
ডেঙ্গি ভাইরাস চরিত্র বদলাচ্ছে, ডেনভি-৩ প্রজাতিই কি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে?
গুড হেলথ ডেস্ক
ডেঙ্গির(Dengue) চরিত্র বদলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তার মানে বাহক মশার শরীরে কি মিউটেশন হচ্ছে ডেঙ্গি ভাইরাসের? ঠিক করোনার মতোই ভোল পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গি? উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গি হলে তার প্রধান উপসর্গ ছিল রক্তে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেট কমে যাওয়া। এখন দেখা যাচ্ছে, অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমে যাচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকদের পাশাপাশি উদ্বেগে পুরসভাও। কিছুদিন আগেই কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন।
এর থেকে সন্দেহ দানা বাঁধছে যে ডেঙ্গি ভাইরাস করোনার মতোই ভোল পাল্টাচ্ছে। তাছাড়া করোনা ও ডেঙ্গি একসঙ্গে হলে সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ইদানীংকালে ডেঙ্গি আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই হেমারেজিক ফিভার ধরা পড়েছে। আগে ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোম কমজনেরই হত। এখন ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভারে আক্রান্ত হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুও হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডেঙ্গি (Dengue) ভাইরাসের সংক্রামক প্রজাতি হানা দিয়েছে, সে কারণেই উপসর্গ ও রোগের চরিত্রে বদল আসছে।
রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়াল, পুরকর্মীদের ছুটি বাতিলের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে
কলকাতার ৫০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের নমুনা সেরো-পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল ফুলবাগানের আইসিএমআর-নাইসেডে। তাঁদের মধ্যে ৩৫ জনের শরীরেই পাওয়া গেছে ডেঙ্গি অতি সংক্রামক ডেন-থ্রি বা ডেনভি-থ্রি প্রজাতি। ডেঙ্গি ভাইরাসদের (Dengue) মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক ও প্রাণঘাতী। মশার লালা থেকে মানুষের শরীরে ঢুকে দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে। সঠিক সময় চিকিৎসা না হলে মৃত্যু অবধারিত। একসময় বাংলাদেশে এই প্রজাতির সংক্রমণে রোগ মহামারীর মতো ছড়িয়েছিল। এখন বাংলায় ডেনভি-থ্রির সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কী এই ডেনভি-থ্রি প্রজাতি?
ডেঙ্গির বাহক মশা, কিন্তু আসল কলকাঠি নাড়ে ডেঙ্গু ভাইরাসরা (DENV)। এরা হল সিঙ্গল, পজিটিভ-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস। ফ্ল্যাভিভিরিডি পরিবার ও ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের এই ডেঙ্গি (Dengue) ভাইরাসের পরিবার অনেক বড়। এদের পাঁচ রকমের সেরোটাইপ আছে যারা প্রত্যেকেই ভয়ঙ্কর রোগ তৈরি করতে পারে। স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই (aedes aegypti) মশা এই ভাইরাসদের বাহক। এরা আবার ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক।
ডেনভি ভাইরাসের চারটি ভ্যারিয়ান্টই সংক্রামক—ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩ ও ডেনভি-৪। এদের মধ্যে ডেনভি-৩ ভাইরাস অতি সংক্রামক। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে ডেনভি-৩ ভাইরাস চিহ্নিত করেন গবেষকরা। এর ভ্যারিয়ান্ট নির্দিষ্ট কিছু ভৌগোলিক অঞ্চলেই সংক্রমণ ছড়ায়। কত দ্রুত মানুষের শরীরে এই ভাইরাস রোগ ছড়াতে পারে তা দেখতে একটা সময় ‘ডেনভি-৩ লাইভ হিউম্যান চ্যালেঞ্জ’ (DENV-3-LVHC) নামে ক্যাম্পেনও করা হয়েছিল। সেখানে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের রক্তের নমুনা নিয়ে ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা।
কীভাবে মানুষের শরীরে ছড়ায় এই ভাইরাস?
স্ত্রী মশা পেটে এই ভাইরাস (Dengue) বয়ে নিয়ে যায়। ভাইরাস আক্রান্ত শরীরের রক্ত খেলে সেখান থেকেও ভাইরাস বাসা বাঁধে মশার শরীরে।
তবে, মশার উপরে এই ভাইরাসের ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে না। প্রায় ৮-১০ দিন পরে ভাইরাস মশার দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে ও মশার লালাগ্রন্থির মাধ্যমে লালাতে এসে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ডেঙ্গি ভাইরাস বহনকারী মশা মানুষকে কামড়ালে লালার মধ্যে থাকা ভাইরাসরা চট করে ঢুকে যায় মানুষের রক্তে। সরাসরি ঢুকে পড়ে শ্বেত রক্তকোষে।
তারপর সেই কোষগুলি যখন শরীরের ভিতর ঘুরেফিরে বেড়ায় তখন সেগুলির ভিতরে এই ভাইরাস প্রজনন চালিয়ে যায়। সংখ্যায় বাড়তে বাড়তে দেহের রোগ প্রতিরোধের দফারফা করে দেয়। যার প্রভাবেই সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা-সহ জ্বর, সঙ্গে বমি বমি ভাব, চোখের পিছনে ব্যথা এবং সারা শরীরে র্যাশ। ডেঙ্গি হেমারেজিক হয়ে গেলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাবে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। ক্রনিক অসুখ আছে যাদের যেমন ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, অ্যানিমিয়া, টিবি আছে তাদের এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গি প্রাণঘাতী হতে পারে।