
শীত পড়ছে। তাপমাত্রার পারদ যত নামছে ততই যেন বুকে পাথর চেপে বলছে। কখনও চিনচিনে ব্যথা, কখনও দমবন্ধ, হাঁসফাঁস দশা। ঘুমোতে গেলেই বুকের ভেতর সাঁই সাঁই। শ্বাস নিতে গেলে কাশির দমকে অস্থির। ঘন ঘন বুকে কফ, লাগামছাড়া হাঁচি, টান, অ্যালার্জির সমস্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁপানির টান বাড়লে বা অ্যাজমা সিভিয়ার হলে তার থেকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এমনকি শ্বাসের সমস্যা বাড়তে থাকলে ব্রেন স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বাড়ে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা অতি বিষম বস্তু। আক্রান্তেরা এর যন্ত্রণা বিলক্ষণ জানেন। হাঁপানিকে মোটেও খাটো করে দেখা উচিত নয়। এর ছোবল থেকে নিস্তার নেই, শুধু বশে রাখা সম্ভব। আর অবহেলা করলে ফল হতে পারে প্রাণঘাতী।
গোটা দেশেই দূষণ যেভাবে বাড়ছে তাতে হাঁপানি আরও প্রবলভাবে আসর জমিয়ে বসছে। দীপাবলি, ছটপুজোতে আতসবাজির বাড়বাড়ন্ত পেরিয়ে এখন শীতের কুয়াশা, গাড়ির ধোঁয়া, ফুলের রেণু, কালো ছায়ার মতো কার্বন-মনোক্সাইড সব মিলিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার রাস্তাটুকুও বন্ধ। শিশু হোক বা বয়স্ক, অ্যাজমার টান উঠে টনটনিয়ে। অল্প হাঁটলেই বুকে ব্যথা, নাক আর শ্বাসের বাতাস টানতে পারছে না অগত্যা ইনহেলার, ঘুমোতে গেলেই বুকের ভেতর যেন সাইরেন বাজছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাঁপানি কখনও একেবারে সাড়ে না। এর প্রকোপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তার জন্য সামান্য কিছু নিয়ম মানলেই চলে। ওষুধের থেকে ঘরোয়া টোটকা সহজলভ্য আর আরামও মেলে বেশি।
হাঁপানি বা অ্যাজমা (Ashthma) হয় মূলত শ্বাসনালীতে প্রদাহের কারণে। দীর্ঘকালীন প্রদাহের ফলে শ্বাসনালীর স্বাভাবিক ব্যস কমে যায় এবং সংবেদনশীলতা বাড়ে। ফলে ফুসফুসের ভিতর বায়ু ঢোকা ও বেরনোর পথ সংকীর্ণ হয়ে যায়। শ্বাসনালীর ভেতর মিউকাসের ক্ষরণ বাড়তে বাড়তে সেটা আরও সঙ্কুচিত হতে থাকে। সঠিক চিকিৎসা না হলে শ্বাসনালী পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। চিকিৎসকরা অনেক ক্ষেত্রেই বলেন অ্যাজমা বংশগত কারণে হতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে যেভাবে ধুলো-দূষণ বাড়ছে তাতে হাঁপানির সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। আরও কিছু কারণে হাঁপানির টান বাড়তে পারে।
অ্যাকিউট অ্যাজমা খুবই সাঙ্ঘাতিক। এর ট্রিটমেন্ট সঠিক সময়ে না হলে রোগীর ভোগান্তি হয় অনেক বেশি। হাঁপানির লক্ষণ এক একজনের ক্ষেত্রে এক একরকমের। সাধারণত অল্পেই হাঁপ ধরা, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে গেলে সমস্যা, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাশি হওয়া, অনবরত হাঁচি, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে গেলে বুকের ভেতর সাঁই সাঁই শব্দ, চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়া, চোখে জ্বালা—এইসবই হাঁপানির উপসর্গ। হাঁপানির সমস্যায় কখনও আগে টান ওঠে, পরে অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়। আবার ঠিক এর উল্টোটাও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিভিয়ার অ্যাজমার যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না হয়, তাহলে এর থেকে অন্যান্য রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। ব্রঙ্কিয়াল থার্মোপ্লাস্টি (বিটি) একটি ব্রঙ্কোস্কোপিক পদ্ধতি যার মাধ্যমে সিভিয়ার অ্যাজমা নিরাময় করা যায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংকীর্ণ বায়ুপথ প্রসারিত হয়ে শ্বাসের গতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে একটি ক্যাথেটার ব্যবহার করা হয়। সেটি উইন্ডপাইপের মাধ্যমে ঢুকিয়ে তাপ দেওয়া হয়। এই তাপ ফুসফুসের পেশিগুলিকে টার্গেট করে যাতে সেই পেশীগুলি সঙ্কুচিত হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে। হাঁপানি বাড়াবাড়ি পর্যায় যেতে না পারে।