
বিরল ও বিপজ্জনক উপসর্গ শিশুদের, নতুন এই মারণ রোগের যোগ থাকার সম্ভাবনা করোনার সঙ্গে
বিশেষজ্ঞরা এই অসুখের নাম দিয়েছেন কাওয়াসাকি ডিজিজ শক সিনড্রোম।
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিরল এক প্রদাহজনিত রোগের শিকার হচ্ছে ব্রিটেন ও আমেরিকা শিশুরা। এই রোগের সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের যোগ আছে। এমনটাই নিশ্চিত করল সুইডেনের ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কনট্রোল’ (ইসিডিসি)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-ও এই বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
জানা গেছে, এই অসুখ কোনও কোনও শিশুর ক্ষেত্রে এতই বাড়াবাড়ি হচ্ছে যে তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেও রাখতে হয়েছে। ব্রিটেনে ইথিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০০ শিশু। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও শিশুদের মধ্যে একইধরনের উপসর্গ দেখা গেছে। দু’জন মারাও গেছে এই অসুখে। বিশেষজ্ঞরা এই অসুখের নাম দিয়েছেন কাওয়াসাকি ডিজিজ শক সিনড্রোম।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস আক্রমণের পরে একটু দেরি করে শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে সম্ভবত এই উপসর্গ দেখা গেছে। এটা খুবই বিরল একটি রোগ। শরীরে আকস্মিক একটা আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় এই উপসর্গ দেখা যায়।
কয়েক সপ্তাহ আগে একাধিক শিশু একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে লন্ডনের এভেলিনা লন্ডন চিলড্রেনস হসপিটালে ভর্তি হয়। সকলেরই খুব বেশি জ্বর, গায়ে ব়্যাশ, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, শরীর ফুলে যাওয়া, ঠোঁট শুকিয়ে রক্ত পড়া, এবং সারা শরীরে ব্যথার উপসর্গ ছিল। মূলত ৫ বছরের কম বয়সের শিশুরাই এই অসুখে ভুগছে। তবে তার বেশি বয়সিরাও রয়েছে। ১৬ বছর পর্যন্ত বয়সেরও কিছু কিশোর-কিশোরী ভুগছে এই অসুখে। বেশ কয়েক জনকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টও দিতে হয়েছে।
‘সংক্রমণের নতুন ধারা’ বলে এই বিরল রোগ উপসর্গকে ব্যাখ্যা করছেন চিকিৎসকরা। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজে শিশুদের মধ্যে সংক্রামক রোগ ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ক বিভাগের ডক্টর লিজ হুইটেকার জানিয়েছেন, এই করোনা মহামারীর মধ্যে শিশুদের এই নতুন উপসর্গ দেখা দেওয়ার কারণে মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাসের সঙ্গে এই রোগের যোগ রয়েছে।
ডক্টর হুইটেকার বলেন, “কোভিড ১৯ এখন সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছেছে এবং এর তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই নতুন সংক্রমণের প্রক্রিয়াও একটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সেই কারণেই আমরা মনে করছি এটা করোনা সংক্রমণ পরবর্তী নতুন উপসর্গ।” এর অর্থ হল করোনা সংক্রমণের পরেই শরীরে নতুন অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে এই নতুন ও বিরল রোগের জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসক-গবেষকরা আরও বলছেন, এই রোগের ধরন থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে যে কোনও ভাবে এই ভাইরাস শিশুদের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার জন্য একটা আকস্মিক আঘাত তৈরি করতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। শিশুদের মধ্যে একই ধরনের উপসর্গ দেখো গেছে আমেরিকা, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসেও।
আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র অর্থাৎ সিডিসি-ও এই ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছে। পরিসংখ্যান বলছে নিউইয়র্কে ইতিমধ্যেই এই নতুন উপসর্গে আক্রান্ত ৮২ জন শিশুকে পরীক্ষা করে ৫৩ জন হয় পজিটিভ এসেছে নয় তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। ব্রিটেনের শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন ধরনের শকের প্রতিক্রিয়া শুধু শিশুদের মধ্যেই সীমিত থাকতে পারে না কি প্রাপ্তবয়স্করাও এই বিরল রোগের শিকার হতে পারে তা এখন জানা দরকার।