
জন্মের পরেই জন্ডিস! ভোগে প্রি-ম্যাচিওর্ড শিশুরাও, ভয় নেই, সঠিক চিকিৎসা দরকার
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সদ্যই জন্ম হয়েছে। কিছুদিন পরেই জানা গেল সদ্যোজাত ফুটফুটে শিশুর জন্ডিস ধরা পড়েছে। ত্বকে হলদেটে ভাব। শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গও দুর্বল, সংবেদনশীল। ভয় পেয়ে যান বাবা-মায়েরা। ডাক্তাররা বলেন শিশুকে নীল আলোর নীচে রাখতে হবে যতক্ষণ না বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে যায়। জন্ডিস যাতে মস্তিষ্কে চলে না যায়, সে নিয়েও চিন্তা থাকে। স্বভাবতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। আর শিশুকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসার পরে যদি জন্ডিস ধরা পড়ে, তাহলে রোগের লক্ষণ চেনা থাকায় চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, সদ্যোজাত শিশুর জন্ডিস হতেই পারে। এতে ভয়ের কারণ নেই। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘নিওনেটাল জন্ডিস’ বা ‘ইনফ্যান্ট জন্ডিস’। শুধু রোগের লক্ষণ আগেভাগে চিনে চিকিৎসা করানো দরকার। আর সচেতনতা জরুরি। অনেক সময় প্রি-টার্ম ডেলিভারির ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। সেক্ষেত্রে রোগ বাড়াবাড়ি হলে অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তাররা। রক্ত বদলে দেওয়ার বা ট্রান্সফিউশনের দরকারও পড়ে।
কেন হয় নিওনেটাল জন্ডিস?
শিশু জন্মানোর পরে তার রক্তে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন বের হয়। গর্ভে থাকার সময় শিশু মায়ের ধমনী থেকেই অক্সিজেন পায়। সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের উৎস লোহিত রক্তকণিকা। কিন্তু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে তার নিজের ফুসফুস কাজ করা শুরু করে। তখন অতিরিক্ত লোহিত রক্তকণিকাগুলো ভাঙতে শুরু করে। এই বিলিরুবিনের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলেই জন্ডিস ধরা পড়ে। সদ্যোজাতের যকৃৎ পরিণত হয় না, তাই বিলিরুবিনের পরিমাণ বাড়লে তা বের করে দিতে পারে না। তখন ডাক্তারবাবুরা বলেন শিশু নিওনেটাল জন্ডিসে আক্রান্ত।
প্রি-টার্ম ডেলিভারির ক্ষেত্রে যদি ৩৮ সপ্তাহ আগেই শিশু জন্ম হয়, তাহলে ইনফ্যান্ট বা নিওনেটাল জন্ডিসের ঝুঁকি থেকে যায়। প্রি-ম্যাচিওর বেবির যকৃৎ অনেক বেশি দুর্বল থাকে। ফলে বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার মায়ের দুধ থেকেও জন্ডিস ছড়াতে পারে শিশুর শরীরে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ৬০ শতাংশ ফুল-টার্ম নিউবর্ন ও ৮০ শতাংশ প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের নিওনেটালের জন্ডিস ধরা পড়ে।
সদ্যোজাতের জন্ডিসের আরও কারণ থাকতে পারে। লিভার সংক্রমণ, শিশুর জিনগত রোগ সিস্টিক ফাইব্রোসিস থেকেও জন্ডিস হতে পারে। আবার মায়ের যদি হাইপোথাইরয়েডিজম থাকে বা মেটাবলিক ডিসঅর্ডার থাকে, তাহলে তার থেকেও জন্ডিস হতে পারে শিশুর। মায়ের শরীরে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ ধরাপড়লে তার থেকেও শিশুর জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায। বিশেষত শিশু গর্ভে থাকাকালীন মায়ের যদি রুবেলা, সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ হয়, তাহলেও ঝুঁকি থাকে। সেক্ষেত্রে শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বা কত পরে জন্ডিস ধরা পড়েছে, শিশুর ওজন কত ইত্যাদি দেখে চিকিৎসা শুরু করতে হয়।
রোগ চিনবেন কীভাবে?
শিশুর ত্বকে হলদেটে আভা, চোখে হলুদের ভাব দেখলেই সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় জন্মের পরে শিশুর শরীর লালচে থাকে, তখন চোখের রঙ দেখে জন্ডিস চিনতে হবে। তাছাড়া, সদ্যোজাতের ঘুম কম হলে, ব্রেস্ট ফিড করতে সমস্যা হলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে সঙ্গে সঙ্গেই। সাধারণত জন্মের ৭২ ঘণ্টা পর থেকে জন্ডিস কমতে থাকে অনেক শিশুর। তা না হলেই চিন্তার কারণ। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অত্যধিক বেশি বা হাইপারবিলিরুবিনেমিয়া থেকে ‘ক্রনিক বিলিরুবিন এনসেফেলোপ্যাথি’ হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে ততটাই ভাল।
দ্রুত চিকিৎসা দরকার
নিওনেটাল জন্ডিস সারানো হয় মূলত ফোটোথেরাপি দিয়ে। নীল রঙের আলোর নীচে রাখা হয শিশুকে। আলট্রাভায়োলেট লাইট নয়, নির্দিষ্ট ফ্রিকুয়েন্সির নীল আলোর নীচে শিশুকে শুইয়ে দেওয়া হয়। মাথার ওপর নীল আলোর ল্যাম্পও রাখা হয়। শিশুকে যেখানে শোওয়ানো হয় তার নীচে বিলিব্ল্যাঙ্কেট রাখেন ডাক্তাররা। ত্বকের সংস্পর্শে থাকে এই ব্ল্যাঙ্কেট। রক্তের অতিরিক্ত বিলিরুবিন কমানোর জন্যই এই পদ্ধতি।
রোগের বাড়াবাড়ি হলেবা বিলিরুবিনের পরিমাণ সেরামে বেড়ে গেলে তখন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন করতে হয়। তবে সেটা শিশুর ওজন, শারীরিক অবস্থা দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তাররা।