প্লাস্টিকের তিন কাপ চায়ে ৭৫,০০০ বিষ-কণা ঢোকে শরীরে, রক্তেও মিশছে রাসায়নিক

গুড হেলথ ডেস্ক

সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধ হয়ে দেশে। না হলে বিপদ আরও বাড়ত। প্লাস্টিকের কাপ, গ্লাস, থালা-বাটিতে যে আমরা রোজ খাবার খাচ্ছি, চা বা কফি খাচ্ছি, তাতে যে কত হাজার হাজার প্লাস্টিকের কণা (Microplastics) শরীরে ঢুকছে তার ইয়ত্তা নেই। প্লাস্টিকের কাপে গরম চা গলায় ঢালছি, প্লাস্টিকের কন্টেনারে গরম খাবার রাখছি, আর সেই সঙ্গেই প্লাস্টিকের কণা সটান পেটে ঢোকাচ্ছি। গবেষণা বলছে, এখন মানুষের রক্তেও পাওয়া গেছে প্লাস্টিক। কিছু মানুষের রক্তে মিলেছে পলিইথাইলিন, যা দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টিকের ছোট ক্যারি ব্যাগ। ব্যাপারটা খুবই চিন্তার।

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন, আমরা বছরে গড়ে ৬৮ হাজারের বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের (Microplastics) কণা শরীরে ঢোকাই। প্রতি দিন গড়ে তিন কাপ চা খেলে ৭৫,০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা চায়ের সঙ্গে শরীরে যায়। রক্তে এক বার মাইক্রোপ্লাস্টিক ঢুকে গেলে, তা বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছে যেতে দেরি হয় না। ডেকে আনতে পারে নানাবিধ রোগব্যাধি, যা হতে পারে প্রাণঘাতী। এমনকি প্য়াথোলজিক্যাল ল্যাবগুলির তথ্য বলছে, শিশুদের মলের থেকেও পাওয়া গেছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা, নানারকম পলিমার পার্টিকলস, যা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়।

Plastic Cup

শরীরে ঢুকছে প্লাস্টিক কণা, ঝুঁকি বাড়ছে ক্যানসারের

এই যে আমরা প্লাস্টিকের (Microplastics) কাপে গরম চা খাই, সেটা যে কতটা বিপজ্জনক তা জানা নেই অনেকেরই। তাছাড়া কাগজের কাপের বাইরেও থাকে অদৃশ্য় প্লাস্টিকের আস্তরণ যাকে বলে  ‘হাইড্রোফোবিক ফিল্ম’ এই আস্তরণ গরম চা-কফির ছোঁয়া পেলেই দুই মাইক্রোমিটার থেকে পাঁচ মিলিমিটার আকারের উপাদান বা মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় ভেঙে যায়, যা রক্তের সঙ্গে মেশে।

গরম জল বা চা কাপে ঢাললে মিনিট পনেরোর মধ্যে প্লাস্টিকের ওই স্তর গলতে শুরু করে। পলিইথিলিনের লেয়ার গলে গিয়ে ছোট ছোট উপাদানে ভেঙে যায়। এদের মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের এক একটা ভগ্নাংশের দৈর্ঘ্য পাঁচ মিলিমিটারের চেয়েও কম।

Microplastic Particles

গবেষণায় দেখা গেছে, এক একটি কাপের প্রায় ১০০ মিলিলিটার গরম তরলে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে ২৫ হাজার মাইক্রন (১০ থেকে ১০০০ মাইক্রোমিটার) সাইজের মাইক্রোপ্লাস্টিক (Microplastics) জমা হয়। তার মানেই বোঝা যাচ্ছে, দিনে যদি তিন কাপ চাও খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে প্রায় ৭৫ হাজার প্লাস্টিকের কণা ঢুকছে। দিনে পাঁচ-ছয় কাপ চা খাওয়ার অভ্যেস অনেকেরই থাকে বা আরও বেশি। তাহলে হিসেব করলেই বোঝা যাবে কী পরিমাণ প্লাস্টিকের কণা সারাদিনে শরীরে ঢুকছে এবং রক্তে মিশছে। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক আয়ন প্যালাডিয়াম, ক্রোমিয়াম, ক্যাডমিয়াম ইত্যাদি ভারী ধাতুর বাহক হিসেবে কাজ করে, এবং মুখ ও গলার ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

করোনা-ডেঙ্গির মধ্যে চুপিসাড়ে ছড়াচ্ছে জিকা, লক্ষণ ভাইরাল জ্বরের মতোই, সতর্ক করল আইসিএমআর

গবেষকরা বলছেন, প্লাস্টিকের এই উপাদানে থাকে টক্সিক পদার্থ বিসফেনল যা ক্যানসারের অন্যতম কারণ। বিশেষত মুখ ও গলার ক্যানসারের কারণ হতে পারে এই উপাদান (Microplastics)। এই বিষাক্ত পদার্থ শরীরে ঢুকলে অন্ত্র অবধি পৌঁছে যেতে পারে। অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা সহজেই রক্তে মিশে গিয়ে জমতে থাকে। কোষে কোষে পৌঁছে যায় এই টক্সিক উপাদান। নানা সংক্রমণজনিত রোগ, স্তন ক্যানসারেরও কারণ এই প্লাস্টিকজাত উপাদান। তাছাড়া অধিকমাত্রায় প্লাস্টিকের কণা শরীরে জমলে পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয়। মহিলাদের হরমোন ক্ষরণে বাধা তৈরি করে। বিশেষ ইস্ট্রোজেন হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে এই টক্সিক পদার্থ।