মা হওয়ার পরে সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি আরও ব্যাপ্ত হয়। মায়ের দায়িত্বও বেড়ে যায়। মা হওয়ার পরে অর্থাৎ পোস্টপার্টাম পিরিয়ডে মায়ের দায়িত্ব যতটা থাকে, প্রেগন্যান্সির সময়ও ঠিক ততটাই থাকে। মাতৃত্বের প্রথম ধাপ হল ব্রেস্টফিডিং, সন্তানকে স্তন্যপান করানো। এই ব্রেস্টফিডিংয়ের প্রস্তুতি কিন্তু প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড থেকেই শুরু হয়ে যায়। ডাক্তারবাবুরা বলে দেন, হবু মাকে ঠিক কী কী নিয়ম মেনে চলতে হবে। গর্ভে সন্তানের সঙ্গে মায়ের যে আত্মিক যোগ গড়ে ওঠে, প্রসবের পরে সন্তানকে স্তন্যপান করানোর সময় সেই বাঁধন আরও দৃঢ় হয়। সন্তান ও মায়ের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়। তাই ব্রেস্টফিডিং নিয়ে মায়েদের সচেতন করতে প্রতি বছরই ১ থেকে ৭ অগস্ট বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ পালিত হয় বিশ্বজুড়ে।
এ বছর ব্রেস্টফিডিং উইকের থিম ‘প্রোটেক্ট ব্রেস্টফিডিং: এ শেয়ারড রেসপন্সিবিলিটি’। জন্মের প্রথম ছ’মাস মায়ের বুকের দুধই শিশুর পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটায়। শিশুর শারীরিক ও মানসিক গঠন তৈরি হয় মায়ের বুকের দুধেই। অথচ স্তন্যপান নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে মায়েদের। অনেকেই মনে করেন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে ফিগার নষ্ট হয়ে যায়। আবার অনেক মায়েরা ভাবেন, শুধু বুকের দুধেই শিশুর বৃদ্ধি হবে না। স্তন্যপান করানোর পাশাপাশি বাচারচলতি কৌটো দুধ বা কৃত্রিম দুধ খাওয়াতে শুরু করেন অনেকে। তবে এখন এইসব ভ্রান্ত ধারণার প্রাচীর মায়েরাই ভাঙছেন। সচেতনতা আগের থেকে বেড়েছে। যাঁরা নতুন মা হয়েছেন বা মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চলেছেন, তাঁদের জন্য ব্রেস্টফিডিং নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর সুদীপ সেনগুপ্ত ও নারায়ণ মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর শান্তনু রায়।
প্রেগন্যান্সির সময় থেকেই প্রস্তুতি নেবেন মা

সন্তান প্রসবের পরে মায়ের প্রথম কাজই হবে শিশুকে স্তন্যপান করানো। তাই এই প্রস্তুতি শুরু হবে প্রেগন্যান্সি পিরিয়ড থেকেই। ডক্টর সুদীপ সেনগুপ্ত বললেন, সন্তান গর্ভে থাকার সময়েই ডাক্তারবাবুরা বলে দেবেন মায়েদের কী কী নিয়ম মানতে হবে। প্রথমত, পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। দ্বিতীয়ত, মা স্ট্রেস ফ্রি থাকার চেষ্টা করবেন। কোনওরকম মানসিক চাপ না রাখাই ভাল। তৃতীয়ত, স্তন্যপান নিয়ে কোনও ভ্রান্ত ধারণা যেন না থাকে। অনেক মায়েরাই প্রথমবার ডেলিভারির আগে ভয় পেয়ে যান, ব্রেস্টফিড করাতে পারবেন কিনা, এই চিন্তাও থাকে। সেসব নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সন্তান একবার ‘সাক’ করতে শুরু করলেই দুধ ঠিকঠাকভাবে তৈরি হতে শুরু করবে এবং সবটাই সহজে হবে।

প্রেগন্যান্সির সময় মাকে প্রচুর প্রোটিন ও আয়রন খেতে হবে, বললেন নারায়ণ মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর শান্তনু রায়। ডাক্তারবাবু বললেন, এই সব পুষ্টিকর ডায়েট খুব দরকার। মাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার রাখতে হবে ডায়েটে। ফলের রস খাওয়া ভাল, কিন্তু খাবারে ঝাল বেশি নয়। অনেক মায়েরা বলেন, স্তনবৃন্ত ‘ফ্ল্যাট’ হয়ে আছে, শিশু ‘সাক’ পারছে না। এর জন্য প্রেগন্যান্সির সময় থেকেই স্তনবৃন্ত টানার অভ্যাস করতে হবে মাকেই।
নতুন মায়েরা শুনুন, ঝাল খাবার একদম নয়, ডায়েটে থাক ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড
ডক্টর শান্তনু বললেন, প্রেগন্যান্সির সময় এবং প্রসবের পরে মা যখন স্তন্যপান করাচ্ছেন, তখন ডায়েটে প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রাখার চেষ্টা করবেন। এখন মায়েদের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খাওয়ান ডাক্তারবাবুরা, যাতে ব্রেস্ট-মিল্কে ডিএইচএ লেভেল বেশি হয়। এই ডিএইচএ শিশুর পুষ্টি, বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। ডিএইচ সঠিক পরিমাণে শিশুর শরীরে ঢুকলে আইকিউ লেভেল বাড়বে।
প্রেগন্যান্সির সময় হোক বা পরে, সদ্য মা হচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। ঝাল খাবার একেবারেই খাবেন না মায়েরা। কারণ মা নিজে যা খাচ্ছেন, তারই প্রভাব পড়বে তাঁর বুকের বুধেও। তাই ঝাল জাতীয় খাবার বেশি খেলে, স্তন্যপানের করানোর পরে অনেক সময়েই দেখা যায়, শিশুর বমি হচ্ছে। তাই মাকে সতর্ক থাকতেই হবে। আরও একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে, সেটা হল গরুর দুধে অ্যালার্জি হতে পারে অনেক বাচ্চার। তাই স্তন্যপান করাচ্ছেন যে মায়েরা, তাঁরা গরুর দুধ খাবেন না। ঝালমশলাদার খাবার, জাঙ্ক ফুড বেশি না খাওয়াই ভাল।
ব্রেস্টফিডিংয়ের ক্ষেত্রে নর্মাল ডেলিভারি বা সি-সেকশনে কি খুব একটা তফাৎ হয়?
ডক্টর সুদীপ সেনগুপ্ত বলছেন, নর্মাল ডেলিভারিতে খুব তাড়াতাড়ি শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো যায়। জন্মের দু’ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের প্রথম দুধ বা কলোস্ট্রাম খাওয়ানো যায় শিশুকে। সিজারের ক্ষেত্রেও খুব একটা ফারাক হয় না। তবে অনেক সময় সি-সেকশনের পরে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে কিছু সময় বেশি লাগে। কারণ সিজারের পরে কিছু জটিলতা হতে পারে অনেকের, তখন কিছুটা দেরি হয়। এর বাইরে আর কোনও সমস্যা নেই।
ডক্টর শান্তনু বলছেন, এখন নর্মাল ডেলিভারি ও সিজারে তেমন কোনও সমস্যা হয় না। বরং চেষ্টা করা হয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেলিভারির পরে শিশুকে বেডে মায়ের সঙ্গে রাখতে। শিশু যদি মায়ের সঙ্গে একই বেডে থাকে এবং ব্রেস্টফিড করে, তাহলে মায়ের সঙ্গে সন্তানের বন্ডিং আরও ভাল হয়। শিশু বোঝে মা-ই তার প্রাইমারি কেয়ারগিভার।
ডেলিভারির পরে প্রথম তিন-পাঁচ দিন হলুদ দুধ দেখে চিন্তা করবেন না, বাচ্চাকে ‘গোল্ড মিল্ক’ খাওয়াচ্ছেন আপনারা
প্রসবের প্রথম তিন থেকে পাঁচদিন মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে যে ঈষৎ হলদেটে ঘন দুধ নিঃসৃত হয় তাকে বলে ‘তরল সোনা’ বা ‘গোল্ড মিল্ক’। এর নাম কলোস্ট্রাম। এই কলোস্ট্রামের পরিমাণ কম তবে চিন্তার কারণ নেই। ডাক্তারবাবুরা বললেন, এই দুধেই থাকে সেইসব পুষ্টি উপাদান যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। প্রসবের পর ম্যামারি গ্ল্যান্ডে জমে থাকা ঘন কোলোস্ট্রাম, স্বাভাবিক মাতৃদুগ্ধের থেকে প্রায় ১০ গুণ ঘন। এই কলোস্ট্রামে থাকে অ্যান্টিবডি যা শিশুর গলা থেকে শুরু করে ফুসফুস ও অন্ত্র প্রতিটি অঙ্গের রক্ষাকারী আবরণ মিউকাস মেমব্রেনকে সুরক্ষিত রাখে। মিউকাস স্তর মজবুত হলে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সহজ। আছে। কোলোস্ট্রামে ভরপুর গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে। বাচ্চার ত্বক, পেশি, কার্টিলেজ, নার্ভ কোষ ও হাড় গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয় এই গ্রোথ ফ্যাক্টর। জন্মের পর প্রথম দু’-তিন দিন বাচ্চা এই দুধ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অনেক মজবুত হয়। তাছাড়াও কলোস্ট্রামে গ্লাইকোপ্রোটিন, ইমিউনোগ্লোবিউলিন, ল্যাক্টোফেরিন থাকে যা শিশুর শরীর ও মনের বিকাশ ঘটায়।
বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর সময় কী কী মাথায় রাখবেন
অনেক সময় ব্রেস্টফিড করার সময় বাচ্চা ২-৩ মিনিট ‘সাক’ করার পরেই ঘুমিয়ে পড়ে। ডক্টর শান্তনু বললেন, মাথায় রাখতে হবে বাচ্চা যেন পুরোটা দুধ নিতে পারে। ব্রেস্টফিড করাতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগেই। এই সময় মায়ের স্তনবৃন্ত থেকে প্রথমবারে যে দুধ বের হয় তাকে বলে ‘ফোর-মিল্ক’, দ্বিতীয় বারে ‘হাই-মিল্ক’। মনে রাখতে হবে, এই ফোর-মিল্কে জল বেশি থাকে, প্রোটিন ও ফ্যাট কম থাকে। হাই-মিল্কে প্রোটিন, ফ্যাট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে। তাই বাচ্চা যদি শুধু ফোর-মিল্ক নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে প্রোটিন উপাদান তার শরীরে ঢুকবে না। বাচ্চার পেট ভরবে না। অনেক সময়ে মায়েরা বলেন, বুকের দুধ খাওয়ার পরেও বাচ্চার বৃদ্ধি সেভাবে হচ্ছে না। এর কারণই হল, মায়েরা সঠিক নিয়মটা জানেন না। যখন ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন, একবারে যাতে সবটা দুধ স্তনবৃন্ত থেকে শিশু ‘সাক’ করতে পারে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চার জন্য ফোর-মিল্ক ও হাই-মিল্ক দুটোই দরকার।
স্তনবৃন্ত নিয়ে অনেক সমস্যার কথা বলেন মায়েরা
ডক্টর সুদীপ ও ডক্টর শান্তনু বললেন, অনেকের স্তনবৃন্ত ফ্ল্যাট হয়, কারও আবার ইনভার্টেড হয়। সেক্ষেত্রে নিপল শিল্ড ব্যবহার করা হয় যাতে শিশু ভালভাবে ‘সাক’ করতে পারে। স্তনবৃন্ত থেকে শিশু যাতে সাক করতে পারে, সে জন্য প্রেগন্যান্সি পর্ব থেকে মাকে প্রস্তুতি নিতে হয়। তাছাড়া স্তনবৃন্ত নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। বাচ্চাকে খাওয়ানোর পরে তুলো জলে ভিজিয়ে ভাল করে মুছে নেবেন। মায়ের স্তনবৃন্ত ও শিশুর নাক যাতে এক লেভেলে থাকে, সেটা দেখা দরকার। অনেক সময় মায়েদের অসতর্কতায় শিশুর নাক চেপে যায়, এটা যেন না হয়।
বুকের দুধ আসছে না বলে জানান অনেক মায়েরা। ডক্টর সুদীপ বললেন, বাচ্চা একবার সাক করতে শুরু করলেই মিল্ক প্রোডাকশন হবে। যতবেশি বার মায়েরা স্তন্যপান করাবেন, ততই বেশি দুধ তৈরি হবে। তাই চিন্তা না করে স্তন্যপান করান, আর দুধ আসছে না এই ভাবনা মনে রাখাই ভাল। এতে স্ট্রেস তৈরি হয় যা শিশুর ক্ষতি করে।
দিনে কতবার ব্রেস্টফিড করাবেন মা?
ডাক্তারবাবুরা বলছেন আগে মনে করা হত এক ঘণ্টা বা ঘণ্টা দুয়েক অন্তর স্তন্যপান করানো ভাল। কিন্তু আসলে সবটাই নির্ভর করে বাচ্চার ওপরে। একে বলা হয় ‘ফিড অন ডিমান্ড’ । বাচ্চার যখন খিদে পাবে, স্তন্যপান করতে চাইবে, তখনই খাওয়াবেন মা। দিনে কম করেও ৮ থেকে ১০ বার ব্রেস্টফিড করানো ভাল।
ছ’মাস বয়স পর্যন্ত সমস্ত শিশুকে কেবলমাত্র বুকের দুধেই খাওয়ানো দরকার। এতে বাচ্চার শরীরে জল ও পুষ্টি উপাদানের চাহিদা একই সঙ্গে পূরণ হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোগ্রাম ওজনের জন্য ১০০ কিলোক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন হয়। আর মায়ের প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধে ৭০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। ডক্টর সুদীপ ও ডক্টর শান্তনু বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে স্তন্যপান করানো নিয়ে মায়েদেরও কিছু চিরাচরিত ধারণা থাকে। তাঁরা মনে করেন, শুধু বুকের দুধ খেয়ে শিশুর পেট ভরছে না। তাই বাচ্চাকে বুকের দুধ দেওয়ার আগে গ্লুকোজের জল, মিছরির জল, মধু বা গরুর দুধ ইত্যাদি দিতে শুরু করেন। জানা দরকার যে, সদ্যোজাত শিশুটি এসব খাবার পরিপাক করার মতো অবস্থায় থাকে না। ফলে বদহজমের হয়ে গিয়ে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে।
মায়ের বা শিশুর কোভিড হলে কি স্তন্যপান করানো যাবে না?
কোভিডের সঙ্গে স্তন্যপানের সম্পর্ক নেই। মায়ের যদি কোভিড ধরা পড়ে তাহলেও স্তন্যপান করাতে পারেন। কারণ বুকের দুধে ভাইরাস আসতে পারে না। তবে এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে অনেক বেশি নজর দিতে হবে মাকে। গরম জলে তুলো ভিজিয়ে স্তনবৃন্ত পরিষ্কার করে নিতে হবে প্রতিবার ব্রেস্টফিড করানোর আগে ও পরে। হাত ধুতে হবে, মাস্ক ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভাল। শিশুকে স্তন্যপান করানোর আগে নিজের হাত ভাল করে স্যানিটাইজ করে নিতে হবে। যদি তিন বা চার মাসের শিশুরও করোনা ধরা পড়ে, তাহলেও বুকের দুধ দিতে পারেন মা। ব্রেস্টফিড বন্ধ করা ঠিক হবে না।
মা কী কী ওষুধ খেলে ব্রেস্টফিড করাতে পারবেন না?
অনেকেই জানতে চান, মায়ের প্রেসার, সুগার, ডায়াবেটিস থাকলে স্তন্যপান করানো যাবে কিনা। ডক্টর সুদীপ বললেন, ডায়াবেটিস বা প্রেসার থাকলে স্তন্যপান করাতে কোনও সমস্যা নেই। এমনকি ক্যানসার হলে বা কেমোথেরাপি চললেও স্তন্যপান করাতে পারেন মা। তবে যদি মা মানসিক রোগে আক্রান্ত হন তাহলে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ স্তন্যপান করানোর সময় মা সচেতন থাকবেন না, ফলে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
ডক্টর শান্তনু বললেন, মা যদি হাইপার থাইরয়েডে আক্রান্ত হন ও ওষুধ খান, তাহলে স্তন্যপান করানো ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া মানসিক রোগের ওষুধ বা অ্যান্টিকনভালসান্ট ড্রাগ নিলে শিশুকে স্তন্যপান করানো যায় না। মায়ের যদি খিঁচুনি বা এই জাতীয় রোগ থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাছাড়া মা যদি মাতৃত্বকালীন বা প্রসব পরবর্তী অবসাদে ভোগেন যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে, ‘পোস্টপার্টাম ডিপ্রেসন’ বা “baby blues” , তাহলেও স্তন্যপান করানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
![Breast Milk Color: From Yellow to Blue to Pink, What It All Means]()
কর্মরতা মায়েরা কী করবেন?
