ঐন্দ্রিলা ভুগেছিলেন এই রোগে, অস্থিমজ্জার ক্যানসার সারানোর ওষুধ আসছে

গুড হেলথ ডেস্ক

২০১৫ সালে অস্থিমজ্জার ক্যানসারে (Bone Marrow Cancer) আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। তার পর ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের লড়াই। একবার নয় দু’বার ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর স্ট্রোক ও সম্প্রতি সেই লড়াইয়ে একটা দাঁড়ি পড়ল। ২৪ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যে ক্যানসারগুলিতে আক্রান্ত হন মানুষ, তার মধ্যে অন্যতম অস্থিমজ্জার ক্যানসার।

Bone Marrow Cancer

অস্থিমজ্জার (Bone Marrow Cancer) ক্যানসার ধরা পড়তেই অনেক সময় লাগে। ফলে মৃত্যুহার বাড়ে। দীর্ঘসময়ের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপিতে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়। তাছাড়া অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন খুবই সময়সাপেক্ষ, খরচও অনেক বেশি। পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা জানিয়েছেন, এমন ওষুধ তৈরি হয়েছে যা নির্দিষ্ট ডোজে রোগীকে খাওয়ালে ক্যানসার কোষের বাড়বাড়ন্ত বন্ধ হবে। ক্যানসার যদি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হয়, তাহলে তার চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। 

অস্থিমজ্জার ক্যানসারের (Bone Marrow Cancer) থেরাপিতে মোডাকাফিউসপ আলফা (modakafusp alfa) নামে একধরনের ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। অস্থিমজ্জার ক্যানসার বা মাল্টিপল মায়েলোমা সারাতে এই ওষুধ কাজে লাগবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

 Bone Marrow Cancer

মোডাকাফিউসপ একধরনের ফিউসন প্রোটিন (fusion protein) যার কাজ হল ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলিকে নষ্ট করা বা তাদের বিভাজন (Cell Division) থামিয়ে দেওয়া। এই ওষুধের দুই পর্যায়ের ট্রায়ালেই সাফল্য পাওয়া গেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। অস্থিমজ্জার ক্যানসারে ভুগছেন এমন রোগীদের এই ওষুধ চার সপ্তাহ ধরে ১.৫ মিলিগ্রাম ডোজে খাওয়ানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ক্যানসার প্রায় ৫০ শতাংশ সেরে গেছে। আরও বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষা করে সাফল্য এলেই এই ওষুধ বাজারে আনার চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

Red Bone Marrow

অস্থিমজ্জার ক্যানসার কী?

হাড়ের ভেতরে একরকম নরম স্পঞ্জের পদার্থ থাকে যাকে ম্যারো বা মজ্জা বলে। মজ্জার মধ্যে থাকে স্টেম সেল, যার থেকে লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট তৈরি হয়। লোহিত রক্তকণিকা অক্সিজেন বয়ে নিয়ে যায়, শ্বেত রক্তকণিকা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখে। অনুচক্রিকা ঠিক মতো তৈরি না হলে রক্ত জমাট বাঁধে না।  অস্থিমজ্জার ভিতরে এই রক্ত কণিকাগুলি তৈরি হয়ে শিরা-উপশিরা মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয়। যদি স্টেম কোষগুলির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুরু হয় তখন ক্যানসার হয়।

অস্থিমজ্জার ক্যানসার আর হাড়ের ক্যানসার এক নয়। এর কিছু উপসর্গ আছে, যেমন– প্রচণ্ড শারীরিক দুর্বলতা, সবসময় গলা শুকিয়ে যাওয়া, বারে বারে প্রস্রাব পাওয়া, হাড়ে ব্যথা, পেশির ব্যথা, খিদে কমে যাওয়া, ওজন অস্বাভাবিক কমতে থাকা, মাথা ঘোরা, কিডনির রোগও দেখা দিতে পারে।

এর প্রতিকার হল নষ্ট হয়ে যাওয়া অস্থিমজ্জা বাতিল করে সুস্থ স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা, যা অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ওষুধ দিয়ে স্টেম কোষের অস্বাভাবিক বিভাজন কমানোর চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা।