
গত একমাস ধরে প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে। হালে কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও এখন আবার চড়া রোদে প্রাণ ওষ্ঠাগত। বেলা বাড়লেই রাস্তায় যেন আগুনের হলকা। তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা সহ গোটা উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে। পশ্চিমবঙ্গেও রোদের তেজ কিছুমাত্র কমেনি। সকালে মেঘলা আকাশ থাকলেও বেলা বাড়লেই কড়া রোদে হাঁসফাঁস করছেন মানুষজন। এই গরমে ডিহাইড্রেশন, স্কিন র্যাশ, অ্যালার্জি, ঠান্ডা-গরমের জ্বর, কাশি কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সেই সঙ্গেই ক্ষতি হচ্ছে চোখেরও (Heatwave Eye Care)।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চড়া রোদে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি সরাসরি পড়ে চোখে ( (Heatwave Eye Care))। বেশিক্ষণ রোদের মধ্য়ে থাকলে চোখের ক্ষতি হতেই পারে। বিশেষ করে এই তাপপ্রবাহে যাঁরা প্রতিদিন রাস্তায় বের হচ্ছেন তাঁদের বিপদ বেশি। এমনিতেও এখন অনেকেরই চোখে ব্যথা, চুলকানি, চোখ দিয়ে জল পড়ার মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে। রোদে বেশি সময় বাইরে থাকলে চোখে জ্বালা করছে। এসবের কারণই হল সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি (Ultraviolet Rays)।
কটকটে রোদে চোখের কী ক্ষতি হয়?
আমাদের দেশে প্রায় তিন মাস গ্রীষ্ম থাকে। ইদানীং সময়ে জলবায়ু বদলের কারণে রোজের তেজ প্রায় কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। অতিবেগুনী রশ্মি সরাসরি চোখের রেটিনার ক্ষতি করছে (Heatwave Eye Care)।
শিশুদের চোখ ইউভি রশ্মি ছাঁকতে পারে না বলে তাদের রেটিনায় বেশি বিকিরণ পৌঁছয়। এই রশ্মিরর প্রভাব দীর্ঘকালীন প্রভাব আরও মারাত্মক। ক্যাটারাক্ট বাড়তে থাকবে, ফলে চোখের রেটিনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সানবার্ন হয় চোখেও
সানবার্ন শুধু ত্বকে হয় চোখেও হয়। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ফটোকেরাটিটিস (Photokeratitis)। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি কর্নিয়া ও কনদাংটিভার ক্ষতি করে। দীর্ঘসময় রেটিয়ায় সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হলে রেটিনা একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়ে অন্ধত্বও আসতে পারে বা ঝাপসা হতে পারে দৃষ্টিশক্তি।
অতিবেগুনী রশ্মি তিন ধরনের হয়–ইউভি-এ, ইউভি-বি এবং ইউভি-সি। এর মধ্যে ইউভি-এ ও ইউভি-বি চোখের ওপরের কোষ-সহ কর্নিয়া ও লেন্স নষ্ট করে দিতে পারে। অল্প সময়ে বেশি মাত্রায় ইউভি রশ্মি চোখে পড়লে কর্নিয়া ফুলে গিয়ে ফটোকেরাটিটিস হতে পারে। সহজ করে বললে রোদের তেজে চোখের কোষ পুড়ে গিয়ে দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে।
রোদে পুড়ছে চোখও, সাবধান হওয়া জরুরি
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাঁরা রোদে থাকেন অথবা চড়া আলোর মধ্য়ে থাকেন তাঁদের ফটোকেরাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে (Heatwave Eye Care)। কিছুদিন আগেই আবহাওয়া দফতর সতর্ক করে বলেছিল, বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রাস্তায় থাকবেন না। এই সময় রোদের তেজ আরও চড়া হয়. তার ওপরে তাপপ্রবাহ চলে। সব মিলিয়ে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। প্রচণ্ড রোদে চোখেরও যে ক্ষতি হয় তা অনেকেরই অজানা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে গরম বাড়ছে এবং রোদের তেজও বাড়ছে, তাতে এখন থেকেই সাবধান হওয়া দরকার।
ফটোকেরাটিটিস হলে চোখ লাল হতে থাকবে
অনবরত জল পড়বে চোখ থেকে
চোখ চুলকাবে, চোখের বাইরের ত্বকে চুলকানি হবে
মনে হবে চোখে বালি পড়েছে, চোখ ভারী লাগবে
বেশি ঘষলেই চোখ ফুলে উঠবে
চোখে ব্যথা হবে, সেই সঙ্গেই মাথাব্যথা শুরু হবে
দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকবে, চোখে আলো পড়লেই অস্বস্তি হবে
রোগ বাড়াবাড়ি হলে দৃষ্টি ক্ষীণ হতে থাকবে
এই সময় বাইরে বেরলে সানগ্লাস পরতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে চোখকে বাঁচাতে কালো চশমা পরাটা জরুরি। কিন্তু এই কালো চশমারও রকম ফের আছে। গত কয়েক বছর ধরে বেড়েছে পোলারাইজড কালো চশমার ব্যবহার। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকাতে এই লেন্স প্রায় ১০০ শতাংশ সক্ষম। তবে পোলারাইজড কালো চশমা পরলে স্ক্রিনে দেখতে সমস্যা হতে পারে।
সেক্ষেত্রে ভাল ব্র্যান্ডের রোদচশমাই পরুন। একটু ভাল সানগ্লাস না হলেও কিন্তু চোখের ক্ষতি হতে পারে। পাওয়ার বাড়বে, ভিশনে সমস্যা হবে। চোখে যদি কোনওরকম অস্বস্তি থাকে তাহলে ডাক্তারকে দেখিয়ে চশমা কিনুন।