
বর্ষার সময় ভাইরাল জ্বরের উপদ্রব অনেকটাই বেড়ে যায়। বর্ষা আসতেই বাংলায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া, ভাইরাল ফ্লু-এর (Viral Flu) কোপে পড়েছেন বহু মানুষ। আক্রান্ত হয়েছে শিশুরা। ভাইরাল ফ্লু মানে হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাস যদি ডায়াবেটিসের (Diabetes) রোগীদের শরীরে হানা দেয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীরা ঘন ঘন ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হতে থাকলে রক্তে শর্করার ভারসাম্য আরও বিগড়ে যাবে। অসুস্থতা চরম পর্যায়ে পৌঁছবে। তাই সাবধান করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস শরীরে স্ট্রেস কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। সর্দি-কাশি, জ্বরের সঙ্গেই মাথাযন্ত্রণা, ঝিমুনি, বমিভাব থাকে। ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। এর মধ্যে ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বিগড়ে যায়। গ্লুকোজ লেবেল বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘন ঘন প্রস্রাব, ডিহাইড্রেশন রোগীকে আরও বেশি অসুস্থ করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই কর্টিসল ইনসুলিনের প্রভাব কমিয়ে দেয়, গ্লুকোজের মাত্রা কমা-বাড়া করতে শুরু করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে ক্রনিক স্টেজে চলে যেতে পারে রোগী। দেখা গেছে, নন-ডায়াবেটিক রোগীদের থেকে ডায়াবেটিক রোগীদের ফ্লু হলে হাসপাতালে ভর্তির শঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস নীরবেই আসে, এবং শরীর-স্বাস্থ্যকে তছনছ করে চলে যায়। তাই ডায়াবেটিস মানেই ত্রাস। ভারতে কম করেও ৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসের শিকার। সমীক্ষা বলছে, সাত কোটিরও বেশি প্রি-ডায়াবেটিক। আর টাইপ ২ ডায়েবিটস ক্রমেই তার ডালপালা ছড়াচ্ছে। নিদেনপক্ষে ৯০-৯৫ শতাংশ পুরুষ ও মহিলা এই অসুখে ভুগছেন। মধ্যবয়স্করা তো আরও। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে ও উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন হলেই বশে রাখা যায় এই সাইলেন্ট কিলারকে। এটি আক্রমণের আগে নানা ভাবে জানান দেয় শরীরে। তখনই সাবধান হলে অনেকাংশেই ঠেকিয়ে রাখা যায় বিপদ।
চাই সতর্কতা
ডায়াবেটিসের (Diabetes) সঙ্গে ভাইরাল জ্বর হানা দিলে রোগীকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এখন ছোট বাচ্চারাও ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে, তাই বাবা-মায়েদের সাবধান থাকতে হবে। লাইস্টাইল ম্যানেজমেন্ট সবচেয়ে আগে দরকার। ডায়াবেটিস হলেও সাধারণ ব্যালেন্সড ডায়েটই মেনে চলতে বলা হয়। সারাদিনে যে খাবার আমরা খাই তাই নিয়ম মেনে ও সময়ে সময়ে খাওয়া। সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট খেতে হবে। ভাজাভুজি, তেল জবজবে খাবার একেবারে চলবে না। এ সময়ে শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে জল খেতে হবে। যাঁদের জল বেশি খাওয়া বারণ, তাঁদের মেপে খেতে হবে।
এ সময়ে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিনও দরকার। স্যুপ খাওয়া ভাল। আদা-চায়ের মতো টোটকাও অনেক সময়ে কাজে দেয়। টানা গলা খুশখুশ থাকলে গরম জলে নুন দিয়ে দিয়ে কয়েক বার গার্গল করলে তা কমে যেতে পারে।
এই সময় কাশির সিরাপ খেতে অনেকে মানা করেন। এতে গলায় একটা কুলিং এফেক্ট আসে।
২-৩ দিনে জ্বর না কমলে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার। ডায়াবেটিস, রক্তচারপের রোগী, যাঁদের কেমো চলছে, রেনাল ফেলিওরের সমস্যা রয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে ভাইরাল ফ্লু হলেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। গোড়া থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে অন্তত দিনের এক ঘণ্টা সময় নিজের জন্য রাখতে হবে। ওষুধের থেকেও বেশি কার্যকরী হাঁটা। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটতে হবে। সেই সঙ্গেই ধূমপানের নেশা ছাড়তে হবে। সেই সঙ্গেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট জরুরি। মানসিক চাপ কমানো দরকার, রাতে টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম দরকার। মনের ওপর বেশি চাপ পড়লে তার ছাপ পড়বে শরীরেও। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা কাটিয়ে যত মন ও মাথা ফুরফুরে রাখা যাবে, শরীর ততই সতেজ ও নীরোগ থাকবে।