Diabetic Eye: রক্তে চিনি বাড়ছে? ডায়াবেটিস থাকলে চোখের পরীক্ষাও করান

গুড হেলথ ডেস্ক

Diabetic Eye

ডায়াবেটিসের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির সম্পর্ক আছে কি? এই প্রশ্ন অনেকের।

চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়াবেটিসে শরীরের যে অঙ্গগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়, তার মধ্যে একটি চোখ। এমনকি চোখ দেখেও আঁচ করা যায় কেউ ডায়াবেটিসে ভুগছেন কিনা। রক্তে শর্করা যত বাড়বে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে দৃষ্টিতে। ঝাপসা দৃষ্টি দিয়ে রোগের শুরু, এরপরে জখম হতে থাকবে রেটিনা, ম্যাকুলা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস চোখের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ারও ঝুঁকি থাকে। ডায়াবেটিসে চোখের অসুখ নানাপ্রকার। চিকিৎসকরা বলেন ডায়াবেটিক আই (Diabetic Eye)

diabetic retinopathy

ডায়াবেটিসে ক্ষতি হয় চোখের রেটিনার (Diabetic Eye), জল জমে ম্যাকুলায়

ডায়াবেটিস সারা শরীরে প্রভাব ফেলে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখের রেটিনা, হার্ট, কিডনি, ধমনি, শিরা, উপশিরা, নার্ভ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টাইপ ১ ও টাইপ ২–দু’রকম ডায়াবেটিসই চোখের ওপর প্রভাব ফেলে।

Light Therapy: আলোর তরঙ্গে সুস্থ হবে ত্বক, বলিরেখা থেকে মেলানোমা, লাইট থেরাপিই নিরাপদ

চোখের ভেতর রেটিনায় এর প্রভাব মারাত্মক। রেটিনা হল চোখের সবচেয়ে ভিতরের অংশ, খুব সূক্ষ্ম এবং লালচে রঙের হয়। রেটিনাই হল দৃষ্টি-সংবেদী অঙ্গ। এর মধ্যে থাকে ম্যাকুলা লুটিয়া যেখানে সূক্ষ্ম জিনিসগুলো ধরা পড়ে। টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস চোখের রেটিনা ও ম্যাকুলায় সবচেয়ে বেশি ছাপ ফেলে।

Diabetic Eye

টিনা চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল পর্দা। আলোকরশ্মি চোখের ভিতর ঢুকে এই রেটিনায় প্রতিফলিত হয়েই দৃশ্যমানতা তৈরি করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে রেটিনার সরু জালকের মধ্যে দিয়ে রক্তপ্রবাহ বাধা পায়। সরু রক্তজালক চিরে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত ও অন্যান্য তরল লিক করে। রেটিনার কোষ ফুলে ওঠে, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় (Diabetic Eye)। অতি সূক্ষ্ম রক্তজালিকা রেটিনার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে রেটিনার বিকল্প পুষ্টির জন্য। কিন্তু এই নতুন জালিকাগুলি খুব ভঙ্গুর এবং সহজেই এর মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে থাকে ও থ্রম্বোসিস হয়ে যায়। ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার এই রোগকেই বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি (Diabetic Retinopathy)। সেই সময়  অনেকে চোখের সামনে কালো কালো স্পট দেখেন, অন্ধত্বও আসতে পারে।

চোখের ঠিক মাঝখানে ম্যাকুলাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চোখের রক্তজালক গুলো থেকে ফ্লুইড লিক করে ম্যাকুলায় জমতে থাকে। ফলে ম্যাকুলা ফুলে ওঠে, ব্য়থা-প্রদাহ হয়। চোখের ভেতর রক্ত জালকগুলোর ক্ষতি হয়। দৃষ্টি অস্বচ্ছ হয়ে ওঠে। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডেমা (diabetic macular edema)

diabetic macular edema

 

রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে, কী কী করবেন

ডায়াবেটিস ঠেকানোই আসল দাওয়াই (Diabetic Eye)। এর জন্য নিয়মিত কিছু রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তের শর্করা, হিমোগ্লোবিন, হিমোগ্লোবিন-এ ১ সি, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া পরীক্ষা করাতে হবে। প্রস্রাবের কিছু পরীক্ষাও জরুরি।

টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ধরা পড়ার তিন বছর পর থেকে এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের রোগ নির্ণয়ের সময় থেকেই রেটিনা পরীক্ষা করাতে হবে। যদি রেটিনোপ্যাথি ধরা পড়ে তাহলে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময় চেকআপ জরুরি। ডাক্তারের গাইডলাইনে থাকতে হবে। রেটিনার অসুখ না থাকলেও নিয়ম মতো চোখ পরীক্ষা করাতে হবে।

রক্তের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার খাওয়া চলবে না। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার, জাঙ্ক ফুড, প্রিসারভেটিভ দেওয়া খাবার, রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দিতে পারে এমন ফল খাওয়া চলবে না।

কোনও ভাবেই রক্তচাপ বাড়ানো যাবে না, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কোলেস্টেরলও। ডায়াবেটিস বশে রাখতে হাঁটাচলা, শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে।

ডায়াবেটিস নেই বা পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস নেই এমন মানুষদেরও বছরে অন্তত একবার রক্তে শর্করার পরিমাণ ও চোখের প্রেসার চেক করিয়ে নেওয়া জরুরি।