
অ্যারোসল দূষণ ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে ফুসফুসকে, সিওপিডি থেকে বাঁচার উপায় বলছেন ডাক্তারবাবুরা
গুড হেলথ ডেস্ক
নিছক সর্দি-কাশির সমস্যা নয় কিন্তু। প্রথমে হাল্কা কাশি তারপর শ্বাস নিতে কষ্ট। কাশির দমক বাড়লে শ্বাসের সমস্যাও চাগিয়ে ওঠে। বুকে ঘন ঘন কফ জমতে থাকে। অল্প ঠান্ডা লাগলেই নাক বন্ধ হয়ে যায়। হাল্কা শ্বাসের সমস্যা ক্রনিক শ্বাসকষ্টে বদলে যেতে পারে। সেই সঙ্গে দুর্বল হতে পারে ফুসফুস। কৃত্রিমভাবে শ্বাস দেওয়ার দরকার পড়তে পারে। ফুসফুসের এই জটিল সমস্যার নামই সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ/COPD)।
বায়ু দূষণ জখম করছে ফুসফুসকে
বর্তমান সময়ে সিওপিডির (COPD) সমস্যা প্রায় ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। আগে মনে করা হত শুধু ধূমপানই বোধহয় এই রোগের একমাত্র কারণ। সিওপিডিকে তাই ‘স্মোকিং ডিজিজ’ বলা হত। কিন্তু ধূমপান এই রোগের একমাত্র কারণ নয়। স্মোকিং, প্যাসিভ স্মোকিং যেমন আছে, তেমনি সিওপিডির অন্যতম বড় কারণ হল বায়ু দূষণ। বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ভাসমান কণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) সহনশীলতার মাত্রা ছাড়ালেই তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে ফুসফুসে। ক্ষতিকর রাসায়নিক কণা, ধুলো, ধোঁয়া লাগাতার শ্বাসনালী দিয়ে ভেতরে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রকে অচল করে দিতে থাকে।
কলকাতার গবেষকরাই বলেছেন, ২০২৩ সালে এ রাজ্যে অ্যারোসল (Aerosol) দূষণ ৮% বৃদ্ধি পাবে। দেশে অ্যারোসল দূষণের (Air Pollution) নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান হবে বিহারের পরেই, দ্বিতীয় স্থানে। পিএম২.৫ এবং পিএম১০- এর পাশাপাশি সমুদ্রের লবণ, ধুলো, জৈব কার্বন দিয়ে তৈরি হয় অ্যারোসল। পশ্চিমবঙ্গের বাতাসে এই অ্যারোসল বা ভাসমান দূষিত কণার মাত্রা ০.৫, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণই ক্ষতিকর। গাড়ির ধোঁয়া, কারখানার দূষণ, জীবাশ্ম জ্বালি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে অ্যারোসল কণাগুলি ঘনত্বও বাড়ছে।
কী কী লক্ষণ দেখে সাবধান হবেন
সিওপিডি (COPD) হওয়া মানেই ফুসফুসের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। ক্রমাগত কাশি, রাতে কাশির দমকে ঘুম ভেঙে যাওয়া, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে হলে বুকে চাপ অনুভব করা, মাঝেমাঝেই শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে রাতে ঘুমোতে গেলে হঠাৎ করে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা ভাল লক্ষণ নয় মোটেও। তাছাড়া বুকে ঘন ঘন কফ জমে সর্দি-কাশি হতে পারে, সেখান থেকেও শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারে রোগী। এমন লক্ষণ ক্রনিক হয়ে গেলে সাবধান হতে হবে।
যানবাহনের ধোঁয়া, ধুলো, কাঠকয়লার আগুন, বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে থাকা রাসায়নিক ফুসফুসের বারোটা বাজিয়ে দেয়। অনেকে বাড়িতে মশা মারার কয়েল জ্বালান। এর থেকেও বের হয় কার্বন-মনোক্সাইড। টানা ৬-৭ ঘণ্টা এই ধোঁয়া ফুসফুসে ঢুকলে যে কোনও জটিল রোগের সম্ভাবনাই বাড়িয়ে তোলে। তাছাড়া, আবর্জনা পোড়ার ধোঁয়া, খড় পোড়া ধোঁয়া ইত্যাদিও সিওপিডির কারণ। স্মোকিং শুধু নয়, প্যাসিভ স্মোকাররাও সিওপিডিতে আক্রান্ত হতে পারে।
কীভাবে বাঁচবেন?
১) ধূমপান ছাড়ুন। সমীক্ষা বলে, বিশ্বে ৩০-৪০ কোটি মানুষ সিওপিডিতে আক্রান্ত। যাদের অধিকাংশেরই ধূমপানের অভ্যাস আছে। ছোট জায়গায় বা বদ্ধ জায়গায় যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের সিওপিডিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। টানা ১০-১২ বছর দিনে ৬-৭ ঘণ্টার বেশি ধূমপান করলে ক্রনিক ফুসফুসের রোগ ধরার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
২) যানবাহনের ধোঁয়া, ধুলো, বিষাক্ত গ্য়াস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। হাতের কাছে মাস্ক না থাকলে কাপড়, ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ভাল করে পেঁচিয়ে নিন। কোনওভাবেই বিষ বাতাসকে ফুসফুসে এন্ট্রি দেওয়া চলবে না।
৩) সুষম ডায়েট দরকার যাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ফল, সবুজ শাকসব্জি, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে রোজকার মেনুতে। দিনে ৪-৫ লিটার জল খাওয়া জরুরি।
৪) প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় রাখতে হবে শরীরচর্চার জন্য। ফ্রি-হ্যান্ড, ডিপ ব্রিদিং অতি অবশ্যই করতে হবে। ওয়েট ট্রেনিং করতে পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনেই করা উচিত (COPD)। রোজ হাঁটাও শরীরের জন্য খুব ভাল।
৫) রাতের ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। ঘুমের আগে মেডিটেশন করতে পারলে খুবই ভাল। বেশিরভাগ সিওপিডির রোগীরা কম ঘুম বা ইনসমনিয়ার রোগে ভোগেন। স্ট্রেস, উৎকণ্ঠা, মানসিক অবসাদও এর জন্য দায়ী। তাই ঘুমের আগে কোনওরকম চিন্তাভাবনা, স্ট্রেস নেওয়া চলবে না।
৬) পালমোনারি ফাংশন টেস্ট করে বোঝা যায় সিওপিডি কোন পর্যায় রয়েছে। সেই মতো ওষুধ দেওয়া হয় রোগীদের। সিওপিডির (COPD) রোগীদের অতি অবশ্যই ওষুধ নিয়ম করে খেতে হবে। লং অ্যাকটিং অ্যান্টিকলিনার্জিক ইনহেলার ব্যবহার করতে হলে তা সঙ্গে রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। বিশেষ করে নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া প্রতিষেধক নিতে হবে নিয়ম করে।