
ডিমেনশিয়া নয় তো? স্মৃতি উবে যাওয়ার আগে চোখে ধরা পড়ে ছোট ছোট উপসর্গ
গুড হেলথ ডেস্ক
স্মৃতির পাতা ধীরে ধীরে খালি হতে শুরু করেছে (Dementia)। উবে যাচ্ছে ছোট ছোট ভাবনাগুলোও। অফিসের প্রজেক্টের ডেডলাইন থেকে ছেলেময়ের স্কুলের ফি জমা দেওয়ার তারিখ, ডেবিট কার্ডের পাসওয়ার্ড থেকে ঘরের টুকিটাকি, সবই কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আজকাল। চেষ্টা করেও বন্ধুর নাম মনে রাখতে পারছেন না, ধীরে ধীরে নিজের নাম, বাড়ির ঠিকানাও স্মৃতির পাতা থেকে উবে গেল। স্মৃতিনাশ বা ডিমেনশিয়া এখনকার দিনে সাঁড়াশি আক্রমণ করেছে তরুণ থেকে প্রবীণদের। দৈনন্দিন জীবনের অত্যধিক মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, তার উপর অসংযমী জীবনযাত্রা, স্মৃতিনাশের মতো ভয়ঙ্কর মানসিক রোগকে আমন্ত্রণ করে আনছে।
‘নেচার পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি কালেকশন’ মেডিক্যাল জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ভারতে ১ কোটির বেশি প্রবীণ ডিমেনশিয়া (Dementia) বা স্মৃতিনাশের সমস্যায় ভুগছেন। ২০৫০ সালের মধ্যে ষাট বা ষাটোর্ধ্ব ১৯ শতাংশ ভারতীয় ডিমেনশিয়ার মতো মানসিক রোগের শিকার হবেন।
শারীরিক নানা কারণ আছে যার জন্য় মানুষ ভুলতে (Dementia) শুরু করে। এর মধ্য়ে প্রথমেই আছে থাইরয়েডের সমস্য়া। হাইপোথাইরয়েড বা হাইপারথাইরয়েড থাকলে স্মৃতির পাতা কিছুটা ধূসর হয়ে যায়। দ্বিতীয় কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস থাকলে রক্তজালকগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে শুরু করে, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তো বাড়েই, হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে। মানসিক চাপ, অ্য়াংজাইটি, ডিজিটাল মাল্টিটাস্কিং, ক্রনিক ইনসমনিয়া –ডিমেনশিয়ার রিস্ক ফ্যাক্টরের তালিকাটা লম্বা। মনোবিদরা বলেন, রোগ ধরার আগেই তার সম্ভাবনাগুলোকে নির্মূল করে ফেলাই দস্তুর। বিশেষ করে মনের রোগ হানা দেওয়ার আগেই তার কারণগুলোকে সমূলে বিনাশ করা উচিত।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডিমেনশিয়া (Dementia) হঠাৎ করে হানা দেয় না। দীর্ঘ সময় ধরে এর উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে। স্মৃতিনাশ হচ্ছে কিনা তার কয়েকটি লক্ষণ ফুটে ওঠে চোখেই। সেগুলো কী তা বুঝতে পারলে অনেক আগেই রোগীর চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।
লিখতে বা পড়তে সমস্যা
দৃষ্টি ক্ষীণ হতে থাকে। কোনও লেখা পড়ে বুঝতে এবং লিখতে সমস্যা শুরু হয়। দেখবেন, রোগী ঠিকমতো পড়তেই পারছে না। অথবা কোনও কিছু লিখতে গেলে সমস্যা হচ্ছে। অক্ষর, শব্দ, বাক্য তৈরি করতে পারছে না। নম্বর বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। পর পর বাক্য লিখতে গেলেই সব তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। যা লিখছে তার মানে দাঁড়াচ্ছে না। কোনও কিছু ভাষায় প্রকাশ করতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে। গুছিয়ে কথা বলতে পারছে না।
আরও পড়ুন: Schizophrenia: অকারণে ভয়, হ্যালুসিনেশন, ভারতে ৭ শতাংশ মানসিক রোগীই এই অসুখের শিকার
চোখে শূন্য দৃষ্টি, রঙই চিনতে পারবে না রোগী
শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন রোগী। রঙ চিনতে বা দূরত্ব বুঝতে সমস্যা হবে তাঁর (Dementia)। দৃষ্টিও ক্ষীণ হতে শুরু করবে। যা দেখবে তার প্রভাব পড়বে না ব্রেনে। অর্থাৎ রোগী কোথায় আছেন, তাঁকে কতদূরে কোথায় যেতে হবে তা বুঝতে অসুবিধা হবে।
হ্যালুসিনেশন
ডিলিউশন বা মনগড়া অলীক বিশ্বাস ও হ্যালুসিনেশন বা এমন কিছু দেখা যার বাস্তবে কোনও অস্তিত্বই নেই–এই দুই উপসর্গই দেখা দিতে থাকবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০০ জন মনোরোগীর ১-২ শতাংশ এই রোগের শিকার। কিন্তু মুশকিল হল রোগটি নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অধিকাংশ মানুষের। বস্তুত ডিমেনশিয়ার একদম গোড়ায় এই উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। হ্যালুসিনেশন হল কাল্পনিক কিছু দেখা বা শোনা। অডিটরি হ্যালুসিনেশন হলে, রোগীর মনে হবে বাইরে থেকে কোনও শব্দ বা কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে যেগুলির কোনও বাহ্যিক উৎস নেই। এরও নানা রকম প্রকাশ হতে পারে। মনে হতে পারে, এক বা একাধিক মানুষ তাঁকে নিয়ে সারা ক্ষণ কথা বলছে বা সমালোচনা করে চলেছে। বাইরে থেকে কেউ উত্যক্ত করছে, বা কেউ এমন আছে যে সারাক্ষণ তার সঙ্গে কথা বলছে।
মনে রাখতে পারবে না
রোগী যা দেখবে তা মনে রাখতে পারবে না (Dementia)। কিছুক্ষণ আগে কোথায় ছিল, কার সঙ্গে দেখা হয়েছে, কী কথা হয়েছে ইত্যাদি মনে করতে পারবে না। জায়গার নাম ভুলে যাবে, এমনকী পরিচিতের নামও মনে থাকবে না। কিছুক্ষণ আগের ঘটনাও স্মৃতি থেকে বেমালুম উবে যাবে।