বাচ্চাদের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডেঙ্গি-কোভিড-ম্যালেরিয়া না অন্য কিছু, বুঝবেন কী করে?

গুড হেলথ ডেস্ক

রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ডেঙ্গি জ্বর। কলকাতা শহর ও তার সন্নিহিত জেলাগুলিতে ডেঙ্গি (Dengue) মারাত্মক আকার নিয়েছে। মৃত্যু বাড়ছে, আক্রান্তের সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। ডেঙ্গির পজিটিভিটি রেট চিন্তা বাড়িয়েছে রাজ্য় স্বাস্থ্য দফতরের। গতকালই কলকাতায় ১৪ বছরের এক কিশোরী প্রাণ হারিয়েছে ডেঙ্গিতে। এর আগে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভারে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন,  অনেক বাচ্চারই কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (Child Fever) আসছে, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমিভাব দেখা যাচ্ছে। পেটের সমস্যা, ডায়েরিয়ায় ভুগছে অনেক শিশু। কী রোগ হয়েছে তা ধরতেই অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া (Malaria), কোভিড (Covid) নাকি রেসপিরেটারি ভাইরাসের (Respiratory Virus) সংক্রমণ, সেটা লক্ষণ দেখে আঁচ করতে পারলে তার ডায়াগনসিসও ঠিকমতো হবে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, এই সময় বাচ্চাদের জ্বর (Child Fever) হলে এবং তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে সতর্ক হতে হবে। ভাইরাল জ্বর ভেবে এড়িয়ে গেলে বিপদ বাড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন যা পরিস্থিতি তাতে রোগের সঠিক লক্ষণ চিনে নেওয়া জরুরি। সেই মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে।

Malaria And Dengue

বাচ্চার জ্বর, লক্ষণ দেখে কীভাবে বুঝবেন কী রোগ হয়েছে?

১) ধরুন বাচ্চার জ্বর (Child Fever) কমছে না, তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চেকআপ করাতে হবে। ডেঙ্গিতে প্লেটলেট কমতে থাকে, করোনার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আবার আলাদা, প্লেটলেট বেড়ে যায়। এখন ডেঙ্গির উপসর্গে অনেক বদল এসেছে। জ্বরের সঙ্গেই পেট খারাপ, বমিভাব, ঝিমুনি, মাথাব্যথা, শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে। ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার হলে নাক-মুখ, মলদ্বার, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরোবে। তাই ডেঙ্গি টেস্টের (এনএস১/non-structural protein NS1) সঙ্গে কোভিড টেস্টও মাস্ট।

আরও পড়ুন: শব্দ দূষণের মাত্রা বিপদসীমা ছাড়াচ্ছে, ৬০ শতাংশ শিশু বধিরতার শিকার হবে: হু

২) কোভিড রোগীর ডেঙ্গি হতে দেখা গেছে, কাজেই দুই রোগ সহাবস্থান করতে পারে এমন প্রমাণ মিলেছে। ডেঙ্গির সঙ্গে যদি করোনাও হয়, তাহলে ব্যাপারটা জটিল হতে পারে। ডেঙ্গি ও করোনা–দুইই আরএনএ ভাইরাস। এর মধ্যে যদি ডেঙ্গির ডেনভি-৩ সেরোটাইপের সংক্রমণ হয় এবং করোনাও ধরা পড়ে, তাহলে হেমারেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বাচ্চার জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বমি–এই লক্ষণগুলো দেখলেই দ্রুত টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়িতেই প্রচুর জল ও তরল খাবার খাওয়াতে শুরু করুন।

Dengue, malaria on the rise

৩) ম্যালেরিয়া মানেই প্রচণ্ড কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমি ভাব চলতেই থাকে। সাধারণত ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হলে ম্যালেরিয়া টেস্ট করাতেই হবে।

৪) ম্যালেরিয়া চেনার আরও কিছু লক্ষণ আছে। রোগীর কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসার পাশাপাশি প্রচণ্ড মাথা ব্যথা হবে, সঙ্গে গা হাত পা ব্যথা ও শরীর ম্যাজম্যাজ করবে। নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বর আসবে, এবং টানা কিছুদিন জ্বর থাকবে। গা বমি ভাব থাকবে ও বমি হতে পারে, শীত শীত ভাব থাকবে, বুকে ও পেটে ব্যথা হবে।

৫) এই সময় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণও বেড়েছে। জিকার প্রাথমিক লক্ষণ ডেঙ্গির মতোই। যদি দেখেন, একটানা এক সপ্তাহ জ্বর, নাক থেকে জল পড়া, মাথা ব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করানো দরকার। শুধু তাই নয়, অনেক রোগীর আবার জ্বর, মাথা ব্যথা, নাক থেকে জল পড়ার পাশাপাশি কনজাংটিভাইটিস, গাঁটে ব্যথাও দেখা দিতে পারে।

৬) রেসপিরেটারি ভাইরাসের সংক্রমণেও বাচ্চাদের জ্বর, পেট খারাপের মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। সর্দি-কাশি, ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া, গলায় ব্যথা, সেই সঙ্গে পেট খারাপ, ডায়েরিয়া, ঘন ঘন বমি হলে হাসপাতালে ভর্তি করতেই হবে।