
মৃত শুয়োরের মস্তিষ্ক জাগছে, বেঁচে উঠছে মরা কোষ, সাঙ্ঘাতিক গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা
গুড হেলথ ডেস্ক
মরে যাওয়ার পরেও কি মস্তিষ্ক (Brain Cells) জেগে ওঠে? বেঁচে ওঠে মরা কোষ?
বিজ্ঞানে মনে হয় সবই সম্ভব। মৃত মস্তিষ্কেও প্রাণ সঞ্চার করা সম্ভব।
না, কোনও সায়েন্স ফিকশনের গল্প নয়। মেরি শেলীর লেখা কাল্পনিক চরিত্র ডাক্তার ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মৃত মানুষের মস্তিষ্ক জাগিয়ে প্রাণ সঞ্চার করে দানব তৈরি করেছিলেন। এই গবেষণা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন না হলেও একে ফ্রাঙ্কেনসোয়াইন (FrankenSWINE) অনেংকাশেই বলা যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এক সাঙ্ঘাতিক গবেষণা করছেন। এই গবেষণা সফল হলে মস্তিষ্কের অনেক দুরারোগ্য ব্য়ামো সারানো সম্ভব হবে। মরে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের কোষ বা ব্রেন সেলকে আবারও জাগিয়ে তোলা সম্ভব হবে। অ্যালঝাইমার্সের মতো অসুখ সারানোও হয়ত সম্ভব হবে অদূর ভবিষ্যতে।
সে যাই হোক, গবেষণাটা হচ্ছে ব্রেন সেল রিঅ্যাক্টিভেট ( Reactivating dead brain cells) করা অর্থাৎ নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া মস্তিষ্কের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা। ৩২টি মৃত শুয়োরের মস্তিষ্কের কোষকে আবারও জাগিয়ে তুলছেন বিজ্ঞানীরা।
অসাধ্য সাধন, মরে যাওয়া কোষ জাগছে, প্রবাহিত হচ্ছে তরঙ্গ
২০১৯ সালে ইয়েল ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্টরা ‘নেচার’ সায়েন্স জার্নালে একটি প্রতিবেদন ছাপেন। সেখানে তাঁরা বলেন, মৃত শুয়োরের মস্তিষ্কের কিছু কোষকে (Brain Cells) কীভাবে ফের জাগিয়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা চলছে। গবেষণার জন্য কোনও প্রাণী হত্যা করা হয়নি। কষাইখানা থেকে মৃত শুয়োরের ব্রেন সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। ৩০০টি মৃত প্রাণীর মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এখনও অবধি ৩২টি মৃত মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষক স্টেফানো ড্যানিয়েল বলছেন, অত্যন্ত রহস্যজনক এই গবেষণা। মস্তিষ্কের এমন কিছু রহস্যময় কোষ (Brain Cells) আছে যারা মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরেও বেঁচে থাকে। হৃদযন্ত্রের কাজকর্ম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেই মানবমস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেল, তা নয়। তার পরেও সক্রিয় থাকে মানবমস্তিষ্কের কয়েকটি কোষ। তাদের সক্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে সেইসব কোষেরও মৃত্যু হয়। সেই মৃত কোষগুলিতে আবারও প্রাণ সঞ্চার করার কাজই করছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষকরা বলছেন, জীবিতের মতো মস্তিষ্ক পুরোপুরি সক্রিয় হচ্ছে এমনটা নয়, ল্যাবরেটরিতে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের কোষগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে।
ব্রেন-এক্স(BrainEx) ইতিহাস গড়তে পারে এই গবেষণা
মানুষের মস্তিষ্ক দিয়ে যদি বোঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, মস্তিষ্কের মূল উপাদান হল স্নায়ুকোষ বা নিউরোন। মস্তিষ্কে হাজার কোটি নিউরন থাকে। এই কোষগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত পরিবহন করতে পারে। এই সংকেতই মস্তিষ্ককে সচল রাখে। নিউরনের দুই প্রান্তে শাখাপ্রশাখার মতো অংশ থাকে যাকে বলে ডেনড্রাইট, আর সুতোর মতো অংশটিকে বলে অ্যাক্সন। ডেনড্রাইট হল অ্যান্টেনার মতো যা সংকেত গ্রহণ করে। অ্য়াক্সন সেই সংকেত বয়ে নিয়ে যায় অন্য ডেনড্রাইটে। দুই বা তার বেশি নিউরনের সংযোগস্থলকে বলে সিন্যাপস, এখানেই সংকেতের আদানপ্রদান হয়। মানুষের ক্ষেত্রে কর্টেক্সে দশ হাজারের মতো সিন্যাপস থাকে। মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে এই সংকেত আদানপ্রদান বন্ধ হয়ে যায়। সংকেতের এই আদানপ্রদান বিদ্যুৎ তরঙ্গ প্রবাহিত হওয়ার মতো। দেখা গেছে মস্তিষ্কের মৃত্যুর (Brain Cells) পরেও কিছুক্ষণ কোষে কোষে আলফা ও গামা তরঙ্গ প্রবাহিত হয়। ফলে মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরেও ব্রেন কিছুক্ষণ অ্যাকটিভ থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ব্রেন-এক্স এমন একটা পদ্ধতি যেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়া রাসায়নিকের সংমিশ্রণ মৃত ব্রেনের কোষের ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর থেকে শুয়োরের মৃত মস্তিষ্কের কোষে এই পদ্ধতিতে ট্রিটমেন্ট শুরু হচ্ছে। ছ’ঘণ্টা পর থেকে দেখা যাচ্ছে, কোষের মৃত্যুহার কমছে। নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া কোষগুলিতে ফের প্রাণের সঞ্চার হচ্ছে। বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহিত হতে শুরু করেছে।
জরায়ু মুখ ঢিলে, ধরে রাখতে পারছে না ভ্রূণ, গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকলেও চিকিৎসা আছে
মানুষের মস্তিষ্ক মনুষ্যেতর প্রাণীদের থেকে অনেক বেশি জটিল। ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং নিউরোসায়েন্স’-সায়েন্স জার্নালে একটি গবেষণার খবর ছেপেছিল। তাতে বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, মৃত্যুর ৩০ সেকেন্ড পরেও সক্রিয় থাকে মানব মস্তিষ্ক। ইলেকট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি (ইইজি) যন্ত্রে বিজ্ঞানীরা দেখেছিলেন এই সময় তরঙ্গেরা দৌড়োদৌড়ি করে মস্তিষ্কে (Brain Cells)। ফলে মৃত্যুর পরেও জীবনের অনেক স্মৃতিই ভেসে উঠতে পারে মস্তিষ্কে। কীভাবে তা সম্ভব হয় এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। হিউম্যান ব্রেন নিয়ে অনেক জটিল গবেষণায় আগামী দিনে হয়ত তা জানা যাবে। তবে এই গবেষণা সফল হলে ভবিষ্যতে অটিজম, অ্যালঝাইমার্স, স্ক্রিজোফ্রেনিয়ার মতো কয়েকটি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্ককে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়ত সম্ভব হবে।