
দূষণে কলকাতাবাসীর গড় আয়ু কমছে ৬ বছর! প্রতি শ্বাসেই ঢুকছে বিষ, দাবি গবেষকদের
গুড হেলথ ডেস্ক
দূষণে নাজেহাল মহানগরী। দিল্লির মতো বায়ু দূষণ ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কলকাতায়। বায়ুদূষণের জেরে কলকাতাবাসীর প্রত্যাশিত আয়ু কমতে পারে প্রায় ছয় বছর। এমনটাই দাবি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের (একিউএলআই)।
সম্প্রতি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে। এই সভায় শহরের বহু চিকিৎসকও অংশ নেন। সেখানেই বায়ু দূষণের জেরে কলকাতাবাসীর গড় আয়ু প্রায় ছ’বছর কমে যাওয়ার তথ্য সামনে আনা হয়।
গবেষণার রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের দূষিততম দেশের তালিকায় ভারতের স্থান দু’নম্বরে। দিল্লি, মুম্বই, কলকাতার মতো শহরগুলি দূষণের নিরিখে প্রথম সারিতেই আছে। রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বায়ুদূষণের নিরিখে সপ্তম স্থানে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা বলছে, কলকাতায় বায়ু দূষণ সূচক স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১১.৬ গুণ বেশি।
গবেষকরা বলছেন, শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম ২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (পিএম)-গুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে। কিন্তু যদি পিএম কণাগুলির ব্যাস বেশি হয় তাহলে বায়ুমণ্ডলে মিশে যেতে সময় লাগে বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, গাড়ি, ট্রাক, অগ্নিকাণ্ড, ফসল পোড়ানো ও কারখানার চিমনি থেকে এই দূষণ-কণাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বিষ-বাস্প তৈরি করে। তার মানে প্রতি শ্বাসেই বিষ ঢুকছে শরীরে।
গ্লাসগোর একটি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ২০৭০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনবে ভারত। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিবেশ গবেষণা সংস্থাগুলির সমীক্ষা বলছে, বাতাসে দূষণ যে মাত্রায় বাড়ছে তাতে আগামী বছরের মধ্যেই কার্বন-ডাই অক্সাইডের মাত্রা ৪.৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। করোনা-পূর্ব কালে দূষণের যে ভয়ঙ্কর ছবি ফুটে উঠেছিল আবার সেই সময়ে ফিরে আসতে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিপোর্ট আগেই বলেছিল, দেশের বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) মাত্রা হু-র নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। বিশ্বের বায়ুদূষিত মহানগরীগুলির মধ্যে সেরার শিরোপা জিতেছে দিল্লি। তারপরেই রয়েছে মুম্বই, কলকাতা। এই সব শহরের বায়ু তাঁদের নির্ধারিত সহনমাত্রার থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি বিষাক্ত। এই বিষাক্ত বাতাস ফুসফুস ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে। হাঁপানি, ফুসফুসের সংক্রমণজনিত রোগ বাড়ছে। সিওপিডি-তে আরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে অকাল মৃত্যুর হারও বাড়ছে।