সত্যজাত শিশুকে দিনে বারে বারে স্তন্যপান করাতেই হয়। তাই মায়েরা এই সময়টা যদি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকেন তাহলে খুব ভাল। না হলে কর্মস্থলের কাছেই ক্রেসের ব্যবস্থা থাকলে ভেবে দেখুন। এ ছাড়া উপায় হল বুকের দুধ বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখা। তার জন্য কিছু নিয়ম মানতে হবে।
- প্রথম তিন থেকে ছ’মাস রেফ্রিজারেটরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই বুকের দুধ সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব।
- ৬ মাসের পর থেকে ডিপ ফ্রিজারে ব্রেস্ট মিল্ক রাখাই ভাল। ৬-১২ মাস অবধি এই পদ্ধতিতে বুকের দুধ সংরক্ষণ করতে পারেন মায়েরা।
- পাম্প করার সময় খেয়াল রাখতে হবে কোনও অপচয় যাতে না হয়। কম করে ২ থেকে ৪ আউন্স দুধ পাম্প করে ফ্রিজে ঢোকানোই ভাল।
- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজারের একদম ভেতরে ব্রেস্ট মিল্কের বোতল বা ক্যান রাখা ভাল। দরজার একদম কাছে রেখে বার বার তাতে হাত দিলে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে।
- সদ্য পাম্প করে বের করা দুধ ঘরের তাপমাত্রায় ৬ ঘণ্টা অবধি ভাল থাকে। তারপর ডিপ ফ্রিজারে রাখাই ভাল। ২৪ ঘণ্টা অবধি ডিপ ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করে রাখা যেতে পারে। এর বেশি সময় না রাখাই ভাল।
- পাম্প করে রাখা দুধ কখনও ফোটাবেন না। ঘরের তাপমাত্রায় রেখে তবেই বাচ্চাকে খাওয়ান।
মায়েরা মন ভাল রাখুন, ধৈর্য হারাবেন না
এক জন মায়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার পর অনেক আশঙ্কা, ভয়, জিজ্ঞাসা দানা বাঁধে মনের মধ্যে। শরীরেরও খুব যত্ন নিতে হয় এই সময়। মনে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব চলতে থাকে। মায়েদের মনে এমন সংশয় হওয়া স্বাভাবিক যে, শিশুটি পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পাচ্ছে না বলে কাঁদছে। তার উপর বাড়ির লোকজনেরও এমন আশঙ্কা তৈরি হয়। কোনও ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই কিনে আনা হয় একটা কৌটোর দুধ ও ফিডিং বোতল। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বাচ্চা স্তনবৃন্ত থেকে টানতে পারছে না ভেবে ফিডিং বোতলে দুধ খাওয়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন মায়েরা। বাচ্চা যদি একবার বোতলের নিপল টানতে শুরু করে তাহলে মায়ের স্তনবৃন্ত চিনতেই পারবে না। এতে শিশুটিরই সমস্যা হবে। তাছাড়া নানাবিধ রোগও হতে পারে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, সদ্য মায়েরা ধৈর্য হারাবেন না। বুকের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হচ্ছে না এমন ধারণাই ভুল। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনও পদক্ষেপ নেবেন না। কৃত্রিম দুধ বা বিকল্প অথবা অন্য মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিপজ্জনক দিকগুলো সম্বন্ধেও ধারণা থাকা দরকার। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সবটা জেনে নিন। এক্ষেত্রে শিশুটির বাবারও ধারণা থাকা জরুরি।