
হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম বড় কারণ ডায়াবেটিস। বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে, এমনটাই দাবি নতুন গবেষণায়। ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজি জানিয়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস আছে এমন রোগী যদি বেশিমাত্রায় ননস্টেরয়ডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ (NSAID) নিতে থাকে তাহলে তাঁর হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) নীরবেই আসে, এবং শরীর-স্বাস্থ্যকে তছনছ করে চলে যায়। তাই ডায়াবেটিস মানেই ত্রাস। জীবন থেকে এক ধাক্কায় অনেক কিছু বাদ চলে যাওয়া। ভাবার বিষয় হল, ডায়াবেটিস ক্রমেই তার শিকড় ছড়াচ্ছে বিশ্বে। ভারতে কম করেও ৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসের শিকার। সমীক্ষা বলছে, সাত কোটিরও বেশি প্রি-ডায়াবেটিক। আর টাইপ ২ ডায়েবিটস (Type 2 Diabetes) ক্রমেই তার ডালপালা ছড়াচ্ছে। নিদেনপক্ষে ৯০-৯৫ শতাংশ পুরুষ ও মহিলা এই অসুখে ভুগছেন। মধ্যবয়স্করা তো আরও। একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে ও উপসর্গ দেখা দিলেই সচেতন হলেই বশে রাখা যায় এই সাইলেন্ট কিলারকে।এটি আক্রমণের আগে নানা ভাবে জানান দেয় শরীরে। তখনই সাবধান হলে অনেকাংশেই ঠেকিয়ে রাখা যায় বিপদ।
কী থেকে হয় টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)?
ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ যেখানে রক্তে শর্করা বা সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন যা প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে নিঃসৃত হয়। সাধারণত, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি লিভারে গিয়ে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। ইসুলিন এই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষের ভেতরে গ্লুকোজ অক্সিডাইজড হয়ে অ্যাডিনোসিন ট্রাই ফসফেট (এটিপি) তৈরি করে যার থেকে শক্তি আসে। এই শক্তিই কোষের পুষ্টি জোগায়।
ধূমপান না করেও হৃদরোগ হতে পারে! বায়ুদূষণ ছারখার করছে হার্ট, দাবি গবেষণায়
কিন্তু যদি বিটা কোষ নষ্ট হয়ে যায় এবং ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ কমে যায় তাহলে এই পক্রিয়াটা বাধা পায়। ইনসুলিন কোষের মধ্যে প্রবেশের জন্য যে রিসেপ্টরটি লাগে, সেটি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ইনসুলিন আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ইনসুলিন কোষের মধ্যে গ্লুকোজকে প্রবেশ করাতে পারে না। রক্তের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। একে বলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে
টাইপ ২ ডায়াবেটিস যাঁদের আছে তাঁদের শরীরে লাইপোপ্রোটিন ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স (LPIR)বেড়ে যায়। যে কারণে প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়ে। এই খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কোলেস্টেরল হার্টের রোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
কীভাবে বাঁচবেন? অনেক সময় এই হার্ট অ্যাটাক এতটাই যন্ত্রণাহীন হয় যে প্রথম কয়েক ঘণ্টা রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না যে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনও ডায়াবেটিক রোগী শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন তাঁকে অবিলম্বে নিকটবর্তী হাসপাতালের এমারজেন্সিতে নিয়ে যাওয়া উচিত।
ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes) ধরা পড়লে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে সন্ধের দিকে পায়ের পাতা ফুলছে কিনা। এই সমস্যা দেখা দিলে সময় না নষ্ট করে নিউরোপ্যাথি ও ভ্যাসকুলোপ্যাথির সাহায্য নিতে হবে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়লে, সঠিক ট্রিটমেন্ট ও নিয়ম মেনে চললে পরবর্তী কালে চোখ, কিডনি, নার্ভ, হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের বড়সড় ক্ষতি রোখা সম্ভব।