
Fat Removal Surgery: রোগা হতে গিয়ে ভয়ঙ্কর মৃত্যু অভিনেত্রীর, মেদ ঝরানোর সার্জারি কতটা নিরাপদ
গুড হেলথ ডেস্ক
চটজলদি ওজন কমাতে গিয়েছিলেন (Fat Removal Surgery)। জিম, ডায়েটের ওপর খুব বেশি ভরসা না করে মেদ ঝরানোর সার্জারি করিয়েছিলেন চেতনা রাজ। রোগা হওয়ার এই আকুলিবিকুলিই কাল হল তাঁর। ওজন কমে স্লিম হলেন ঠিকই, কিন্তু শরীর সইতে পারল না। মাত্র ২২ বছরে মৃত্যু হল কন্নড় অভিনেত্রী চেতনা রাজের। এর সঙ্গেই উঠে এল হাজারো প্রশ্ন। মেদ ঝরানোর জন্য এইসব অস্ত্রোপচার কতটা নিরাপদ? রোগা হওয়ার জন্য এখন প্রচণ্ড হুড়োহুড়ি। শরীরচর্চার পথে না গিয়ে ভুলভাল ডায়েট, নানারকম অপারেশনের পথে ঝুঁকছেন মেয়েরা। আর তাতেই বিপদ ঘনাচ্ছে।
মনে পড়ে, এক উঠতি মডেল রোগা হতে গিয়ে দিনের পর দিন কিছু না খেয়ে থাকতেন। শেষে কঙ্কালসার চেহারা হয়েছিল তাঁর। এর পরে স্বাভাবিক ডায়েটে ফিরে এসেও লাভ হয়নি। মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। নিয়ম না মেনে ডায়েট করতে গিয়ে নানারকম শারীরিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন মেয়েরা, ভুল ডায়েটে প্রাণও যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই এই ধরনের খবর শোনা যায়। কন্নড় অভিনেত্রী চেতনা রাজের মৃত্যু নিয়েও তোলপাড় হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। ওজন কমানোর অপারেশন করার পরে অর্থাৎ পোস্ট সার্জারি পর্বেই এমন জটিলতা তৈরি হয় চেতনার যে ডাক্তাররা শত চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি। জানা গেছে, তাঁর ফুসফুসে জল জমতে শুরু করেছিল, শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি, আরও নানা রকম জটিলতা দেখা গিয়েছিল। শুধুমাত্র রোগা হতে গিয়েই মাত্র ২২ বছরে প্রাণ হারালেন চেতনা।
মেদ ঝরানোর কী কী সার্জারি আছে (Fat Removal Surgery)?
ওজন কমানোর বা ফ্যাট রিম্যুভাল সার্জারি সাধারণত দু’রকমের–১) বেরিয়াট্রিক সার্জারি ২) লাইপোসাকশন বা কসমেটিক সার্জারি।
ডায়েট ও শরীরচর্চা করেও যখন ওজন কমানো যায় না, তখন অনেকেই বেরিয়াট্রিক সার্জারি (Fat Removal Surgery) করে অতিরিক্ত ফ্যাট কমিয়ে ফেলেন। বেরিয়াট্রিক সার্জারি হল এমন এক পদ্ধতি যেখানে পাকস্থলীর কিছু অংশ কেটে তার খাদ্য ধারণ ক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলা হয়। সহজ করে বললেন, আমরা যে খাবার খাই তা স্টমাক বা পাকস্থলীতে গিয়ে জমা হয়। এখন কতটা খাবার আমরা খাচ্ছি এবং তার থেকে কতটা শক্তি বা এনার্জি তৈরি হচ্ছে তার একটা নির্দিষ্ট অনুপাত থাকে। যদি এর হেরফের হয়, ক্যালোরির মাত্রা বেড়ে যায় তখন সেটা মেদ তৈরি করে। যত বেশি ক্যালোরি ঢুকবে পাকস্থলী একেবারে বড় হয়ে উঠবে। মেদ বাড়বে, তার থেকে নানা রোগ হবে। এই যে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরে ঢুকছে এবং শরীরও তা শুষে নিচ্ছে, সেই প্রক্রিয়াটা বন্ধ করার জন্যই একরকম অস্ত্রোপচার করা হয়। পাকস্থলীর আকার প্রায় ২০ শতাংশ ছেঁটে ফেলে তার ধারণ ক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলা হয়। একেই বলে বেরিয়াট্রিক সার্জারি।
বিএমআই অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স ২৫ পর্যন্ত হওয়া মানে স্বাভাবিক। ২৫ থেকে ২৯ বেশি ওজন, ৩০ বা তার বেশি মানে ওবিস এবং বিএমআই ৩৫ এর থেকে বেশি মানে মরবিড ওবিস। ৪০ ছাড়িয়ে গেলে বিপজ্জনক। হাই বিএমআই ও এর সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বা অন্যান্য রোগ থাকলে তখন বেরিয়াট্রিক সার্জারি করেন অনেকে।
লাইপোসাকশন শরীরের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় করা হয়। আসলে প্লাস্টিক সার্জারি। বগলের ঠিক নীচের জায়গা, থাই, তলপেট, নিতম্ব ইত্যাদি জায়গায় অতিরিক্ত মেদ জমলে যেখানে সার্জারি না করে সাকশন করে ফ্যাট বের করে দেওয়া হয়। লাইপোসাকশনে ওজন সেভাবে কমে না, দেহের আকার-আকৃতিকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মেদের স্তরকে ভেঙে ফেলা হয়।
পোস্ট-সার্জারি পর্বে নিয়ম মানতে হয়, না হলেই বিপদ
বেরিয়াট্রিক সার্জনরাই বলছেন, বেরিয়াট্রিক সার্জারি করালেই রাতারাতি রোগা হওয়া যায় না। এই অপারেশনের পরে অনেক নিয়ম মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। অনেকে খাওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন না। এ ক্ষেত্রে অপুষ্টি জনিত মারাত্মক রোগের শিকার হতে হয়। সিভিয়ার ম্যালনিউট্রিশন হতে পারে। আবার অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে বমি হতে পারে। পাকস্থলী কিন্তু ইলাস্টিকের মতো, বেশি খাবার ঢোকালে সেটা ফুলে উঠবে। এদিকে ধারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত করে দেওয়ার জন্য বিপাক, শোষণ দুই কম হবে। যার ফলে বাড়তি খাবার জোর করে ঢোকালে তা শরীরের ক্ষতি করবে। তাই সার্জারির পর নিয়মিত ফলো আপ এবং সঠিক ডায়েট প্রোটোকল অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।
Ghee: ঘি খেলেও ওজন কমবে, খালি পেটে এক চামচ কত যে উপকারি
লাইপোসাকশনের ক্ষেত্রেও তাই। অনিয়ম হলেই বিপদ হবে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, বেরিয়াট্রিক সার্জারির পরে দু’ধরনের সমস্যা হতে পারে–অ্যানাস্থেশিয়া ঠিকমতো না হলে তাতে ঝুঁকি বাড়ে, দ্বিতীয়ত অনেক সময়েই ফুসফুসে জল জমতে পারে বা ব্লাড ক্লট হতে পারে। চেতনা রাজের এমন সমস্যাই হয়েছিল। তাই অস্ত্রোপচারের পরে ২১ দিন অবধি পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বা খাওয়াদাওয়া করলেই জটিলতা বাড়তে পারে। পরিণামে মৃত্যুও হতে পারে।