
রক্তে কোন প্রোটিন বেশি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়বে? খুঁজে বের করলেন বিজ্ঞানীরা
গুড হেলথ ডেস্ক
চুপিসারে আসে। নীরবে বাড়ে। তারপর একেবারে ফণা তুলে ছোবল বসায়। ডায়াবেটিস (Diabetes) অতি ভয়ঙ্কর। টাইপ ২ আরও। এর ঘায়ে ঘায়েল প্রাপ্তবয়স্করাই। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে। এই রোগকে তো সাইলেন্ট প্রোগ্রেসিভ ডিসঅর্ডারও বলেন ডাক্তারবাবুরা। শুধুমাত্র শারীরিক কিছু লক্ষণ দেখে ডায়াবেটিস আগাম ধরতে পারা খুব মুশকিল। বিশেষ করে পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা তা জানার জন্য গবেষণা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। ইউরোপিয়ান অ্য়াসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব ডায়াবেটিসের (EASD) গবেষকরা বলছেন, মানুষের রক্তে এমন এক ধরনের প্রোটিন আছে যার বাড়বাড়ন্ত হলে বোঝা যাবে ডায়াবেটিস (Diabetes) বাসা বাঁধতে পারে শরীরে।
এপিথেলিয়াল বা আবরণী কোষের মধ্যে প্রোস্টাসিন (Prostasin) নামে এক ধরনের প্রোটিন থাকে যার মাত্রা বাড়লে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি কারও শরীরে ব্লাড সুগার বাড়তে থাকে এবং একই সঙ্গে প্রোস্টোসিন প্রোটিনের তারতম্য হয় তাহলে ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তি ডায়াবেটিক। শুধু তাই নয়, এই প্রোটিনের তারতম্য হলে ভবিষ্যতে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
ডায়াবেটোলজিয়া ( Diabetologia) নামে মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Diabetes) থাকলে ভবিষ্যতে অগ্ন্যাশয় ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াল ও লিভার ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ে। মহিলাদের মটাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসার ও বাওয়েল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁদের শরীরে লাইপোপ্রোটিন ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স (LPIR)বেড়ে যায়। যে কারণে প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। এই খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল হার্টের রোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। দিন দিন তা বাড়ছে। ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর চিকিৎসকরা ইনসুলিন-সহ নানা রকমের ওষুধ দিয়ে রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা কমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় দেরি হয়ে গেছে। বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস হলে আরও বেশি সাবধান থাকতে হয়।
টাইপ টু ডায়াবেটিস হলে ইনসুলিন কমে যায় এবং বিটা সেল নষ্ট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যেটা হয়, ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। তার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মাত্রা কমে না ঠিকই কিন্তু কোষের রিসেপ্টর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইনসুলিন কাজ করতে পারে না। যার ফলে ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। টাইপ টু ডায়াবেটিস (Diabetes), হার্টের রোগ, স্ট্রোক হলে তা ব্রেন সেলকে মারাত্মকভাবে আঘাত করতে পারে। গবেষকরা বলছেন, আগে থেকেই যদি ধরে ফেলা যায় কেউ ডায়াবেটিক কিনা তাহলে সঠিক ট্রিটমেন্টে রোগ ধরার আগেই তার প্রতিরোধ করা সম্ভব।