
থাইরয়েডের সমস্যায় বহু মহিলাই ভোগেন, কিন্তু ঠিক কী কারণে এই সমস্যা হয়, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা খুব কমজনেরই থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, ডায়েট ও এক্সারসাইজ করেও ওজন কমছে না। শরীরে ফুটে ওঠা কিছু লক্ষণ দেখে তখন ডাক্তারবাবুরা টেস্ট করাতে বলেন। দেখা যায় থাইরয়েডের কারণেই ওজন বেড়ে চলেছে। বেশিরভাগ মহিলাই বুঝতে পারেন না থাইরয়েড হয়েছে কিনা। ফলে ওষুধ খেতেও দেরি হয়ে যায়। আর থাইরয়েড হলে তার থেকে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা শুরু হতে থাকে। থাইরয়েডের কারণে মাতৃত্বেও বাধা আসতে পারে।
থাইরয়েড (Thyroid) একটি গ্রন্থি যা আমাদের গলায় শ্বাসনালির সামনের দিকে থাকে। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন বিপাক ক্রিয়া, বাচ্চাদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা, বুদ্ধির বিকাশ, বয়ঃসন্ধির লক্ষণ, মহিলাদের ক্ষেত্রে ঋতুচক্র, গর্ভধারণ—এগুলি নির্ভর করে থাইরয়েড গ্রন্থির থেকে নিঃসৃত হরমোনের ওপরে। থাইরয়েড হরমোন দু’প্রকার টি-থ্রি ও টি-ফোর। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোন থাকে। কোনও কারণে এই হরমোনগুলি বেড়ে বা কমে গেলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। থাইরয়েড গ্রন্থি নিঃসৃত হরমোন বেড়ে গেলে হয় হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism) আর কমে গেলে হয় হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidsm)। হাইপোথাইরয়েডিজমে ওজন কমে যায়, আর ওজন বাড়ার সমস্যা দেখা যায় হাইপারথাইরয়েডিজমে।
যদি আচমকাই আপনার ওজন খুব বেড়ে বা কমে যায়, ভয়ানক ক্লান্তি গ্রাস করে, ত্বক খসখসে হয়ে পড়ে, ডিপ্রেশন দেখা দেয় বা গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা হয় তা হলে কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বুঝতে হবে আপনার থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ঠিকমতো কাজ করছে না। প্রতিটি কোষের কাজকর্মের উপর থাইরয়েডের সরাসরি প্রভাব পড়ে, তাই বেশিদিন ফেলে রাখলে হরমোনের স্তরেই ভারসাম্যহীনতা দেখা দেবে।
যদি থাইরয়েডের কারণে ওজন বাড়তে থাকে তাহলে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়ায় বিশেষ নজর দিতে হবে। বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, ছোলা জাতীয় খবার থাইরয়েড বাড়ায়। এ ছাড়াও সর্ষে, মুলো, রাঙা আলু, চিনে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভাল। থাইরয়েড বেড়ে গেলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ ডায়েট থেকে বাদ দিন।
কপার এবং আয়রন দুটোই থাইরডের মোকাবিলা করতে জরুরি। টাটকা মাংস, ওয়েস্টার, কাজু, গমের আটা, কোকতে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। সবুজ শাকসবজি, বিন, আঁশওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পোলট্রির ডিমে রয়েছে আয়রন। সেই সঙ্গেই ভিটামিন সি ব্যালান্স করতে লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম খান।