
ডায়াবেটিস মানেই সব খাওয়া বন্ধ নয়, কী কী খাবেন আর কী কী বাদ দেবেন
গুড হেলথ ডেস্ক
মিষ্টি খেও না, মিষ্টি বেশি খেলে ডায়াবেটিস (World Diabetes Day) হবে, ছোটবেলা থেকে আমরা এটাই শুনে আসছি। তাই অনেকেই ডায়াবেটিস হবে এই ভয়ে মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দেন। তবে মিষ্টি খেলেই ডায়াবিটিস হবে বা সুগার বেড়ে যাবে এই ধারণা ভুল। বর্তমানে অসংখ্য মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে। এই রোগকে তো সাইলেন্ট প্রোগ্রেসিভ ডিসঅর্ডারও বলেন ডাক্তারবাবুরা। শুধুমাত্র শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখে ডায়াবেটিস আগাম ধরতে পারা খুব মুশকিল। কিছু লক্ষণ দেখে সতর্ক হতেই হয়। ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ৯০–৯৫ শতাংশেরও বেশি ভোগেন টাইপ ২ ডায়াবিটিসে। বিভিন্ন ওষুধেও যখন নিয়ন্ত্রণে থাকে না রক্তের শর্করার মাত্রা, তখনই চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন ইনসুলিন নিতে শুরু করার।
শুধু ইনসুলিন নিলেই হয় না, ডায়াবেটিসে খাওয়াদাওয়ার দিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চলা যায়, তাহলে সারাজীবন ইনসুলিনের বোঝা বইতে হয় না। ডায়াবেটিস মানেই সবকিছু বাদ দিতে হবে এমনটা নয়। ডায়াবেটিসে কী কী খাওয়া যায়, আর কী কী নয়, সে নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। আর এখন ইন্টারনেট ঘেঁটে এবং নানা বিজ্ঞাপনী চমকে ভুলে মানুষজন আরও বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তাই আজ বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে (World Diabetes Day) জেনে নেওয়া যাক, কেমন হবে আপনার ডায়েট চার্ট।
কী কী খাবেন না
কার্বোহাইড্রেট একেবারেই বাদ তা নয়। তবে ফাস্ট ফুড, ভাজা খাবার, মিষ্টি খাবার কিংবা অতিরিক্ত নুন রয়েছে যে খাবারে সেখান থেকেই অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করে শরীর। আর তাই এই সব খাবার একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে।
ডায়াবেটিসের রোগীদের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ কমাতে হবে। যে সব খাবারের মধ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি যেমন মাখন, ঘি, দুধ, রেড মিট এসব এড়িয়ে চলতে হবে।
চিনি শরীরের জন্য বিষ। কোল্ড ড্রিঙ্কস, রাস্তায় তৈরি জুস, শেক, ভাজা মিষ্টি একেবারেই বাদ দিন।
অতিরিক্ত নুন আমাদের একাধিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সুগার তো বাড়েই সঙ্গে বাড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি। তাই নুন খাওয়া কামেত হবে।
অ্যালকোহল আর ইনসুলিন একসঙ্গে শরীরে ঢুকলে সাঙ্ঘাতিক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ডায়াবেটিসের রোগীদের অ্যালকোহল একেবারেই বাদ দিতে হবে। শুরুতে না পারলে কম করে খান, মাসে একবার খান। ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন।
কী কী খেতে পারবেন?
প্রথমেই আসা যাক ভাত বা রুটির কথায়। অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিস হলে ভাত বা রুটি খাওয়া যায় না। এই ধারণা ভুল, ডায়াবেটিস হলে সুনির্দিষ্ট ডায়েট ফলো করা উচিত, কিন্তু ভাত রুটি সব দুম করা বন্ধ করে দেওয়া এক্কেবারে ঠিক নয়। শরীরে ভাত রুটির মতো একটুও কার্বোহাইড্রেট না গেলে শরীর ঠিকমতো চলতে পারে না। তাই ওগুলোরও প্রয়োজন। আসলে রক্তে শর্করা বাড়লে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন সবই পরিমিত মাত্রায় খাওয়া প্রয়োজন। ডায়াবেটিস (Diabetes) হলে সুষম খাবার খাওয়াই বাঞ্চনীয়। জিরো কার্বোহাইড্রেট ফুড নয়।
সাদা ভাত খেলেও কম করে খান। ব্রাউন রাইস সবচেয়ে ভাল। রুটি পছন্দ হলে চেষ্টা করুন ছোলা, যব, রাগি বা রাজগিরা/আমরান্থের আটার রুটি খেতে।
যথেষ্ট পরিমাণ সবজি যেমন পালং, মেথি, নটে ইত্যাদি শাক ও টাটকা মরশুমি ফল যেমন আপেল, পেয়ারা, নাশপাতি, জামরুল, মুসাম্বি, বাতাবিলেবু, কমলালেবু, পাকা পেঁপে, তরমুজ ইত্যাদি রাখতেই হবে ডায়াবেটিসের ডায়েটে। সবজি ও ফলমূলে বিভিন্ন রকম ভিটামিন ও মিনারেলের সঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা শরীরের জন্য খুবই দরকারি। সবুজ শাকসবজি রক্তে গ্লুকোজ ও লিপিডের পরিমাণও কম রাখতে সাহায্য করে। শাকপাতা খেলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অর্থাৎ রক্তে শর্করার পরিমাণ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
হাই ব্লাড সুগার থাকলে কম পরিমাণ ফ্যাট থাকা দুগ্ধজাত খাবার বা লো ফ্যাট দুধ যেমন দই, ছানা, বাটার মিল্ক ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
চারাপোনা, বাটা বা ১ কেজির চেয়ে কম ওজনের মাছ খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদেরও প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন। প্রোটিনের চাহিদা সহজেই পূরণ করতে পারে স্বাস্থ্যকর ছোট মাছ।
সুগার থাকলেও ডিম খাওয়া যায়। রক্তে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি না থাকে, তা হলে সপ্তাহে ৩-৪টে ডিম তো অনায়াসে খাওয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগী মাত্রেই মিষ্টি থেকে একেবারে বঞ্চিত করে রাখা ঠিক নয়। পরিমিত পরিমাণে সুগার ফ্রি দিয়ে ঘরে তৈরি মিষ্টি বা পায়েস খাওয়া যেতেই পারে, তবে নিয়মিত নয়। সঙ্গে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, খাবারে যেন কখনই সুগার ফ্রি-র পরিমাণ খুব বেশি না হয়।