Glaucoma: অন্ধত্ব সারানো যাবে? গ্লুকোমার জন্য দায়ী জিনের বিন্যাস খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

গুড হেলথ ডেস্ক

চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে হতে সম্পূর্ণ অন্ধ (Glaucoma) হয়ে যান অনেকেই। আমাদের যে দৃষ্টিশক্তি বা ফিল্ড অব ভিশন, তা ক্রমশ সংকীর্ণ হতে হতে পূর্ণ অন্ধত্বের রূপ নেয়। একেই বলে গ্লুকোমা। বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ গ্লুকোমার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারান। আমাদের দেশেও এই সংখ্যা কোটির বেশি। একেবারে অন্ধ হয়ে গেলে দৃষ্টি ফেরানো প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। গ্লুকোমার নানারকম থেরাপি নিয়ে তাই গবেষণা চলছে। কী কারণে এই রোগ হয় তা বোঝার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানেই নতুন দিশা পাওয়া গেছে। গ্লুকোমার জন্য দায়ী যে জিন, তার পরিপূর্ণ বিন্যাস খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

‘সেল জিনোমিক্স’ নামে সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা গ্লুকোমার জন্য দায়ী জিনের রোডম্যাপ খুঁজে পেয়েছেন। এই জিনের পথ ধরে যদি রোগের কারণ ও গোড়া থেকে রোগের চিহ্নিতকরণ সহজ হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্ধত্ব গ্রাস করার আগেই রোগ সারিয়ে ফেলতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর আই রিসার্চের গবেষক অ্য়ালেক্স হেউইট বলছেন, প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমার (Glaucoma) জন্য দায়ী জিনের বিন্যাস খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্তত ৩০০ রকম জেনেটিক ফ্যাক্টর চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেগুলো কারণ কারণ খুঁজতে সাহায্য করবে।

Cancer Treatment: ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে এই থেরাপি, কেমোর দরকার নেই

Glaucoma

 

নষ্ট হতে থাকে অপটিক স্নায়ু, মানুষ অন্ধ (Glaucoma) হয়ে যায় একটা সময়

গ্লুকোমা হল চোখের একপ্রকার রোগ যাতে অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও চোখ অন্ধ হয়ে যায়। আমাদের চোখের একটা নির্দিষ্ট প্রেসার বা চাপ থাকে যাকে অভ্যন্তরীণ চাপ বা ইন্ট্রা অকুলিয়র প্রেসার (আইওপি) বলে। এর কারণেই চোখের ভেতর একরকম তরল তৈরি হয় যার নাম অ্যাকুয়াস হিইমার। এই তরল সিলিয়ারি বডি থেকে তৈরি হয়ে বাইরে রক্তজালিকায় প্রবেশ করে। এর কাজ হল আমাদের চোখের মনি বা কর্নিয়া ও লেন্সকে পুষ্টি জোগানো। 

Glaucoma

এই তরল বা অ্যাকুয়াস হিউমারের ক্ষরণ যদি বেড়ে যায় তাহলে চোখের চাপ বা আইওপি বাড়তে থাকে। চাপ বাড়লে পেছনের পর্দা বা অপটিক নার্ভের ক্ষতি হতে থাকে। যদি অপটিক নার্ভের চাপ বেড়ে যায় তাহলে রেটিনারও ক্ষতি হয়। তখন দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করে ও একসময় অন্ধত্ব গ্রাস করে।

গ্লুকোমা (Glaucoma) নানা রকম হয়। ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা, ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ও নরমাল টেনশন গ্লুকোমা অন্যতম । ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ধীরে ধীরে হয় ফলে চোখে তেমন ব্যথা হয় না। চিকিৎসা না করালে প্রথমে পার্শ্বীয় দৃষ্টি, তারপর কেন্দ্রীয় দৃষ্টি নষ্ট হয়ে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়।

 Glaucoma

ক্লোজড অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ধীরে ধীরেও হতে পারে বা হঠাৎ করে হতে পারে। এটি হলে চোখ ফুলে লাল হয়ে যায়, প্রচণ্ড ব্যথা হতে থাকে, দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে, চোখের মনি বড় যায়। তাছাড়া মাথাঘোরা, বমিভাব থাকে। গ্লুকোমার বড় লক্ষণ হল রেনবো হ্যালো বা রামধনুর ছটা। সোজাসুজি তাকানোর সময় দূরের দৃষ্টি ততটা নাও কমতে পারে। দৃষ্টিশক্তির পরিধি—উপর, নীচ,ডান বাম এই চারদিকের সংকোচন হতে থাকে। এ অবস্থাকে টানেল ভিসন বলে।

অতিরিক্ত মাইনাস পাওয়ার, ডায়াবেটিস থাকলে, চোখে কোন আঘাত পেয়ে থাকলে, পরিবারে কারও গ্লুকোমা (Glaucoma) হয়ে থাকলে বা বহুদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিলে গ্লুকোমা হতে পারে। যে সব পরিবারে এই রোগ আছে তাঁদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হয় ও মাঝে মাঝে চোখের ডাক্তারকে দিয়ে সমস্ত রকম গ্লুকোমার পরীক্ষা করিয়েও নিতে হয়।

গ্লুকোমা গোড়া ধরা পড়লে ওষুধ দিয়ে চোখের আইওপি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু গবেষকদের উদ্দেশ্য হল, এই রোগের কারণ খুঁজে বের করা। রোগের জন্য দায়ী জিনগুলিকে যদি শণাক্ত করা যায় তাহলে গ্লুকোমা থেকে বহু মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে।