
ঘুম পেলে ছোট্ট সোনারা চোখ কচলায়। হামা দিতে দিতে ধুলোবালি হাতে মেখে সেই হাতই অজান্তে চোখে দিয়ে ফেলে। হাউজ ডাস্ট-এ মিশে থাকা মশলার গুঁড়ো, ফুলের রেনু, বালি, কাঁকর, এমনকি সাংঘাতিক অ্যালার্জেন বস্তুরও সংস্পর্শ লাগতে পারে চোখে। তখন সহজাত প্রবৃত্তি মতোই ওরা চোখ কচলাতেই থাকে। শুধু ছোটরা কেন! বড়দেরও চোখ রগড়ানোর অভ্যেস কিছু কম নয়। ধুলোবালি কিছু পড়লে তো বটেই, এমনিতেও ছোটদের মতো অনেকে চোখে আঙুল দিয়ে জোরে জোরে ঘষতে থাকে। তবে এই প্রবৃত্তি সাময়িক স্বস্তি দিলেও মোটেই সুখকর নয়। হতে পারে অনেক কিছুই, যার মধ্যে ক্ষতির ভাগটাই বেশি।
কী কী হতে পারে?
কর্নিয়াতে আলসার- চোখে ধুলো পড়লে বা চোখের পাতা আটকে গেলেই আমরা চোখ চুলকাই। আলতো হাতে যদি কাজ না হয়, তাহলে জোরে জোরেই ঘষতে থাকি। এর ফলে চোখের মধ্যে আটকে থাকা সূক্ষ বস্তুটি কর্নিয়াতে আঁচড় ফেলতে পারে। কর্নিয়াতে আঁচড় পড়লে তা সাধারণত দু–এক দিনেই সেরে যায়। কিন্তু কখনও কখনও তা থেকে আলসারও হতে পারে।
কর্নিয়ার আকৃতিতে পরিবর্তন- বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ ধরে শক্ত হাতের তালু বা আঙুলের পেছন দিক দিয়ে চোখ রগড়ালে চোখের উপর চাপ প্রায় ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। যাদের বারবার চোখ কচলানোর অভ্যাস, তাদের কর্নিয়ার আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে খানিকটা লম্বাটেও হয়ে যেতে পারে। একে বলা হয় কেরাটোকোনাস।
সংক্রমণ- চোখ কচলানোর সময় হাত পরিস্কার না নোংরা, সে খেয়াল আমাদের থাকে না। এমনকি হঠাৎ করে চোখ চুলকালে বা জ্বালা অনুভব হলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে আসা বা স্যানিটাইজ করার কথাও আমাদের মনে পড়ে না। ফলে হাতে থাকা অগুনতি জীবাণু অবাধে প্রবেশ করে চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গে। এ সব জীবাণুর কারণে হতে পারে কঞ্জাংটিভাইটিসের মতো সংক্রমণও।
অন্ধত্বের সম্ভাবনা- মূলত ধুলোকণা, পোকামাকড়, ছোট বালি, কাঁকর চোখে পড়ে যাওয়ার জন্য চোখে খচখচ করা, চোখ দিয়ে জল পড়া, তাকালে চোখ জ্বালা করা ও চুলকানির অনুভূতি হয়। চোখ লালও হয়ে যেতে পারে। চোখে ঢুকে থাকা অস্বস্তিকর বস্তুটি তাড়াতাড়ি বের করে নেওয়া না হলে কর্নিয়ায় ঘষা লেগে চোখের প্রভূত ক্ষতি হতে পারে, এমনকি এমন অবস্থায় বেশি চোখ কচলালে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হতে পারে।
তাই কোনও কারণে চোখে জ্বালা করলে, চুলকালে বা অস্বস্তি অনুভব হলে চোখ কচলাবেন না। বরং পরিস্কার কাপড়ের টুকরো দিয়ে চোখ থেকে ময়লা তৎক্ষণাৎ বের করার চেষ্টা করুন। পরিস্কার জলে চোখে ঝাপটা দিলেও অনেক সময় চোখের অস্বস্তি দূর হয়।