মনের খিদে আর পেটের খিদের ফারাক কতটা? কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন!

দ্য ওয়াল ব্যুরো: খাই খাই করো কেন? এসো বোসো আহারে…..

মন যে সব সময় খাই খাই করে (Emotional Hunger) এটা বিলক্ষণ বুজেছিলেন সুকুমার রায়। পরিপাটি করে সাজিয়ে গুছিয়ে ভোজ খাওয়াই উপলক্ষ্য নয়, যখন তখন যেখানে সেখানে হঠাৎ করেই কিছু খেতে ইচ্ছে করে। এই যেমন ধরুন, পরীক্ষার ঠিক আগে, একগাদা পড়া বাকি, তখনই মনে হল এক প্যাকেট চিপস খেলে বেশ হত।

আবার, অফিসে মারাত্মক কাজের চাপ। বস চোখ রাঙিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনার মনে হল চুপিচুপি একখানা ক্যাডবেরি মুখে চালান করে দিলে বেশ হয়। মুখ মিষ্টি হলে, মনও বেশ চাঙ্গা হবে। মেজাজও হবে ফুরফুরে।

খুব আনন্দ হোক বা মনে ব্যথা পান, কেউ প্রশংসা করুক বা বকাঝকা খান, যে কোনও পরিস্থিতিতেই মন কিছু একটা চায়। আর সেটা খাবার হলেই বেশ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে পেটের খিদে নয়, এ হল মনের খিদে। অনেকে আবার বলেন চোখের খিদে। প্রচণ্ড টেনশনেও খেতে ইচ্ছে করে আবার খুব ফূর্তি হলেও এটা ওটা খাওয়ার জন্য মন ছোঁকছোঁক করে। ফ্রিজে রাখা চকোলেট থেকে রঙিন আইসক্রিম, চিপস থেকে পেস্ট্রি—এইসব মুখরোচক খাওয়ারের দিকেই মনের যত আকর্ষণ। মনোবিদেরা বলেন, পেট ভরা খাবার নয়, মন ভরা খাবার। মানে যা খেলে মন ও মাথা একই সঙ্গে পরিতৃপ্ত হয়। এই মনের খাই খাই দশারও একটা পোশাকি নাম আছে.. ‘ইমোশনাল ইটিং’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭৫ শতাংশ খিদেই আসে মন থেকে। আসলে শরীরের একটা ঘড়ি আছে যাকে আমরা বায়োলজিক্যাল ক্লক বলি। এই ঘড়ি যানে কখন পুষ্টির জন্য শরীরের খাবার দরকার। সেই সময় আমরা অভ্যাস বসেই খাই। কিন্তু বাকি সময়টা যে খাই খাই ভাব জাগে, সেটা মনের কারণেই। রাগ, দুঃখ, অভিমান, অবসাদ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইত্যাদি অনুভূতির নানা দশায় মনের এমন খিদে পায়। আর এই খাওয়াটাই ডায়েটের দফারফা করে শরীরে মেদ ডেকে আনে।

এখন প্রশ্ন হল মনের এত খিদে পায় কেন?

মনোবিদরা বলছেন তার অনেক কারণ।

১) পেটের খিদে মেটানো ছাড়াও যে অতিরিক্ত খিদে সেটা আসলে মস্তিষ্কের পরিতৃপ্তির জন্য। আমরা যখন খুশি হই তখন ডোপামিন নামে এক ধরনের হরমোন বের হয়। একে বলে সুখী হরমোন। এই ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়লে মস্তিষ্ক তখন বার্তা পাঠায় কিছু একটা করে মনকে ভাল রাখতে হবে। এখন মন ভাল রাখার অনেক উপায় আছে। কেউ হয়ত ঘোরাবেড়ানো, আড্ডা-গল্প বেছে নেন, আবার কারও মনে হয় ভাল কিছু খেলেই মন খুশি হবে। এই ভাল খাওয়াটাও মনের ওপরেই নির্ভর করে। পুষ্টিকর খাবারকে কেউ ভাল মনে করেন, আবার চিপস, আইসক্রিম, ক্যাডবেরি, মিষ্টি, জাঙ্ক ফুডকে ভাল খাবারের তালিকায় ফেলেন অনেকে। মনের খিদে মেটাতে তখন স্যালাড নয়, বার্গারই হাতে উঠে আসে।

How to know if it is real or emotional hunger?

২) কারণ আরও আছে। ডায়েটের কারণে একাধিক পছন্দের খাবার বাদ দিতে বাধ্য হয়েছেন যাঁরা, তাঁরা মনের খিদে মেটাতে নিয়ম ভেঙেই ফেলেন। মনোবিদরা বলছেন, প্রচণ্ড স্ট্রেস, অবসাদ ও উদ্বেগ থেকে এটা হয়। তখন মনে হয় একদিন নিয়ম ভেঙে ভাল কিছু খেয়ে নিলেই মন খুশি হয়ে যাবে।

৩) নানা কারণে মন উচাটন হলে কর্টিসল নামে এক ধরনের হরমোন বের হয়। এই কর্টিসল ঝাল, মিষ্টি, মুখরোচক খাবারের ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। তখনই মন খাই খাই শুরু করে। এই হরমোনের ক্ষরণ বাড়লে খিদেটাও চাগাড় দেয় বেশি। মনের ইচ্ছা মেটাতে তখন পেটে ভালমন্দ চালান করতেই হয়।

Don't get caught cheating: Do's and don'ts of midnight snacking | Al Arabiya English

৪) মনের খিদের আরও একটা কারণ হল ‘রিওয়ার্ড ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম’ বা  ‘আরডিএস’। এটা একধরনের অসুখ। যাদের এই সিনড্রোম হয় তাদের মস্তিষ্কের আরডিএস গ্রন্থি পরিপুষ্ট নয়। ফলে আবেগ, অনুভূতিতে মন ভরে না। ভাল খাবার খেলে মন পরিতৃপ্ত হয়।

৫) প্রচণ্ড অবসাদ থেকেই খাই খাই ভাবটা জেগে ওঠে। মন খারাপ থাকলে বা আচমকা কোনও কারণে শক পেলে তখন মনের খিদে বেড়ে যায়। এর কয়েকটা লক্ষণ আছে। দেখবেন, মন কোনও কারণে ফুরফুরে নেই। সারাক্ষণ খিদে খিদে পাচ্ছে। খেতে শুরু করলে থামাতে পারছেন না। পেট ভর্তি থাকার পরে খিদে পাচ্ছে। একবারে অনেকটা খেয়ে ফেলছেন। যে খাবার ডায়েট থেকে বাদ দিয়েছিলেন সেটাই বেশি করে খেতে ইচ্ছে করছে।

How Stress Can Make You Eat More — Or Not At All – Cleveland Clinic

আবেগ আর মনের খিদে মেটানোর একটাই উপায় আছে। মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা। মনোবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, মনকে ভাল রাখার উপায় খুঁজে নিতে হবে নিজেকেই। স্ট্রেস কমাতে হবে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় লাগাম টানতে হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। মন খাই খাই করলে ফ্রিজ খুলে ক্যাডবেরি বের করে নেবেন নাকি খোলা হাওয়ায় গিয়ে হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা করে নেবেন, সেটা একেবারেই আপনার চয়েস! প্রথমটায় মেদ বাড়বে, দ্বিতীয়তে শরীর-মন-মস্তিষ্ক তরতাজা থাকবে।

পড়ুন দ্য ওয়ালের সাহিত্য পত্রিকা সুখপাঠ