
দু’ মাসের শিশুর ছানি অপারেশন করে দৃষ্টি ফেরাল কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতাল
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দু’চোখের দৃষ্টিই ঝাপসা হয়ে এসেছিল মাস দুয়েকের শিশুটির। পরীক্ষা করে দেখা যায়, শিশুটির দুই চোখ কনজেনিটাল টোটাল ক্যাটারাক্টে আক্রান্ত। এর অর্থ হল, দুই চোখে ছানি নিয়েই জন্মেছে শিশুটি। অস্ত্রোপচার না করলে পুরোপুরি দৃষ্টিহীন হয়ে যাবে। একে মাস দুয়েকের শিশু, তার ওপরে ক্যাটারাক্ট সার্জারির মতো অস্ত্রোপচার, সব নিয়েই চিন্তায় ছিলেন ডাক্তাররা। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেন কলকাতার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট অপথ্যালমোলজিস্ট (পেডিয়াট্রিক)ডক্টর দেবব্রত হালদার। বাচ্চাটি এখন সুস্থ, দু’চোখের স্বচ্ছ দৃষ্টিও ফিরে পেয়েছে।
ক্যাটারাক্ট বা ছানি কী? শিশুদের ছানি পরার কারণ কী?
চোখের লেন্সের স্বচ্ছতা কমে আসেই হল ছানি। সহজ করে বললেন, ছানি হচ্ছে অনেকটা ক্যামেরার সেই লেন্সের মতো যাতে ধুলো ময়লা জমে নিখুঁত ছবি তোলায় বিঘ্ন ঘটায়। তখন লেন্স পরিষ্কার করে বা বদলে ফেলে ক্যামেরা কার্যকরী করা হয়। ছানিও তেমন চোখের লেন্সের অস্বচ্ছতা।
কর্নিয়া ও আইরিসের পিছনে থাকা স্বচ্ছ লেন্স বিভিন্ন কারণে অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে। বার্ধক্যজনিত কারণ বা আঘাত লাগা অথবা নানারকম রোগের কারণে চোখের লেন্সের ওপর প্রোটিন জমে গিয়ে ক্লাউডিং বা ঝাপসা ভাব তৈরি হয়। ফলে আলোকরশ্মি সরাসরি রেটিনায় গিয়ে পড়তে পারে না। আগে মনে করা হত শুধু বয়স্কদেরই ছানি পড়ে, কিন্তু এই ছানি পড়ার সমস্যা এখন যে কোনও বয়সেই হতে পারে। অতি বিরল হলেও শিশুবয়সেও এই রোগ দেখা যেতে পারে। তখন একে বলে কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট বা জন্মগত ছানি। যেহেতু রোগটি খুবই স্বাভাবিক এবং সকলেরই হয়, সেই কারণে চিকিৎসা না করালে কিন্তু এটিকেই অন্ধত্বের সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
এই রোগের লক্ষণগুলো হল, দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে আসা, ঠিক চশমা পরেও ভিশনের সমস্যা, ঝাপসা বা কুয়াশাচ্ছন্ন দৃষ্টি, কখনও কখনও একটা জিনিসকে দুটো দেখা অর্থাৎ ডবল ভিশন, রঙ চিনতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
শিশুদের ছানি হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কনজেনিটাল ক্যাটারাক্টের ক্ষেত্রে মায়ের গর্ভে থাকার সময়েই লেন্সের ওপর প্রোটিন জমে ক্লাউডিং হতে পারে। গর্ভাবস্থায় মা যদি কোনও রোগে আক্রান্ত হয়, ভাইরাস জনিত সংক্রমণ থাকে তাহলে শিশুর চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। তাছাড়া মা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খেলে, বংশগত রোগ বা মেডিবলিক ডিজিজ ডায়াবেটিস, গ্যালাকটোসেমিয়া বা জিনগত রোগ থাকলে শিশুর কনজেনিটাল ক্যাটারাক্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
![Cataract surgery for infants and children - Mayo Clinic]()
দু’মাসের শিশুর ছানি অপারেশন ছিল চ্যালেঞ্জ
ডক্টর দেবব্রত হালদার বলছেন, তিন থেকে চার বছর বয়স হলে ক্যাটারাক্ট সার্জারি করা যায়। কিন্তু একদম ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে এই সার্জারি রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং। মাস দুয়েকের শিশুটির পায়ু, মলদ্বার ও মূত্রনালীর সংযোগকারী ফিসচুলা ছিল না, হার্টেরও কিছু সমস্যা ছিল। তাই অ্যানাস্থেশিয়া করাও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সার্জারি না করলে শিশুটি একটা সময় পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলত।
শিশুদের ছানি বোঝার কিছু লক্ষণ আছে যা এই বাচ্চাটির ক্ষেত্রেও দেখা যায়। চোখের মনির ভেতরে ছোট্ট একটা গোল অংশ আছে যাকে বলে পিউপিল। ছানি পড়লে এই পিউপিলের ভেতরটা সাদা দেখায়। তাছাড়া ভিশন ফিক্সেশনেরও সমস্যা হয়। ভিশন ফিক্সেশন মানে হল দুই চোখে দৃষ্টি স্থির রাখা। কোনও কিছু দেখতে হলে একসঙ্গে দু’চোখ দিয়েই দেখা। ডক্টর দেবব্রত বলছেন, শিশুটির অস্ত্রোপচার এক ঘণ্টা ধরে করা হয়। এখন দুটি চোখেই দৃষ্টি ফিরেছে বাচ্চাটির।

অস্ত্রোপচার না করলে কী হত?
অ্যাপোলো মেডিক্যাল সেন্টারের কনসালট্যান্ট অপথ্যালমোলজিস্ট ডক্টর সিদ্ধার্থ ঘোষ বলেছেন, জন্মের প্রথম তিন বছরে আমরা দেখা শিখি। তিন থেকে ছ’বছরে চোখ ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হয়। চোখে যা দেখি তাই বার্তা যায় মস্তিষ্কে। এবং মস্তিষ্ক সঙ্কেত এলেই আমরা কী দেখছি সেটা বুঝতে পারি। তাই এই সময়ের মধ্যে যদি দৃষ্টিতে সমস্যা থাকে এবং তার সঠিক চিকিৎসা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে। ৬ বছর পেরিয়ে গেলে আর মস্তিষ্ক ও চোখের মধ্যে সেই যোগাযোগটাই তৈরি হয় না। এই কারণের জন্যই মাস দুয়েকের শিশুটির চোখে অস্ত্রোপচার করারই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদি সময়মতো চিকিৎসা না হত তাহলে শিশুটি অ্যামব্লায়োপিয়া বা স্থায়ী দৃষ্টিহীনতার শিকার হত।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বাচ্চাটিকে এখন চশমা পরানো হবে। তিন থেকে চার বছর বয়স হলে অপথ্যালমোলজিস্টের কাছে পরীক্ষা করিয়ে সঠিক পাওয়ার দেওয়া হবে।