
গর্ভে বাড়ছে আপনার সন্তান, কবে থেকে শুনতে পাবেন তার হার্টবিট? কীভাবে খেয়াল রাখবেন ছোট্ট হৃদয়ের
গুড হেলথ ডেস্ক
গর্ভে যখন একটু একটু করে পরিণত হতে শুরু করে ভ্রূণ, তখনই তার বুকের ধুকপুকুনি শোনা যেতে থাকে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, গর্ভধারণ করার ২২ থেকে ২৪ দিনের মাথায় গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্টের (Fetus Heartbeat) ছন্দ ধীরে ধীরে টের পাওয়া যায়। অবশ্য প্রথমদিকে তা অত্যন্ত ক্ষীণ থাকে, পরে হার্টবিট বাড়ে।
গর্ভাবস্থার ৮ সপ্তাহ নাগাদ যদি আলট্রাসাউন্ড করা হয়, তাহলে শিশুর হার্টবিট ভালভাবে বোঝা যায়। ১০ সপ্তাহ পরে পরীক্ষা করলে আরও কিছুটা স্পষ্ট ধুকপুক (Fetus Heartbeat) শব্দ শোনা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারের তুলনায় তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে হার্টবিট অনেকটা স্থিতিশীল থাকে।
গর্ভস্থ শিশুর হার্টরেট কেমন হয়?
গর্ভাবস্থার ৫ সপ্তাহ, হার্টরেট ৮০-১০৩ BPM (beats per minute)।
গর্ভাবস্থার ৬ সপ্তাহ, হার্টরেট ১০৩-১২৬ BPM
গর্ভাবস্থার ৭ সপ্তাহ, হার্টরেট ১২৬-১৪৯ BPM
গর্ভাবস্থার ৮ সপ্তাহ, হার্টরেট ১৪৯-১৭২ BPM
গর্ভাবস্থার ৯ সপ্তাহ, হার্টরেট ১৫৫-১৯৫ গড়ে ১৭৫ BPM
গর্ভাবস্থার ১২ সপ্তাহ, হার্টরেট ১২০-১৮০ গড়ে ১৫০ BPM
১২ সপ্তাহের পরে ১২০-১৬০, গড়ে ১৪০ BPM
ফুল টার্ম প্রেগন্যান্সিতে প্রসবের সময় বাচ্চার হার্টবিট (Fetus Heartbeat) থাকে ১৪০ bpm এর কাছাকাছি আর প্রি-টার্ম প্রেগন্যান্সিতে তা হতে পারে ১৫৫ bpm এর কাছাকাছি। বাচ্চার হার্ট বিট কত ভালভাবে বোঝা যা যাচ্ছে তা নির্ভর করে বাচ্চার অবস্থান, প্ল্যাসেন্টার অবস্থান এবং মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপরে। সাধারণত বাচ্চার হার্ট রেট ১১০-১৬০ এর মধ্যে থাকলে তাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।
সাধারণত গর্ভাবস্থার ৬ থেকে ৯ সপ্তাহের আলট্রাসাউন্ডে বাচ্চার হার্টবিট পরীক্ষা করা হয়। জন্মের আগে ‘ফিটাল ইকো কার্ডিওগ্রাফি’ করানো হয়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে বোঝা সম্ভব যে, গর্ভস্থ ভ্রুণের কোনও হার্টের সমস্যা রয়েছে কি না।
গর্ভস্থ শিশুর হার্টের যত্ন নেবেন কী করে?
১) গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরাই ভাবেন অতিরিক্ত খেলে সন্তান ভাল থাকবে। ছোট্ট ভ্রূণের এত খাবার লাগে না। অতিরিক্ত খাবারের সবটাই গিয়ে হবু মায়ের ওজন বাড়ায়, বাড়ে ডায়াবেটিস, প্রেশার। কাজেই প্রথম তিন মাস পুষ্টিকর খাবার খান, আগের মাপেই। তিন মাস পর থেকে মাত্র ২৫০–৩০০ ক্যালোরি বেশি খেতে হবে।
২) প্রেগন্যান্সি পিরিয়ডে কোনও রকম জাঙ্ক ফুড, কোল্ড ড্রিঙ্কস, অ্য়ালকোহল খাওয়া চলবে না। ধূমপান গর্ভস্থ ভ্রূণের কাছে বিষের মতো। সিগারেট সহ সবরকম নেশা ছেড়ে দিতে হবে।
৩) অম্বল–বদহজম–কোষ্ঠকাঠিন্য, যাই হোক না কেন, ওষুধ খান চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।
৪) পর্যাপ্ত ঘুমোতেই হবে। অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। একদিন ঘুম কম হলে, সপ্তাহের শেষে অনেকটা ঘুমিয়ে শরীরের ঘুম পুষিয়ে নিন।
৫) দিনে আধ ঘণ্টা অন্তত হালকা ব্যায়াম— যেমন জোর–কদমে হাঁটা, যোগা ইত্যাদি না করলে ওজন বেড়ে ডায়াবেটিস বা হাই প্রেশার হতে পারে। তবে প্রেগন্যান্সিতে কী ধরনের ব্যায়াম বা যোগা আপনার শরীরের জন্য ভাল তা বিশেষজ্ঞের থেকে জেনে নিতে হবে।
৬) মিষ্টি খেতে ইচ্ছে হলে কিসমিস, খেজুর, ফল দিয়ে স্যালাড আর নোনতা খাওয়ার ইচ্ছে হলে বাদাম, কাজু, পেস্তা খান। ভাজাভুজি খাওয়া একদম চলবে না।
৭) মন ঠিক রাখতেই হবে. অতিরিক্ত স্ট্রেস, টেনশন বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। বেশি ভাবনাচিন্তা করবেন না, নিজের পছন্দের কাজ করুন। নিয়মিত মেডিটেশন করলে স্ট্রেস কমবে।