সন্তান প্রায়ই বলছে মন ভাল নেই, ব্যবহারে বদল আসছে, বাবা-মায়েরা কী করে সামলাবেন

গুড হেলথ ডেস্ক

আপনার বাচ্চা কি প্রায়ই বলে মন ভাল নেই? মন খারাপ করে বসে থাকে বেশিরভাগ সময়ে? মিশতে চায় না, খেলাধূলাতেও আগ্রহ কমছে, পড়াশোনাতেও অমনোযোগী (Child Mental Health )? যদি আপনার বাচ্চার ব্যবহারে এমন সব বদল লক্ষ্য করেন যা আগে কখনও হয়নি, তাহলে সতর্ক হতে হবে বাবা-মায়েদের।

১০ বছরের রিয়া সবসময়েই বলত মন খারাপ। ঘরে বেশিটা সময়ে একাই থাকত। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যেতে চাইত না। দিন দিন অবাধ্য হচ্ছিল, মেজাজও খিটখিটে হয়ে যাচ্ছিল। বাচ্চা দুষ্টুমি করছে ভেবে আমল দেননি মা। কিন্তু পরে দেখা যায়, মেয়ে অ্যাকিউট ডিপ্রেশনের শিকার (Child Mental Health )। মনোবিদের কাছে যখন নিয়ে যাওয়া হয় অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে।

 depression in kids

মনোবিদেরা বলছেন, আগে ডিপ্রেশন, মেন্টাল স্ট্রেস এইসব ভারী শব্দগুলোর সঙ্গে মানুষ অতটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু ইদানীংকালে ছোট বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তার কারণ অনেক– ১) এখনকার সময়ে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে, স্কুলে ও বাড়িতে সমানতালেই চাপ বাড়ছে বাচ্চাদের। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্ট্রেস।

ভারতে ৮০% স্কুল পড়ুয়া পরীক্ষার আতঙ্কে ভুগছে, স্ট্রেস-অবসাদ বাড়ছে: এনসিইআরটি

Parent Child Relationship

২) আগে বাচ্চারা অনেক বেশি খেলাধূলা করত, কিন্তু এখন স্কুলের বাইরে একস্ট্রাকারিকুলার অ্যাক্টিভিটি এতটাই বেশি করতে হয় যে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধূলার সময় নেই। ফলে বাচ্চাদের মধ্যেও একাকীত্ব বাড়ছে।

৩) এখন বাচ্চারা অনেক বেশি ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত। সারাদিন ল্যাপটপ, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকায় প্রাপ্তবয়স্কদের অনেক ব্যাপার তাদের নখদর্পনে (Child Mental Health )। ফলে কম বয়স থেকেই এমন অনেক বিষয় জেনে যাচ্ছে বাচ্চারা যা তাদের জানার কথাই নয়।

৪) করোনার এই দু’বছরে অন্দরবাসে থাকাটা বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।

৫) খাদ্যাভ্যাসেও বদল আসছে। যখন তখন খাওয়া, অপুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ঝোঁকে ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের। ফলে তাদের শরীরের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ব্রেনের পুষ্টিতেও খামতি থেকে যাচ্ছে।

Children's Mental Health

বাচ্চার মন বুঝতে কী করবেন বাবা-মায়েরা

১) বাচ্চার ব্যবহারে সামান্য বদল দেখলেই সতর্ক হন। কথা বলুন, তাদের মন বোঝার চেষ্টা করুন। সামান্য ভুল, অবহেলাই পরে বড় বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

২) বাবা-মায়েরা অনেক সময়েই বাচ্চাকে একসঙ্গে অনেক কিছু শেখাতে চান (Child Mental Health )। তা থেকেও কিন্তু এই সমস্যা মাথাচাড়া দিতে পারে। কারণ, আপনি যে যে বিষয়গুলি ওকে শিখতে বলছেন, সেগুলির প্রতি ওর হয়তো কোনও আগ্রহই নেই। এটা খেয়াল রাখুন।

