
সব থেকে সস্তার ভ্যাকসিন! দেশের তৈরি কর্বেভ্যাক্স টিকা কেমন, কত দাম জানুন
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের পরে দেশের তৈরি দ্বিতীয় টিকা কর্বেভ্যাক্স। এই টিকাও বানিয়েছে হায়দরাবাদের এক নামী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বায়োলজিক্যাল ই। দেশে এখনও অবধি দেশি ও বিদেশি মিলিয়ে যে কটি ভ্যাকসিন রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কম দাম কর্বেভ্যাক্সের। টিকার দুটি ডোজের দাম ৪০০ টাকারও কম, যেখানে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজের দাম ৬০০ টাকা আর ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ ৮০০ টাকা। তবে এই দাম সরকারি ক্ষেত্রে, বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য আরও বেশি।
কবে আসবে দেশের বাজারে?
দেশের নামী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে বায়োলজিক্যাল ই। ১৯৫৩ সালে হায়দরাবাদে তৈরি হয়েছিল এই বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। দেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি বায়োলজি ফার্মগুলির একটি। বিশ্বের বাজারে ভ্যাকসিন সরবরাহ করে দেশের এই সংস্থা। কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করা শুরু করেছে গত বছর মার্চ মাস থেকেই। এখন এই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে। খুব তাড়াতাড়ি সেফটি ট্রায়ালের পরীক্ষাতেও পাশ করে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই টিকার ৩০ কোটি ডোজের জন্য অগ্রিম দেড় হাজার কোটি টাকা সংস্থাকে দিয়ে রেখেছে। অগস্ট মাস থেকে কর্বেভ্যাক্স টিকার বিপুল উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে। সব ঠিক থাকলে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই চলে আসবে দেশের বাজারে।
কত দাম হবে কর্বেভ্যাক্স ভ্যাকসিনের?
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, বায়োলজিক্যাল ই-র তৈরি কর্বেভ্যাক্স এখনও অবধি দেশের সবচেয়ে সস্তার ভ্যাকসিন। প্রথমে বলা হয়েছিল এই টিকার দুটি ডোজের দাম পড়বে ৫০০ টাকার কাছাকাছি। তবে সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, কর্বেভ্যাক্স টিকার দুটি ডোজের দাম হবে ৪০০ টাকারও কম। যেখানে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজে দাম রাজ্য সরকারের জন্য ৬০০ টাকা, বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য ১২০০ টাকা। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের দুটি ডোজ সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য যথাক্রমে ৮০০ ও ২৪০০ টাকা। রুশ টিকা স্পুটনিক ভি দেওয়া শুরু হয়েছে দেশে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি থেকেই পাওয়া যাচ্ছে স্পুটনিক ভি। এই টিকার একটি ডোজের দাম জিএসটি মিলিয়ে ৯৯৫ টাকা।
কী ধরনের টিকা কর্বেভ্যাক্স?
ফাইজার ও মোডার্নার মতো করোনাভআইরাসের স্পাইক প্রোটিন নিয়েই টিকা বানিয়েছে বায়োলজিক্যাল ই, তবে মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিনের থেকে এর ফর্মুলা কিছুটা আলাদা। এটি মূলত রিকম্বিন্যান্ট প্রোটিন। ফাইজার ও মোডার্না আরএনএ টেকনোলজিতে টিকা বানিয়েছে। যেখানে ভাইরাল প্রোটিনের জিনগত তথ্য আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)-এর মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। মানুষের দেহকোষে ঢুকে যা ভাইরাল প্রোটিনের নকল করবে এবং ইমিউন কোষগুলিকে (বি-কোষ ও টি-লিম্ফোসাইট কোষ) সক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলবে।
কর্বেভ্যাক্স ভ্যাকসিনও তৈরি হয়েছে করোনার স্পাইক দিয়ে, তবে স্পাইক প্রোটিনের কিছু অংশ সরাসরি ব্যবহার করে টিকা বানানো হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাল স্পাইক নেওয়া হয়েছে মানে ভয়ের কারণ নেই। মানুষের শরীরে ঢুকে এই প্রোটিন প্রতিলিপি তৈরি করে সংক্রমণ ছড়াবে না। উল্টে শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলবে।
অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি হবে যাতে শরীরও এই ধরনের ভাইরাল প্রোটিনকে চিনে রাখতে পারবে ও তার প্রতিরোধে নিজের সুরক্ষা কবচ তৈরি করবে। ফরিদাবাদের ট্রান্সলেশনাল হেলথ সায়েন্স টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে এই ভ্যাকসিনের প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে। অর্থাৎ পশুদের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য এসেছে। এখন তৃতীয় পর্বের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে, এর ফল সন্তোষজনক হলেই দেশের বাজারে টিকা চলে আসবে।