ঘুসি মেরে করোনার ‘স্পাইক’ ফাটাচ্ছে রাইনো! কোভিডকে ‘ক্লিন বোল্ড’ করতে পারে সর্দি-কাশির ভাইরাস

দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভাইরাসে-ভাইরাসে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। করোনাভাইরাস বনাম সর্দি-কাশির ভাইরাস তথা রাইনোভাইরাস। কম যায় না কেউই। এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায় দেখের মতো ব্যাপার। পরিণতিটাও চমকের। একেবারে শেষে এসে করোনাকে দস্তুরমতো ‘ক্লিন বোল্ড’ করে দিচ্ছে রাইনো। সর্দি-কাশির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের যে এত ক্ষমতা, তা আগে জানা ছিল না বিজ্ঞানীদের।

রাইনোর কাছে হেরেই গেছে করোনা। ঘুসি মেরে করোনার নাক থুড়ি স্পাইক প্রোটিনের দফারফা করে দিয়েছে রাইনোভাইরাস। সংখ্যায় বাড়া তো দূর, একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে সার্স-কভ-২। ভাবাই যায় না!

গোটা বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডব করছে যে করোনা, সর্দি-কাশির কোল্ড ভাইরাসের কাছে কিন্তু একেবারে জব্দ। ব্রিটেনের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের এই নতুন গবেষণা তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সর্দি-কাশিকে বড়সড় রোগের তালিকায় ফেলা হয় না। সর্দি-কাশিতে ভোগেন না এমন মানুষ বিরল। শীত হোক বা বর্ষার সময়, ঠান্ডা লেগে জ্বর, ভাইরাল ফিভার হবেই। আবার সেরেও যাবে। তাই সর্দি-কাশির ভাইরাসকে মামুলি বলেই মনে করা হত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাসের মতো পাকা খেলোয়াড়ের মোকাবিলা করার শক্তি তার আছে। সর্দি-কাশির ভাইরাস শুধু নয়, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মধ্যেও এই ক্ষমতার পরিচয় পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

The Common Cold (Rhinovirus) - YouTube
কমন কোল্ড ভাইরাস বা রাইনোভাইরাস

ব্যাপারটা খুলে বলা যাক। কমন কোল্ড বা কোল্ড ভাইরাসের নাম রাইনোভাইরাস। মূলত মাক-মুখ দিয়ে ঢোকে, শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ছড়ায়। মানুষের শরীর এদের পছন্দের জায়গা। একবার দেহকোষে ঢুকলে সেখানে টিকে থাকার কৌশল শিখে নেয় এই ভাইরাস। তাই সর্দি-কাশি ধরলে তা সহজে কমতে চায় না। সেরে গেলেও ফিরে আসে। রাইনোদের তিনটি প্রজাতি আছে, প্রোটিনের রকমফেরে যাদের আবার ১৬০টি ধরন। করোনার থেকেও রাইনো গুষ্টির ধরন আরও বেশি। আকারে খুব ছোট, ব্যাস ৩০ ন্যানোমিটারের বেশি নয়।

File:Rhinovirus isosurface.png - Wikimedia Commons

এই ছোট্টখাট্টো ভাইরাসরা খুবই জাঁদরেল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরা একা থাকতে পছন্দ করে। যেখানে রাইনোভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায় সেখানে অন্য ভাইরাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কোনওভাবে যদি অন্য কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস ঢুকে পড়ে, তাহলে রাইনোরা জমিয়ে লড়াই করে তাদের তাড়িয়ে দেয়। ইনফ্লুয়েঞ্জার স্বভাবও একই রকম অনেকটা। কোল্ড ভাইরাসের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকেই করোনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই অবাক করার মতো ঘটনা ঘটে গেছে।

As Mysterious Coronavirus Spreads, An Infectious Disease Expert Explains What You Should Know | UC San Francisco
সার্স-কভ-২

গবেষকরা মানুষের মতোই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র তৈরি করে। এটাই হল যুদ্ধের ময়দান। এবার এই রেপ্লিকা রেসপিরেটারি ট্র্যাক্টে রাইনোভাইরাস ছেড়ে দেওয়া হয়। দেখা যায়, কিছুক্ষণের মধ্যে রাইনোরা কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের মিউকাসে তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছে। সংখ্যাতেও বেড়ে গেছে। এবার সেখানে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের স্ট্রেন ফেলে দেন বিজ্ঞানীরা। শুরু হয়ে যায় দক্ষযজ্ঞ। গবেষকরা বলছেন, করোনা যতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়ছে, ততক্ষণেই তাদের স্ট্রেনের দফারফা করে দিচ্ছে রাইনোভাইরাস। প্রথমে আঘাত করছে করোনার স্পাইক প্রোটিন।, এই প্রোটিনকে কাজে লাগিয়েই মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায় করোনাভাইরাস। তারপর ছিঁড়েখুঁড়ে দিচ্ছে তাদের কোষের পর্দা তথা মেমব্রেন। প্রতিলিপি তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটাই থামিয়ে দিচ্ছে সর্দি-কাশির ভাইরাস। সময়ও নিচ্ছে কম। শেষে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, যুদ্ধের ময়দানে আর করোনার নামগন্ধ নেই, পুরোটাই রাইনোভাইরাসে ভর্তি।

২৪ ঘণ্টা ধরে রাইনো বনাম করোনা যুদ্ধ থেকে বিজ্ঞানীরা ঝটপট সায়েন্স জার্নালে এই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছেন। বিজ্ঞানীমহলে বেশ হইচইও হচ্ছে। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, রাইনোভাইরাস সমবেতভাবে আক্রমণ করে করোনাকে হারিয়ে দিলেও, তাদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী নয়। কারণ সর্দি-কাশি একটা সময়ের পরে কমে যায়। ভাইরাল জ্বরও ওষুধে সেরে যায়। তারপর? রাইনোভাইরাসের ক্ষমতা যে মুহূর্তে কমবে, সে মুহূর্ত থেকেই করোনার দাপট আবার বেড়ে যাবে। তবে এই গবেষণার লাভের দিক হল, কীভাবে ভাইরাস দিয়েই ভাইরাস বধ করা যায়, সে উপায় খুঁজে বের করছেন বিজ্ঞানীরা। এই রাইনোকে দিয়েই যদি ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় বদল আনা যায়, বা অন্যভাবে করোনাভাইরাসের ট্রান্সমিশন থামিয়ে দেওয়া যায়, তার চেষ্টাই শুরু হয়েছে। আগামীদিনে এই গবেষণা করোনা-বধের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলেই আশা গবেষকদের।