পেঁপে পাতার রসে কি প্লেটলেট বাড়ে? ডেঙ্গিতে কতটা উপকারি গুলঞ্চ

ডেঙ্গি (Dengue) হলে সবচেয়ে আগে ডিহাইড্রেশন হয় রোগীর। সেই সঙ্গে পেটে ব্যথা, বমি, মাথা ঘোরা, শ্বাসকষ্ট এইসব লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে তখন শরীরের নানা জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যাকে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার বলে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ডেঙ্গি হলে সবচেয়ে আগে রোগীর ফ্লুইড থেরাপি শুরু করতে হয়। বেশি করে জল ও তরল খাবার খাওয়াতে হয় রোগীকে। এমনও শোনা যায়, ডেঙ্গি রোগীদের নাকি পেঁপে পাতার রস খাওয়ালে খুব উপকার হয়। গুলঞ্চও (Giloy) নাকি ডেঙ্গিতে খুব উপকারি।

পেঁপে (Papaya) বা গুলঞ্চ (Giloy) খেলে ডেঙ্গি রোগীর প্লেটলেট বাড়ে কিনা সে ব্যাপারে কোনও গবেষণালব্ধ প্রমাণ নেই। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (কমিউনিটি মেডিসিন) ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ অনির্বাণ দলুই বলছেন, ডেঙ্গি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। পেঁপে খেলে রোগীর প্লেটলেট বাড়বে এমনটা ভাবার কারণ নেই। তাই ডেঙ্গি রোগীকে যথেচ্ছ পেঁপে পাতার রস বা গুলঞ্চ খাইয়ে ফেলে রাখা ঠিক নয়। তাতে রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকেই যাবে।

How to use papaya leaves to fight dengue

তবে ডাক্তারবাবুরা বলছেন, পেঁপে এবং গুলঞ্চ– এই দুইয়েরই কোনও ক্ষতিকর প্রভাব নেই। পেঁপে শরীরের জন্য খুবই ভাল। আর গুলঞ্চ এমন এক বনৌষধি, সংস্কৃতে যাকে ‘অমৃত’ বলা হয়। গুলঞ্চের পাতা ও কাণ্ড মূলত আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহার হয়। আয়ুর্বেদে গুলঞ্চ থেকে তৈরি ওষুধ নানা রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে।

 Papaya

এখন দেখে নেওয়া যাক পেঁপে আর গুলঞ্চের উপকারিতা কী কী?

পেঁপে পাতায় প্রচুর পরিমাণে কেমোপ্যাপাইন ও প্যাপাইন এনজাইম থাকে যারা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। লিভারের জন্যও খুব ভাল। তাই পেঁপে খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতিই হবে।

পেঁপের বীজের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে পরিপাক প্রক্রিয়া ভাল থাকে। হজমের সমস্যা থাকলে এই ঘরোয়া উপায়ে তা দূর করতেই পারেন। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে।

কয়েকটি পেঁপে পাতা নিয়ে সেগুলো ভাল করে ধুয়ে ব্লেন্ড করুন। এবার তা ছেঁকে রসটুকু বের করে নিন। দিনে দুই টেবিল চামচ করে দু’বার খেতে পারেন। প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেলেও উপকার হবে। প্লেটলেট বাড়বে কিনা জানা নেই, তবে এর কোনও খারাপ প্রভাব নেই।

Giloy Health Benefits

গুলঞ্চকে বলা হয় মহৌষধ। এতে জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালশিয়াম, টাইটানিয়াম, ক্রমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, ব্রমিন, ষ্ট্রোনশিয়াম, পটাশিয়ামের মতো সব খনিজই মজুত এতে। গুলঞ্চের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টিডোট, অ্যান্টি-হাইপারগ্লাইসেমিক, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অ্যালার্জিক উপাদান একে মহৌষধে পরিণত করেছে।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে গুলঞ্চ জন্ডিস, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, ডেঙ্গি জ্বর, আমাশা, গনোরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ, রক্তশূন্যতা, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, পাইলস, কিডনির রোগের ওষুধ, এমনকি সাপের বিষের অ্যান্টিডোট হিসেবেও ব্যবহার হয় বলে লেখা আছে।