
শহরে স্বচ্ছল পরিবারেও অপুষ্টির শিকার শিশুরা, পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে কী কী ঘাটতি হচ্ছে?
গুড হেলথ ডেস্ক
সন্তান সত্যিই ঠিকঠাক বাড়ছে তো? ঠিক মতো পুষ্টি পাচ্ছে তো? পেট ভরে তো খাবারই খায় না, ওজনও বাড়ছে না, হাইট কেন কম, আজকের দিনে মায়েদের নানা প্রশ্ন। সেডেন্টারি লাইফস্টাইলে নিজের পেশা সামলে সন্তানকে বড় করে তোলা অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং (child malnutrition)। তার পর ছেলেমেয়ে ঠিকমতো খাবার না খেলে, রোগে ভুগলে চিন্তা আরও বাড়ে। সেই সঙ্গেই স্কুলে পাহাড়-প্রমাণ পড়াশোনার চাপ। সেইসব সামলে আবার একস্ট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির ঝক্কি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছু খিচুড়ি পাকিয়ে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে যেন কোনও খামতি না হয়। সঠিক ডায়েট, নির্দিষ্ট সময় খাওয়া, শিশু অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে কিনা, কোনও রোগ ভেতরে ভেতরে বাসা বাঁধছে কিনা এইসব দেখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই।
গ্রামীণ পিছিয়ে পড়া এলাকা ও শহুরে বস্তিতেই অপুষ্টির ছবি দেখতে আমরা অভ্যস্ত। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শহরের সচ্ছল পরিবারের অনেক শিশুই অপুষ্টির (child malnutrition) শিকার। আমাদের দেশে অতিরিক্ত ওজনজনিত অপুষ্টি তেমন গুরুতর সমস্যা না হলেও সংখ্যাটা ক্রমবর্ধমান। ‘জাঙ্ক ফুড’ খাওয়ার প্রবণতা ও প্যাকেটজাত খাবার বা অন্য ফাস্টফুডের বাজার এখন শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে গেছে। তাই শিশুদের অপুষ্টির হার ক্রমেই বাড়ছে।
কী কী কারণে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুরা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একগাদা খাবার খাওয়ালেই যে পুষ্টি হবে তেমনটা নয়। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শিশু অপুষ্টির শিকার। গ্রাম ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে অপুষ্টির কারণে পাঁচ বছরের বয়সের শিশুর বৃদ্ধিও থমকে যায়। সেখানে অপুষ্টির (child malnutrition) বড় কারণ অভাব ও দারিদ্র। কিন্তু শহরগুলিতেও অনেক শিশু অপুষ্টির শিকার। তার কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোন বয়সের শিশুকে কতটা খাবার খাওয়াতে হবে তার সঠিক ধারণা নেই অনেকেরই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাচ্চা বলে প্রয়োজনের অনেক কম খাবার খাওয়াচ্ছেন মা। দুটো মিলের মধ্যে সময়ের ফারাক থাকছে অনেক। আবার এমনও দেখা গেছে, খুব সময়ের ব্যবধানে বারে বারেই একগাদা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে শিশুকে। যার ফলে হজমে সমস্যা হচ্ছে, বমি করছে শিশু, কম বয়সেই গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর বিকাশ (child malnutrition) ঠিকমতো না হওয়ার এগুলিও অন্যতম কারণ। অনেক শইশুরই দুধ সহ্য হয় না। তার জন্য বিকল্প উপায় আছে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতোই ডায়েট ঠিক করা উচিত।
খাবার খেতে সমস্যা হয় অনেক শিশুর। মুখে খাবার নিয়ে বসে থাকতে দেখলে মায়ের রাগারাগি করেন। কিন্তু যদি একটানা এই সমস্যা হতে থাকে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ওরাল সেনসিটিভিটি একটা বড় কারণ। তাছাড়া স্নায়বিক সমস্যাও থাকতে পারে। বাইরে থেকে বোঝা যায় না। শিশু যদি সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত হয় তাহলেও বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়ে।
অনেক বাচ্চারাই (child malnutrition) খাবার খাওয়ার পরে বমি করে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। দুষ্টুমি করছে ভেবে বকাবকি না করে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপারটা বোঝা উচিত বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে শরীরে অস্বস্তি হতে থাকে। খাবার খেলেই গা গুলিয়ে ওঠে। তাই বমি করে দেয় বাচ্চারা। খাবার ঠিকমতো পাকস্থলীতে না গেলে পুষ্টিও হয় না। অ্যাসিড রিফ্লাক্স খুবই সাধারণ সমস্যা এবং বিভিন্ন সময় প্রায় সকলেই এই কমবেশি এই সমস্যায় ভুগে থাকে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স হওয়ার ফলে যে প্রদাহ ও অস্বস্তি তৈরি হয় তার থেকে খাদ্যনালী বা ইসোফেগাস সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এর ফলে গলায় অস্বস্তি, বমি ভাব, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্টর মতো সমস্যা দেখা দেয়। গলার কাছে কিছু আটকে থাকার মতো অনুভূতি হতে থাকে। বাচ্চাদের যদি এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে সাবধান হতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিক না হলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি দুই থমকে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই রোগের নাম কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম বা সি এইচ। থাইরয়েডের সমস্যা পরবর্তী সময়েও হতে পারে। গলা ফুলে যাওয়া বা ওজন বেড়ে যাওয়া এর উপসর্গ হতে পারে। তাই শিশুদের নিয়ম করে রুটিন চেক আপ করানো প্রয়োজন।