নিউরোটেকনোলজিতে মানসিক রোগের চিকিৎসা, অবসাদ-উদ্বেগ কাটাবে ‘ব্রেন-মেশিন’

গুড হেলথ ডেস্ক

নিউরোসায়েন্স দিয়ে অনেক দুরারোগ্য জটিল রোগের চিকিৎসা করার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে মানসিক রোগের থেরাপিতে নিউরোটেকনোলজির (Neurotechnology) ব্যবহার করছেন গবেষকরা। নিউরোসায়েন্সের নানা দিক নিয়ে গবেষণা চলছে। কখনও ব্রেনে ছোট চিপ ফিট করে আবার কখনও মস্তিষ্কের তরঙ্গের গতিপ্রকৃতি জানার জন্য পোর্টেবল ইলেকট্রো-এনসেফ্যালোগ্রাফিক ডিভাইস (Portable electro-encephalographic (EEG) দিয়ে থেরাপি করা হচ্ছে।

আমেরিকার বিভিন্ন নিউরোটেকনোলজির সংস্থা মানুষের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিল রোগ নিয়ে গবেষণা করছে।  অবসাদ, উদ্বেগ, অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার থেকে স্লিপিং ডিসঅর্ডার—মস্তিষ্কের জটিল রোগ সারাতে নতুন রকম ‘ব্রেন-মেশিন’ তৈরি করা হচ্ছে। টুইটার কর্তা  ইলন মাস্কের সংস্থা নিউরোলিঙ্কও এমন ব্রেন-মেশিন তৈরি করে গবেষণা চালাচ্ছে। 

গবেষকরা বলছেন, নিউরোটেকনোলজিতে  এমন যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব যা কিনা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দেবে মানুষকে। মস্তিষ্কের ক্ষতও সারাবে। নিউরোটেকনোলজিতে এমন ডিভাইস তৈরি হচ্ছে যা যে কোনও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার সিন্ড্রোম থেকে ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরিও সারাতে পারবে। স্নায়ুর দুরারোগ্য রোগ থেকেও মুক্তি দেবে এমন ডিভাইস তৈরির চেষ্টা চলছে।

Mental Health Neuroscience

ব্রেনের কোথায় গন্ডগোল ধরতে পারবে ব্রেন-মেশিন 

সমীক্ষা বলছে,  বিশ্বজুড়ে ২ লক্ষের বেশি মানুষ মস্তিষ্কের রোগে ভোগেন। ‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেসন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ (ADAA) তাদের একটি গবেষণার রিপোর্টে বলেছিল, অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকেই ‘জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার’ (GAD) হয়। প্রতি বছর বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এই রোগে ভোগেন। এই ডিসঅর্ডার ছ’মাসের বেশিও স্থায়ী হয়। তখন তাকে ক্রনিক ডিসঅর্ডার বলে। তাছাড়া  ‘অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার’ (OCD) কমবয়সিদের একটা বড় সমস্যা (Neurotechnology) । সব কিছুতেই বাতিক তৈরি হয়। একটা আতঙ্ক বা ফোবিয়া কাজ করে। 

 Neuroscience

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বেগ থেকে ফোবিয়া বা আতঙ্ক তৈরি হয় মনে। যার থেকেই উৎকণ্ঠা বাড়ে। ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’-এ আক্রান্ত হয় রোগী। ওষুধে এই রোগ সারে না। দীর্ঘদিনের কাউন্সেলিং করাতে হবে। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো রোগ অনেক সময় কাউন্সেলিংয়েও পুরোপুরি নির্মূল হয় না। 

বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীর মানসিক স্থিতি ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে তার আঁচ পাওয়া মুশকিল। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকের ক্ষেত্রে মনের এই রোগ প্রচণ্ড আনন্দ বয়ে আনে। সৃজনশীল মানুষদের ক্ষেত্রে এমনটা হতে দেখা গেছে। অন্তর্মুখী, কম কথা বলা মানুষও মেলামেশা করছেন, বেশি কথা বলছেন, সৃজনশীন কাজ করছেন এমন উদাহরণও আছে।

এটা গেল একটা দিক। অন্যদিকটা হচ্ছে মারাত্মক। সেখানে মেজাজ শূন্য থেকে একশোর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কখনও ভাল তো কখনও একদম খারাপ। রোগীর মনে হতে থাকে সে অন্য একটা মানুষ। সম্পূর্ণ অন্য চরিত্র নিয়ে বাঁচছে। সেই মতো কাজ করতে শুরু করে। আচরণে বদল আসে। হাবভাব পাল্টে যায়। এমনও দেখা গেছে কথা বলার ধরণ, মতিগতি সবই বদলে গেছে রোগীর। যেন অন্য মানুষ হয়ে উঠেছে। একেই বলে দ্বৈত সত্তা।

 Neurologic Disorders

এই ধরনের রোগ অনেক সময়েই ধরতে পারা যায় না। সেক্ষেত্রে নিউরোটেকলোনজি কাজে আসতে পারে। মস্তিষ্কের তরঙ্গের গতিপ্রকৃতি দেখে বলে দেওয়া যেতে পারে গন্ডগোলটা ঠিক কী বা ব্রেনের কোথায় সব লন্ডভন্ড হয়ে আছে। রোগ ঠিকমতো চিহ্নিত করা গেলে তার থেরাপিও সেই মতোই করবেন ডাক্তারবাবুরা। 

আবার নিউরোটেকনোলজিতে (Neurotechnology)  এমন ডিভাইস তৈরি করা যায় যা ব্রেনে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব। এই ডিভাইস তৈরি হবে ছোট ইলেকট্রোড দিয়ে। তার মধ্যে এমন প্রোব থাকবে যা সহজেই মস্তিষ্কের কোষে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে। গবেষকদের দাবি, এই ডিভাইস মস্তিষ্কের ভেতরে কোনও ক্ষতি করবে না বা এর কোনও প্রতিক্রিয়াও দেখা যাবে না। মস্তিষ্কের কোষে প্রতিস্থাপন করলে এই যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলিকে সারাতে পারবে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। ব্রেন সার্জারির মতো ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের দরকার পড়বে না। পাশাপাশি, মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেও রোগীকে রেহাই দেবে। 

Neurotechnology

দ্বিধায় গবেষকদের একাংশ

তবে সবকিছুরই ভাল দিক ও খারাপ দিক আছে। গবেষকদের একাংশ মনে করছেন,  এমন যন্ত্র একবার মস্তিষ্কের কোষে প্রতিস্থাপন করলে সেটা আর বের করার উপায় থাকবে কিনা সেটা দেখতে হবে। রোগ সারার পরেও দীর্ঘসময় ব্রেনের ভেতরে থাকলে তার কোনও খারাপ প্রভাব পড়বে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়। তাছাড়া, এমন যন্ত্রে আগে থেকে প্রোগ্রামিং করে খারাপ কোনও বার্তা বা অনুভূতি মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের অনুভূতি ও তার ভাবনাচিন্তাকেও কন্ট্রোল করতে পারে এমন মেশিন। তখন ভালর থেকে খারাপটাই বেশি হবে।