
এখন ভারতের প্রায় সব রাজ্যের ছবিটাই এ রকম। দৃষ্টিজনিত সমস্যা ভুগছে দেশের একটা বড় অংশ। যার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস (diabetes eye problems)।
স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তে বেশি শর্করা বা সুগার থাকলে তাকে বলা হয় ডায়াবিটিস মেলাইটাস বা সংক্ষেপে ডায়াবিটিস। আমাদের দেশে অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ এই রোগের শিকার। সেডেন্টারি লাইফস্টাইল, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ওবেসিটির হাত ধরে যে সব রোগের আক্রমণ আমাদের জীবনে ভয়াল রূপে নেমে আসছে তার মধ্যে অন্যতম ডায়াবিটিস। বর্তমানে এই অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বিশ্বে প্রায় ৪৩ কোটি। দিন দিন এই রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ এই অসুখে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৫১ কোটিরও বেশি।
ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতাই নেই দেশের অধিকাংশ জায়গায়
ইনসুলিনের সরবরাহের অভাব, উপযুক্ত চিকিৎসা ও সচেতনতার ঘাটতি ডায়াবেটিসের ডালপালা মেলার অন্যতম কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিসের ফলে যেমন শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি এর গুরুতর প্রভাব পড়ে চোখেও। চোখের ভিতর রেটিনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডায়াবেটিসের কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষ চোখের সমস্যায় জেরবার। তার মধ্যে মেট্রো শহর যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে শহরতলি থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম। উন্নত শহরগুলিতে চক্ষু বিশেষজ্ঞের অভাব নেই, তবে প্রত্যন্ত এলাকায় উপযুক্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব এবং সর্বোপরি চক্ষু বিশেষজ্ঞদের ঘাটতি দৃষ্টিজনিত সমস্যাকে প্রায় দ্বিগুণ করেছে।
সমীক্ষা বলছে, ভারতে প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ অন্ধত্বের শিকার (diabetes eye problems)। আর এই অন্ধত্বের অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস। দুঃখের বিষয়ে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশ চোখের রোগ চিকিৎসা সেরে যাওয়া সম্ভব, অথচ সেই সঠিক চিকিৎসারই অভাব রয়েছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে।
ক্যাটারাক্ট জনিত কারণে অন্ধত্বের শিকার প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ। ভারতে ২০-৫৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই মূলত ডায়াবেটিসের কারণে অন্ধত্ব বা দৃষ্টির সমস্যা দেখা যাচ্ছে।
ডায়াবেটিসে কী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখ?
ডায়াবেটিস মূলত দু’রকমের। টাইপ ওয়ান ও টাইপ টু ডায়াবেটিস। টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস প্রধানত কম বয়সীদের হয়। বিভিন্ন কারণে অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামক হরমোনটি নির্গত হয় না। এই অবস্থায় ইনসুলিনের অভাব পূরণে ইঞ্জেকশন দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। মোটামুটিভাবে সব ডায়াবিটিস রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশ রোগী এই ধরনের ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হন।
ভারতে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি। সাধারণত, বর্ধিত ওজন (বডি মাস্ক ইনডেক্স BMI) অনেক বেশি, পরিশ্রম বিমুখ জীবনযাত্রা এই রোগের কারণ, তা ছাড়া জিনগত রোগ বা বংশানুক্রমিক কারণেও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
এখন দেখা যাক, চোখে কী ভাবে প্রভাব ফেলে ডায়াবেটিস (diabetes eye problems)। রেটিনা হল চোখের ভিতরের সবচেয়ে সূক্ষ অংশ। রেটিনার মাঝে থাকে ম্যাকুলা ল্যুটিয়া নামে সংবেদনকারী পর্দা। রেটিনার বাইরের অংশে নিজের রক্ত সরবরাহ নেই। কিন্তু ভিতরের অংশে নিজের রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। আশঙ্কার কথা হল, টাইপ ওয়ান এবং টাইপ টু—দুই ধরনের ডায়াবিটিসেই রেটিনার উপর খারাপ প্রভাব পড়ে।
সমীক্ষা বলছে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার দশ বছরের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ টাইপ ওয়ান রোগী এবং ২৫ শতাংশ টাইপ টু রোগী রেটিনার অসুখে ভুগতে শুরু করেন। একই ভাবে ধীরে ধীরে ৯০ শতাংশ টাইপ ওয়ান ও ৬০ শতাংশ টাইপ টু রোগী এবং পরবর্তীতে দুই ধরনের ডায়াবেটিসেরই প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগী রেটিনার অসুখে আক্রান্ত হন। ১২ বছর বয়সের পর যত কম বয়সে ডায়াবেটিস হবে রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ার তিন বছর পর থেকে এবং টাইপ টু ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের সময় থেকেই রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। যদি রেটিনোপ্যাথি না থাকে তবে প্রতি বছর, আর যদি থেকে থাকে তা হলে চক্ষু বিশেষজ্ঞ যেমন বলবেন তেমন দেখাতে হবে।