
চোখ মানব শরীরের সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ, যার জন্য অতিরিক্ত যত্ন দরকার। অথচ চোখের ব্যাপারেই আমরা সবচেয়ে বেশি উদাসীন (Eye Care)। চোখের ওপরেই চাপ বেশি পড়ে। ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবধি চোখকে আমরা সেভাবে বিশ্রাম দিই না। যে কারণেই চোখ ভারী হওয়া, চোখের ক্লান্তির ছাপ, চোখের নীচে কালি পড়ে। ঘন ঘন চোখে চুলকানি, চোখ থেকে জল পড়া, চোখ ফুলে ওঠা ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দেয়। তার ওপরে আবার নানারকম সংক্রমণজনিত রোগ তো আছেই।
একটানা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে, বেশিক্ষণ মোবাইল ঘাঁটলে, বা সারাদিন ল্যাপটপ-ট্যাবে চোখ রাখলে–চোখের ক্লান্তি বাড়বেই। কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিন থেকে বেরনো রশ্মি চোখের কর্নিয়ায় মারাত্মক প্রভাব ফেলে (Eye Care)। ফলে চোখ লাল হয়ে যায়, জ্বালা করতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে চোখের উপর চাপ পড়ার ফল স্বরূপ দেখা দিতে পারে মাথা যন্ত্রণা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি, ঘাড়ের ব্যাথা, চোখের শুষ্কতা, মনোযোগের সমস্যার মতো নানা ধরনের সমস্যা। দেখা দিতে পারে স্নায়ুরোগ ও অনিদ্রার মতো উপসর্গও।
প্রতিদিন যদি চোখের খেয়াল রাখা যায়, তাহলে এইসব সমস্যা চট করে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজকার কাজের মাঝেই চোখের যত্ন নিন, চোখকে বিশ্রাম দিন, তাহলেই দৃষ্টিজনিত যে কোনও সমস্যা বা চোখের সংক্রমণজনিত অসুখ থেকেও রেহাই মিলবে।
কীভাবে চোখের যত্ন নেবেন?
১) শরীর ঠিক রাখতে যেমন এক্সারসাইজ করেন, তেমনই চোখেরও ব্যায়াম দরকার। প্রতিদিন চোখের মণি রোল করুন (Eye Care) ক্লকওয়াইজ ১২ বার, অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ ১২ বার। যে কোনও সময় কাজের ফাঁকে করে নিন।
২) চোখের জন্যও ডায়েট দরকার। নানা রঙের ফল, বেশি পরিমাণ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রোজের ডায়েটে রাখতে হবে। গাজরের বিটা ক্য়ারোটিন চোখ ভাল রাখে, ডিম চোখের জন্য উপকারি, দুধ এবং দইয়েও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ এবং জিঙ্ক। দু’টি উপাদানই চোখের নানা অংশের যত্ন নেয়। মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, তা বেশি করে খাবেন। দৃষ্টিশক্তি ভাল থাকবে, ড্রাই আইজের সমস্যা কমবে।
মুখে ঘা ভোগাচ্ছে, আলসারের জ্বালা? ওষুধ ছাড়াই ঘরোয়া টোটকায় যন্ত্রণা কমবে
৩) অনেক ক্ষণ এক দৃষ্টে মোবাইল বা কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর চোখের বিশ্রাম নিন। চোখ বন্ধ করে থাকতে পারেন।
৪) মাথার উপর ফ্লুরোসেন্ট আলো জ্বললে সমস্যা হয় সবচেয়ে বেশি। লাগাতে হবে সাধারণ আলো। কাজ যেখানে করছেন সেখানে পিছনে ও সাইডে আলো হলে বেশি ভাল হবে। বাঁ সাইডে হলে সবচেয়ে ভাল। ডান দিকে হলেও চলবে।
৫) চোখের মধ্যে জলের ঝাপটা দেবেন না (Eye Care)। চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা জল দিন। চোখের জলেরও অনেক উপকারি উপাদান আছে, তা সব বেরিয়ে গেলে চোখের ক্ষতি হয়।
৬) ড্রাই আই হলে টিয়ার ড্রপ দিতে পারেন, অবশ্যই ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে।
৭) সানবার্ন শুধু ত্বকে হয় চোখেও হয়। একে ডাক্তারি ভাষায় বলে ফটোকেরাটিটিস (Photokeratitis)। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি কর্নিয়া ও কনজাংটিভার ক্ষতি করে। প্রচণ্ড রোদে চোখেরও যে ক্ষতি হয় তা অনেকেরই অজানা। তাই দীর্ঘ সময় বাইরে থাকতে হলে রোদ চশমা অবশ্যই ব্যবহার করুন।
৮) দু’হাতের তালু একটির সঙ্গে অপরটি ঘষে নিন ১৫ মিনিট ধরে। ঘর্ষণের ফলে হাতের তালুতে তাপ তৈরি হবে। এবার চোখ বন্ধ করে হাতদু’টি চোখের উপরে হাল্কা করে রাখুন। দিনে তিন থেকে চার বার এইভাবে চোখে তাপ দিতে পারেন। চোখ ভাল থাকবে।
৯) অন্ধকার ঘরে টিভি দেখা বা অপর্যাপ্ত আলোয় পড়াশোনা করার অভ্যাস থাকে অনেকের। এতে চোখে স্ট্রেস পড়ে। পর্যাপ্ত আলোর যাতে ব্যবস্থা থাকে সে খেয়াল রাখতে হবে।
১০) অনেকেই চোখ কটকট করলে, কোনও সমস্যা হলে বা ঘুম পেলে হাত দিয়ে চোখ কচলান। এতে হাতের ময়লা চোখে গিয়ে ক্ষতি হয়।