৩) দিনের শুরুতেই ওদের নিয়ে বসুন। ওদের কাছ থেকে শুনুন কীভাবে ওরা দিনটা কাটাতে চায়। তারপর এক সঙ্গে বসে একটা রুটিন বানান। যার মধ্যে অবশ্যই পড়াশোনা, খেলাধুলো, গল্প আড্ডার একটা ভারসাম্য থাকবে।

৪) প্রতিদিন নিয়ম করে বিকেলে ওদের একটু বাইরে বা বাড়ির ছাদে নিয়ে যান। যদি কেউ সাইক্লিং করতে চায়, বাধা দেবেন না। অন্য বাচ্চারা যদি রাজি হয় খেলাধুলো করতে, অবশ্যই অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে তারা খেলতেই পারে।

 child's mental health

৫) পড়ানোর সময় বাচ্চাকে বকাবকি করবেন না। মনোযোগের সমস্যা থাকলে বাচ্চাকে বকুনি দেবেন না। সমস্যা কমাতে বাচ্চার সঙ্গে আপনিও সেই বিষয়টি শেখার জন্য বসুন, এতে বাচ্চার আগ্রহ বাড়বে।

৬) অনেক বাবা-মা বাচ্চার প্রশংসা করতে জানেন না। তাঁরা ভাবেন ভাল বললে বাচ্চা বিগড়ে যাবে। এমনটা না করাই ভাল। আর ভুলেও অন্য বাচ্চার সঙ্গে সবসময়ে তুলনা টানবেন না। এতে বাচ্চাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়।

৭) বাচ্চাকে বোঝান, বাবা-মা সব সময়ে নিঃশর্ত ভালবাসা দেবেন (Child Mental Health )। ভাল বা খারাপ পরীক্ষার ফলের সঙ্গে ভালবাসার তারতম্য হবে না। আপনি পাশে রয়েছেন এটা ওদের বোঝান। তাহলেই বাচ্চা জানবে বাড়ির পরিবেশ নিরাপদ।

৮) কোনও নেতিবাচক মন্তব্য, খারাপ কথা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি বাচ্চাদের সামনে না করাই ভাল। বাচ্চারা সবটাই চট করে শিখে নেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমস্যা থাকলে বাচ্চার সামনে কখনও ঝগড়া-অশান্তি করবেন না। পরিবারের কোনও ঝামেলা বাচ্চাকে বুঝতেই দেবেন না। এটা ওদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।

৯)  প্রতিদিন অন্তত এক পাতা করে গল্পের বই পড়ার একটা অভ্যাস তৈরি। মোবাইল গেম, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সরিয়ে ছবি আঁকতে দিন। প্রতিদিন একটা করে নতুন অভিজ্ঞতা লিখতে বলুন। এতে যেমন ওদের মানসিক বিকাশ হবে, তেমনই মেধাও বাড়বে।

১০) চেষ্টা করুন ওদের সঙ্গে প্রকৃতির একটা সহজ সম্পর্ক তৈরি করে দিতে। বাড়িতে গাছপালা যা আছে সেগুলির যত্ন করতে শেখান। পোষ্য থাকলে তার খেয়াল রাখা শেখান।

১১) সারাক্ষণ টিভি দেখা বা মোবাইলে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে, বাচ্চাকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলতে পাঠান। ভিডিও কলে বন্ধুদের সঙ্গে বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে দিন। এতে বাচ্চার একাকীত্ব কাটবে, মানসিক চাপও হবে না কখনও।

১২) বাচ্চাদের জন্য অনেক রকম ইনডোর গেম পাওয়া যায় যা মেধা বাড়াতে সাহায্য করে। বাচ্চা যদি বলে মন ভাল নেই তাহলে এই ধরনের গেম খেলা শেখান। দেখবেন, কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্চা নিজেই এমন ধরনের ব্রেন-গেম খেলার অভ্যাস করে ফেলবে।