১০০ বছর অন্তর ফিরে আসছে মৃত্যুর কালো ছায়া, বিউবনিক প্লেগের উৎস খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

গুড হেলথ ডেস্ক

৭০০ বছর আগে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা জুড়ে তাণ্ডব করেছিল ব্ল্যাক ডেথ (Bubonic plague)। মৃত্যু কালো ছায়া নামিয়েছিল বিশ্বে। কোটি কোটি মানুষের প্রাণ কেড়েছিল ভয়ঙ্কর এক মহামারী। এর পর প্রতি ১০০ বছর অন্তরই ফিরে এসেছে ব্ল্যাক ডেথ। নানাভাবে, নানা দেশে। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর সময়েও চিনে বিউবনিক প্লেগের উপদ্রব শুরু হয়েছিল। প্রাণ গিয়েছিল বহু মানুষের। কী কারণে এই রোগ ফিরে ফিরে আসছে,  কী তার উৎস, এত বচর ধরে তা খুঁজতেই হয়রান হতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। এতদিনে এই মহামারীর আসল কারণ ও রোগের উৎস খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ম্য়াক্স প্ল্যাঙ্ক ইউনিভার্সিটির অ্য়ানথ্রোপলজি বিভাগের গবেষকদের একটি টিম বিউবনিক প্লেগের কারণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। বিজ্ঞানী জোহানেস ক্রৌস বলেছেন, ৭০০ বছর আগে ইউরোপ, আফ্রিকার যে এলাকাগুলিতে প্লেগে মৃত্যু হয়েছিল হাজার হাজার মানুষের সেখানকার কবরস্থানগুলি খুঁড়ে খোঁজ শুরু হয়। কঙ্কালের নাক ও দাঁতের জায়গা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছিল। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এই রোগের (Bubonic plague) উৎস, ব্যাকটেরিয়ার অরিজিন, কীভাবে ভোল বদলে বারে বারে ফিরে এসেছে মহামারী তার কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Bubonic Plague

চতুর্দশ শতাব্দীতে ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকায় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল বিউবনিক প্লেগ। মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ কোটি মানুষের। এর নাম দেওয়া হয়েছিল ব্ল্যাক ডেথ।

Black Death Symptoms

ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৩০-৬০ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে। মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে এই রোগের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। এরপর এটি সিল্ক রোড হয়ে ১৩৪৩ সালের দিকে ক্রিমিয়া অবধি ছড়িয়ে পড়ে। বণিকদের জাহাজে ইঁদুর থেকে রোগ ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে জানা যায়।

করাচিতে বিউবনিক প্লেগ, ১৮৯৭

কী এই বিউবনিক প্লেগ (Bubonic plague)?

ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস নামে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগ হয়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের অন্তত সাতদিন পরে জ্বর, সর্দি-কাশি, পেট খারাপ-বমির মতো উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। ত্বকের যেখান দিয়ে ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে সেখানকার লসিকাগ্রন্থি ফুলে ফেটে যায়। জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা শুরু হয়। এই জাতীয় সংক্রামক রোগ ছড়ায় মূলত ইঁদুর বা ওই জাতীয় প্রাণীর থেকে। মধ্যবর্তী বাহক হল মাছি। প্রাণীর মৃতদেহ, মল-মূত্র থেকে মাছি বাহিত হয়ে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। করোনার মতো বিউবনিক প্লেগও ছোঁয়াচে।  মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। জ্বর, সর্দি-কাশি, বমি, মাথাব্যথা, পেশী সংকোচন এই রোগের উপসর্গ। সংক্রমণ যদি বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে  খিঁচুনি, রক্তবমির মতো উপসর্গও দেখা দেয়। চিকিৎসকরা বলেন, সঠিক সময় রোগীর ট্রিটমেন্ট না হলে মৃত্যু ঘটতে পারে।

ঋতুস্রাব কম হচ্ছে? মাঝেমধ্যেই স্পটিং? জানুন কখন ডাক্তার দেখাতে হবে

The Plague / Black Death

জার্মানির বিজ্ঞানীরা ১২৪৮ থেকে ১৩৮০ অব্দের মধ্য়ে কবর দেওয়া মানুষজনের কঙ্কাল খুঁজে বের করেন। ১১৮টি কবর খুঁড়ে প্লেগে মৃত রোগীদের কঙ্কাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস ব্য়াকটেরিয়ার ডিএনএ পাওয়া গেছে সেই নমুনায় (Bubonic plague)। এই ব্যাকটেরিয়াদের একদম আদিম প্রজাতির খোঁজ মিলেছে যাদের থেকে মহামারী তৈরি হয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার সেই অরিজিনের জিনোম সিকুয়েন্স বা জিনের বিন্যাস বের করছেন বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণা সফল হলে, আরও অনেক মহামারী রুখে দেওয়া যাবে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।