
ফুসফুসের ক্যানসার সারাবে ‘রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি’! যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা
গুড হেলথ ডেস্ক
রোবোটিক টেকনোলজি আরও একবার সাফল্যের পথে। হার্ট, কিডনি, হাঁটু প্রতিস্থাপন সবেতেই দুর্দান্ত সাফল্য পাচ্ছে রোবোটিক সার্জারি। এবার ফুসফুসের ক্যানসার (Lung Cancer) নিরাময়েও রোবোটিক পদ্ধতির প্রয়োগ করতে চলেছেন গবেষকরা। আমেরিকার মেন লাইন হেলথের গবেষক-চিকিৎসকরা রিপোর্ট করেছেন, রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপিতে ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়ের আশা দেখা যাচ্ছে। প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার আগেই ফুসফুসের ক্যানসার কোষ চিহ্নিত করবে রোবোটিক টেকনোলজি, সেই ক্যানসার কোষ নির্মূলও করতে পারবে। এই গবেষণা সফল হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক তৈরি হবে।
ব্রঙ্কোস্কোপি এমন একটা পদ্ধতি যেখানে কাটাছেঁড়া না করেই ফুসফুস বা শ্বাসনালি থেকে টিউমার বের করছেন ডাক্তারবাবুরা। একটা সময়ে শ্বাসনালি থেকে টিউমার বের করতে গেলে বুকে অস্ত্রোপচার করে সেটা বের করতে হত। তাতে রোগীর ঝুঁকি বাড়ত। এখন ডাক্তারবাবুরা থেরাপিউটিক ব্রঙ্কোস্কোপি করেন। আর রোবোটিক টেকনোলজি (Robotic Technology) সাফল্য পাওয়ার পর থেকে যে কোনও সার্জারিতেই রোবোটিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা হচ্ছে। ব্রঙ্কোস্কোপিও তাই রোবোটিক পদ্ধতিতে করার চেষ্টা করছেন ডাক্তারবাবুরা। ইমেজিং গাইডেন্স ও ফুসফুসে মিনি টিউব ঢুকিয়ে টিউমার কোষ বের করে আনাই হবে রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপির আসল উদ্দেশ্য।
ব্রঙ্কোস্কোপি কী? কীভাবে রোবোটিক পদ্ধতিতে টিউমার সার্জারি করা হবে
ব্রঙ্কোস্কোপি হল এমন একটা পদ্ধতি যেখানে একটি সরু ও ধাতব নল সোজা শ্বাস নেওয়ার পথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই নলকে বলে ব্রঙ্কোস্কোপ। এই ব্রঙ্কোস্কোপ ঢুকিয়ে ডাক্তাররা গলা, ল্যারিংক্স বা স্বরনালী, ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালীর পরীক্ষা করে থাকেন। শ্বাসনালী কোনও ‘ফরেন পার্টিকল’ আটকে গেলে বা সংক্রমণ হলে, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করেন ডাক্তাররা। অনেক সময় বুকের এক্স-রে বা চেস্ট এক্স-রে তে সবটা ধরা পড়ে না। তখন ব্রঙ্কোস্কোপির সাহায্য নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে শ্বাসনালি বা ফুসফুসে ব্লকেজ থাকলে সেটাও ছাড়ানো যায়। আবার বায়োপসির জন্য কোষ বা মিউকাসের নমুনাও সংগ্রহ করা যায়।
মার্কিন গবেষকরা বলছেন, ব্রঙ্কোস্কোপির এই পদ্ধতিরই আধুনিক সংস্করণ হবে রোবোটিক ব্রঙ্কোস্কোপি। এক্ষেত্রে ইমেজিং গাইডেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এখন ইমেজিক টেকনোলজিতে এক্স রে , সিটি স্ক্যান, আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই ইত্যাদি পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়। সহজ করে বললে, সমস্যা ঠিক কোথায় সেই জায়গাটা চিহ্নিত করা জন্যই এই পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ করা হয়। রোবোটিক সার্জারির ক্ষেত্রে থ্রি-ডি প্রিন্ট বের করার চেষ্টা করবেন ডাক্তাররা। যেমন ক্যানসারের ক্ষেত্রে, টিউমার কোষ ঠিক কোন জায়গায় বাসা বেঁধেছে, সেটা কতটা জায়গাজুড়ে ছড়াচ্ছে, কত দ্রুত ক্যানসার কোষের বিভাজন হচ্ছে, এইসবই খুঁটিয়ে দেখতে পারবেন ডাক্তাররা। ক্যানসার ঠিক কোথায় রয়েছে তা ধরা পড়লে থেরাপিও সেইভাবে শুরু করা যাবে। থেরাপি সফল তখনই হবে, যখন রোগের চিহ্নিতকরণ বা ডায়াগনসিস সঠিকভাবে হবে। রোবোটিক পদ্ধতিতে ইমেজিং গাইডেন্সে সেটাই ভালভাবে হবে।
রোবোটিক সার্জারি কী? কতটা সফল?
রোবোটিক্সের ব্যবহার এখন বিশ্বজুড়েই। বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে চিকিৎসা, ডিজিটাল ভারতেও রমরম করে ঢুকে বাড়ছে রোবোটিক্সের ব্যবহার। যে কোনও জটিল অস্ত্রোপচারে রোবোটিক সার্জারির প্রয়োগ করার চেষ্টা করছেন ডাক্তাররা। রোগীর শরীরে ছুরি-কাঁচি চালিয়ে নয়, ছোট ছোট গোটা পাঁচেক ছিদ্র করে রোবটের হাত (যা মাত্র ১ সেন্টিমিটার চওড়া) এবং ছোট ক্যামেরা ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেই অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। রোবট হাতের কব্জি ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে, যা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই শরীরের যে কোনও দুর্গম এবং ছোট জায়গায় পৌঁছে গিয়ে জটিল অস্ত্রোপচার অথবা নিখুঁত ভাবে সেলাই করা রোবটের পক্ষে অনেক সহজ। শরীরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি না করে শুধুমাত্র আক্রান্ত স্থানেই নিখুঁত অস্ত্রোপচার সম্ভব একমাত্র রোবোটিক্সেই।
১৯৮৫ সালে নিউরোলজিক্যাল বায়োপসি করতে প্রথম রোবটের সাহায্য নেওয়া হয়। এর পরে ২০০০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ভিঞ্চি’ নামে একটি সংস্থা এই রোবট বাজারে আনার পরে চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যায়। এতদিন ভিন রাজ্য ও বাইরের দেশগুলিতেই দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল রোবোটিক্সের প্রয়োগ করছিলেন ডাক্তাররা।
স্ত্রী-রোগ সংক্রান্ত যে কোনও অস্ত্রোপচারই হোক কিংবা মাথা-গলা, কিডনি-লিভার-অগ্ন্যাশয়-থাইরয়েড-প্রস্টেট বা জরায়ুতে অস্ত্রোপচার, অঙ্গ প্রতিস্থাপন, সব ক্ষেত্রেই রোবট দিয়ে বা যান্ত্রিক হাতের সাহায্যে সার্জারি করানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকরা। সেখানে সাফল্যও আসছে। কলকাতার হাসপাতালেও এখনও রোবোটিক পদ্ধতিতে সার্জারি করা হচ্ছে। এবার ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়েও রোবোটিক্সের প্রয়োগ শুরু হতে চলেছে।